ডিএনসিসি কমিউনিটি সেন্টার : অব্যবস্থাই যেন একমাত্র ব্যবস্থা

জাহিদ রাকিব প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২, ০৯:৫৭ পিএম

বিশ্বের বাস-অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকা অন্যতম। প্রয়োজনের তুলনায় এই শহরের জনসংখ্যা যওেমন অনেক বেশি, তেমনি নাগরিক সুযোগ-সুবিধার দিক থেকেও তলানিতে আছে। বিপুল এই জনসংখ্যার শহরে সাধারণ মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে কমিউনিটি সেন্টার। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৪টির মধ্যে ১০টি ব্যবহার উপযোগী কমিউনিটি সেন্টার আছে। তিনটি সেন্টার রাষ্ট্রীয় সংস্থার কাছে বাৎসরিক চুক্তির ভিত্তিতে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। আর ১টি সংস্কারের কারণে বন্ধ রয়েছে।

ডিএনসিসি এলাকার ১৪টি কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবস্থাপনা ও কমিউনিটি সেন্টার থেকে নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তি নিয়ে ৫টি কমিউনিটি সেন্টার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিনটি কমিউনিটি সেন্টার সরকারি𒁃 সংস্থার কাছে দীর্ঘদিন ভাড়ায় আছে। একটি পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা থাকায় ভালোভাবে কার্যক্রম চলছে। বাকি দুইটিতে চলছে নামেমাত্র কার্যক্রম। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য যে ধরনের নাগরিক সুবিধা থাকার কথা, সে ধরনের সুবিধা না থাকায় অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এইসব প্রতিষ্ঠান থেকে। আবার বেশ কয়েকটি কমিউনিটি সেন্টার আছে, যেখানে পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা আছে। স্থানীয়রা সকল ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান পালন করে থাকে ওই সেন্টারগুলোতে।

মহাখালী কমিউনিটি সেন্টার
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশ🌟নের ২০ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত ৩০০ আসনের সুবিশাল এক কমিউনিটি সেন্টার মহাখালী কমিউনিটি সেন্টার। সরজমিনে দেখা যায়, যেখানে স্থানীয় মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধার অভাবে কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। কমিউনিটি সেন্টারটিতে টয়লেট বা হাত ধোয়ার বেসিনটি পর্যন্ত ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে আছে অনেক দিন ধরে। এছাড়া হাত ধোয়ার বেসিন থাকলেও একটিতেও পানির লাইন নেই। কমিউনিটি সেন্টারের সামনের জায়গা গাড়ি মেরামতের জন্য ব্যবহার করছে আব্দুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। তিনি গাড়ি মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে ওঠার সিঁড়ি দখল করে আছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে আব্দুর রহমান সেন্টারের সিঁড়ি ও সামনের জায়গা দখল করে নিজের🅷 ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

এলাকাবাস🍷ী আরো অভিযোগ করেন, কমিউনিটি সেন্টারের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে সেটাও দখল করে আছে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। ফলে হল ভাড়া𓆏 নিয়ে কোনো অনুষ্ঠান করা গেলেও আমন্ত্রিত অতিথিরা পার্কিং সুবিধা নিতে পারছে না।

মহাখালী কমিউনিটি সেন্টারের অবকাঠামোর অবস্থা বেশ নাজুক জানিয়ে কাউন্সিলর মো. নাছির সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “কমিউনিটি সেন্টারের আধুনিকায়নের বিষয়ে আমি মেয়রকে অন্তত ২০ বার বলেছি।” 
আন্ডারগ্রাউন্ডে পার্কিংয়ে সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল রাখার কথাও স্বীকার করেছেন এই কাউন্সিলর। তবে সিঁড়িতে দোকানের বিষয়টি জানা নেই বলে ✃দাবি করেন তিনি। তবে দ্রুত এই বিষয়ে ব্♛যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এই কাউন্সিলর।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান কমপ্লেক্স
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৬ নং ওয়ার্ডের সুবিশাল আধুনিক শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কমিউনিটি সেন্টার। এর আসন সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। সেন্টারটি দীর্ঘদিন হাতিরঝিল থানা হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। থানা স্থানান্তর হওয়ার পরে ২০১৮ সালে উদ্বোধন করা হলেও, ভাড়া নির্ধারণ না করায় অনেক দিন কমিউনিটি সেন্টারটি নাগরিকেরা ব্যবহার করতে পারেনি। চলতি বছর আগ꧅স্ট মাসে ভাড়া নির্ধারণ করে ডিএনসিসি। এখানে নিম্নবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষের চাহিদা অনুযায়ী আলাদা ব্যবস্থা আছে। কমিটিউনিটি সেন্টারটি আধুনিক ব্যবস্থা থাকলেও বাইরে অতিথিদের জন্য গাড়ি পার্কিং করার জায়গা ব্যবহার হচ্ছে গাড়ির গ্যারেজ হিসেবে। এর ফলে বিয়ে বা কোনো অনুষ্ঠান পালনের সময় অতিথিদের গাড়ি রাখতে বিড়ম্বনা দেখা দেয়। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৈমুর রেজা খোকন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ভাড়া নির্ধারণ করার পর মাত্র একটা অনুষ্ঠান হয়েছে। কমিউনিটি সেন্টারটির প্রচার-প্রচারণা না থাকায় মানুষ এখনো তেমন জানে না। ফলে ভাড়া একটু কম হচ্ছে। আশা করি, অল্প কয়েক দিনের মধ্যে সাধারণ মানুষ এটি ব্যবহার শুরু করবে।”

রায়ের বাজার কমিউনিটি সেন্টার
ডিএনসিসি এলাকার ৩৪ নং ওয়ার্ডের একমাত্র কমিউনিটি সেন্টার রায়ের বাজার কমিউনিটি সেন্টার। ৩০০ আসনের এই কমিউনিটি সে🍌ন্টার বন্ধ আছে দীর্ঘদিন ধরে। সংস্কারের নামে হঠাৎ করে কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছে এই সেন্টারটি। ফলে অনেক নিম্নবিত্ত পরিবারকে বাধ্য হয়ে তাদের সামাজিক অনুষ্ঠান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে করতে হচ্ছে।

উত্তরা কমিউনিটি সেন্টার
ডিএনসিসি এলাকার ১ নং ওয়ার্ডের আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার উত্তরা কমিউনিটি সেন্টার। ডিএনসিসি ১৪টি সেন্টার থেকে ব্যতিক্রম এই কমিউনিটি সেন্টার। অন্য সেন্টার থেকে যা আয় হয়, তার থেকে কয়েকগ🎐ুণ বেশি আয় হয় উত্তরা কমিউনিটি সেন্টার থেকে। নাগরিক সব সুবিধা থাকায় এখানকার স্থানীয়রা সকল ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান সেখানে পালন করে।

হাত ধোয়ার বেসিনে পানির লাইন নেই

 

এদিকে ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, তিনটি কমিউনিটি সেন্টার চুক্তি ভিত্তিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া থাকায় উক্ত এল𝔍াকার সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে সেগুলো সরকারি কাজে ব্যবহার হওয়ায় এলাকার নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো বেশি টাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এলাকার শিশু-কিশোর ও যুবকরা কোনো সাংস্কৃতি আয়োজন করতে পারছে না। তাদের দাবি, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত ওই কমিউনিটি সেন্টারগুলো সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিয়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করুক।  

কমিউনিটি সেন্টারের বর্তমান চালচিত্র নিয়ে কথা হয় নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের সঙ্গে। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “একসময় টাউন হলে সামাজিক সাংস্কৃতি কর্মকাণ্ড হতো। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমিউনিটি সেন্টার হয়েছে। লাইব্রেরি, জিমনেশিয়ামও টাউন হলের অংশ ছিল। এগুলোতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও, তা আর হয় না। যে উদ্দেশে কমিউনিটি সেন্টার করা হয়েছিল, সেটা হয় ন💧া। রাজনৈতিকভাবেও দখল হয়ে গেছে কমিউনিটি সেন্টারগুলো।

মোবাশ্বের হোসেন আরও বলেন, “আমি মনে করি একটি শহরকে বাঁচানোর সবচেয়ে বড় উপাদান হচ্ছে পাড়া-মহল্লায় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বলয় তৈরি করা। ওয়ার্ডভিত্তিক নিজস্ব একটি গণপরিসর তৈরি করা 𓆏উচিত। সেখানে মানুষ যেকোনো অনুষ্ঠান, প্রতিবাদ, আন্দোলন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, যা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয় কেবল সেবামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারবে। সামাজিক কর্মকাণ্ড যদি না করা যায়, তাহলে কমিউনিটিতে কমিউনিটি সেন্টারের প্রয়োজন ন🏅েই।”  

১৪টি কমিউনিটির সেন্টারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম রেজা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “কয়েকটি কমিউনিটি সেন্টার ঠিকঠাক করে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এগুলোর সুফল এখন জনগণ ভোগ করছে। তিনটি কমিউনিটি সেন্টারে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার অফিস রয়েছে, বিকল্প ব্যবস্থা হলে তারা চলে যাবে। তখন নাগরিকেরা ওই কমিউনিটি সেন্টারগুলোর সুফল ভোগ 🔯করতে পারবে। বর্তমানে আমরা ক♏মিউনিটি সেন্টারগুলোর আধুনিকায়নে আমরা কাজ করছি।”