ফোন নম্বর মুখস্থ থাকাই তোফাজ্জলের কাল

সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪, ০৩:৩৭ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে যখন তোফাজ্জল হোসেনকে মার🎃ধর করা হচ্ছিল, তখন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য তিনি স্বজনদের নম্বর দিয়েছিলেন। খবর পেꦏয়ে তোফাজ্জলের মামাতো বোন আসমা আক্তার তানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো এক ছাত্রের নম্বরে ফোন করে তাকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করে বলেন, ‘ও পাগল’। 

তানিয়া বলেন, “ও যখন আমার আব্বার নম্বর, ওর ভাবির নম্বর, চাচাতো ভাইদের নম্বর দিছে, তখন ওরে আরও বেশি মারছে। ওরা আবার বলছে, একটা পা🌳গলের এত নম্বর মুখস্থ থাকে ক্যামনে?” তার অভিযোগ, এরপর তাকে আরও বেশি করে মারধর করা হয়।

মামাতো ভাই বাঁচাতে ফোনে ছাত্রদেরকে আকুতি-মিনতিꦯ করেন তানিয়া। জানান তার মানসিক ভারসাম্যহীনতার কথা, কিন্তু কেউ কথা শোনেনি,𒉰 বরং তোফাজ্জলের ফোন নম্বর মুখস্থ থাকার কথা বারবার বলতে থাকে তারা।

তোফাজ্জলের স্বজনেরা বৃহস্পত🐓িবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এসেছিলে মরদেহ নিতে। তারা বলছেন, হলের ছাত্ররা তোফাজ্জলের কাছ থেকে নম্বর নিয়ে তাদের ফোন করে তার মুক্তির জন্য টাকা চেয়েছিল। আর তার কেন এত নম্বর মুখস্থ, সে জন্য আরও মারধর করে।

মধ্যরাতে যখন তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয় ততক্ষণে তার মৃত্যু ♔হয়েছ💜ে। তার শরীরে ছিল মারধরের অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নিহতের 🍸লাশ ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান কা𓆉জী গোলাম মোকলেসুর রহমান বলেন, নিহতের সারা শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

জীবনের করুণ কাহিনি

তোফাজ্জলের জীবনের কাহিনি বেশ করুণ। মর্গে আসা মামাত বোন আসমা আক্তার তানিয়া জানান, দুই ভাই আর♑ বাবা-মা মিলে ছিল তোফাজ্জলদের সুখী পরিবার। আট বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় তোফাজ্জলের বাবা মারা𒊎 যান। পাঁচ বছর আগে মারা যান তার মা।

তানিয়া বলেন, “ওর মা মারা যাওয়ার পর থেকে ওর আচরণে সমস্যা দেখা দেয়।ꦉ তখন তার বড় ভাই পুলিশের এসআই নাসির হোসেন তোফাজ্জলকে দেখেশুনে রাখতেন, মানসিক রোগের চিকিৎসা করাতেন। সেই ভাইও গত বছর রোজায় ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর থেকেই ওকে দেখার আর কেউ নাই। ও পথে পথে একেবারে উন্মাদ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।”

তানিয়া জানান, তারা তোফাজ্জলকে মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাকে ধরে বেঁধে কোথাও নেওয়া যায় না বলে সে উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। সবশেষ তাকে যেদিন পাবনার♏ মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়ার কথা ছিল, সেদিন সকালে শিকল ভে𝔉ঙে পালিয়ে যান তিনি। এরপর ঢাকায় তিনি এখানে ওখানে থাকতেন, ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন।

তানিয়া বলেন, “৫ তারিখ (৫ আগস্ট) রাজু ভাস্কর্যের সামনে যখন টেলিভিশনগুলো লাইভ চলছিল তখন যে বারবার সামনে꧅ আসছিল🍬। সে সাক্ষাৎকার দিতে চায়। ওর সেই ভিডিও আমরা দেখছি।”

তোফাজ্জলদের বᩚᩚᩚᩚ⭕ᩚᩚ⁤⁤⁤⁤ᩚ⁤⁤⁤⁤ᩚ⁤⁤⁤⁤ᩚ𒀱ᩚᩚᩚাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলি ইউনিয়নে। বরিশাল বিএম কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে মাস্টার্স করলেও মানসিক সমস্যার কারণে কোনো কাজকর্ম করছিলেন না।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেই ঘ꧒ুরে বেড়াতেন। বুধবার রাতে কোনো এ🌌ক পর্যায়ে চলে যান ফজলুল হক হলে। মোবাইল ফোন চুরির কারণে সেই হলের বেশ কয়েকজন ছাত্র ছিল উত্তেজিত। তাকে দেখে জেরা করতে থাকে।

একপর্যায়ে তাকে হলের ক্যান্টিনে খাওয়ানো হয়। পরে দল বেঁধে পেটানো হয় ক্রিকেট൲ স্ট্যাম্প দিয়ে। সঙ্গে চলতে থাকে কিল ঘুষি। পিটুনির একাধিক ভিডিও সামাজিক ⛎মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, এ নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

ব♍িশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন ছয়জন। তাদের একজনকে বুয়েট ক্যাম্পাস থেকে ধরে পুলিশে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই। সে সময় সেই ছাত্র বলছিলেন, তিনি আবেগের বসে মেরেছেন।

ফোনে স্বজনদের সঙ্গে কথা

তোফাজ্জলকে আটকের পর তার কাছ থেকে নম্বর নিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগও করে পিটুনি দেওয়া ছাত্ররা। রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নিহতের মামাত বোন তানিয়া বলেন, “বুধবার রাত ১১টার দিকে আমার বাবাকে ফোন দিয়ে বলছে আপনি কী তোফাজ্জলের মামা? তখন আমার আব্বা বলছে, ‘হ্যাঁ’। তখন তারা বলছে ‘ওকে আমরা হলে আটকাইছি। ও মোবাইল চুরি করছে। ছাড়াতে হ🍰লে ৩৫ হাজার টাকা দেওয়া লাগবে। টাকা দিয়ে ছাড়ায় নেন, না হলে আমরা আরও মারব।’ তখন আব্বা বলছে, ‘আমি তো গ্রামে থাকি, ক্যামনে কী করব?’।”

তান༺িয়া জানান, এরপর তার বাবা তাকে ফোন করে তোফাজ্জলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে চোর সন্দেহে আটক করার খবর দেন। খবর পেয়ে বাবার কাছ থেকে হলের ছাত্রদের নম্বর নিয়ে ফোন করেন তিনি।

তানিয়া বলেন, “আমি ফোন দিয়ে বললাম আমি তোফাজ্জলের মামাত বোন, ও কী করছে? তখন তারা বলল, ‘ও হলে ঢুকছে, কথাবার্তার ঠিক নাই।’ আম⭕ি বললাম, ‘ও পাগল মানুষ, ও যদি কোনো অন্যায় করে তাহলে ওরে প্রশাসনের কাছে দেন, মাইরেন না।’

তখন আমারে বলে, ‘ও যে পাগল ওর আচরণে তো তা বলে না। একটা পাগলের মামার নম্বর কীভাবে মুখস্থ থাকে, ওর চাচাত ভাইদের নম্বর কীভ🍸াবে মুখস্থ থাকে। তাহলে সে♔ কীভাবে পাগল হয়?’।”

ফোন নম্বর মুখস্থ থাকাই কাল

তানিয়া বলেন, “ও যখন আমার আব্বার নম্বর, ওর ভাবির নম্বর, চাচাত ভাইদের নম্বর দিছে, তখন ওর꧂ে আরও বেশি মারছে। ওরা আবার বলছে, ‘একটা পাগলের এত নম্বর মুখস্থ থাকে ক্যামনে?

“পাগলে ক্✅যামনে এত নম্বর মনে রাখে কইয়া আরও মারছে,- বারবার একই কথা বলছিলেন তানিয়া।

“কিন্তু সব পাগল তো এক রকম না। সব পাগলের আচরণ 🌞তো একই রকম না”, তার কণ্ঠে ভাইয়ের জন্য আব✃েদ ঝরে পড়ে।

তখন তানিয়া ফোনে ভাইকে বাঁচাতে কাকুতি মিনতি করতে থাকᩚᩚᩚᩚᩚᩚ⁤⁤⁤⁤ᩚ⁤⁤⁤⁤ᩚ⁤⁤⁤⁤ᩚ𒀱ᩚᩚᩚেন। কিন্তু কারও মন গলেনি।

“আমি তাদের বলছি, আপনারা যারে ধরছেন ও কোনো অপরাধী না, ও পাগল, হয়ত খিদা লাগলে কারও খাবারের দিকে হাত বাড়াইতে পাড়ে অথবা টাকা চাইতে পারে, এর বেশি কিছু ও করে না। ও পাগলামি কইরা কাউরে মারধর করে না, কারও ক্ষতিও করে না। কি❀ন্তু তারা শোনে নাই।

“এমনভাবে কোনꦉো মানুষ একটা মানুষরে মারতে পারে না। আমরা এর বিচার চাই।”

ছয়জন গ্রেপ্তার

তোফাজ্জলকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা করেছে। রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই মামলা পুলিশ ছয়জন শিক্ষার্থীকে গ্রে🎶প্তার করেছে।

তোফাজ্জলকে হত্যাꦰর ঘটনায় এখন পর্যন🍃্ত ছয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের চারজন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের জালাল আহমেদ, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের মোহাম্মদ সুমন, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মোত্তাকিন সাকিন, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের আল হোসেন সাজ্জাদ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহবাগ থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ মামল꧒াটি করেন বলে🐼 জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।

তোফাজ্জলকে মারধর করার অভিযোগে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের জালাল আহমেদ, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভ﷽াগের মোহাম্মদ সুমন, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মোত্তাকিন সাকিন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের আল হোস꧒েন সাজ্জাদ, গণিত বিভাগের আহসান উল্লাহ এবং ওয়াজিবুল আলম নামে ছয় জনকে থানায় দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তাদেরকে হেফাজতে নেওয়ার বিষয়টি নি﷽শ্চিত করেছেন শাহবাগ থানার এসআই আল আমীন।

সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম