ঈদযাত্রায় ভোগান্তি

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ

আবদুল্লাহ আল মামুন প্রকাশিত: এপ্রিল ২৩, ২০২২, ০১:০৮ পিএম

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে শনিবার (২৩ এপ্র♛িল) সকালে। কাঙ্ক্ষিত টিকিট পেতে রাত থেকেই অনেকে কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কমলাপুর স্টেশনে কেউ এসেছেন গভীর রাতে, কেউ আবার সাহরির পর এ🌠সে যুক্ত হয়েছেন। ভোরের আলো ফোটার পর থেকে এই লাইন আরও দীর্ঘ হচ্ছে। কাউন্টারের পাশাপাশি রেলওয়ে অনলাইনেও ৫০ শতাংশ টিকিট রাখা হয়েছে। তাই লাইনে দাঁড়িয়েও অনলাইনে টিকিট কাটতে ঢুঁ মারছেন অনেকে।

এদিকে অনলাইনে ই-টিকিট কেনার জন্য ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারছেন না, এমন অভিযোগও করছেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। স্টেশনে ♛সার্বিক পরিস্থিতি ভালো রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন।

শনিবার (২৩ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত কমলাপুর রেলস্টেশনের সর্বশেষ চিত্রটি ছিল এমনই। এ সময় স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকাꦬ অনেকের হাতে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে রেলওয়ের ই-টি🐷কিট ওয়েবসাইট ব্রাউজ করতে দেখা যায়।

ঠাকুরগাঁও থেকে আসা 💝মো. সাইফুদ্দিন নামের একজন বলেন, “অনলাইনে অনেক চেষ্টা করেও টিকিটের ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারিনি। যার কারণে বাধ্য হয়ে রেলস্টেশনে আসতে হয়েছে। এখানেও সাহরির পর থেকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কখন পাব টিকিট জানি না।”

রাজশাহীগামী ধূমকেতু ট্রেনের টিকিট কাউন্টারের লাইনের সিরিয়ালে ৮৫ জনের পেছনে অপেক্ষা করဣছিলেন আরিফুল তরফদার। তিনি বলেন, “সাহেরির পরেই এসে লাইনে দাঁড়িয়েছ🧔ি। যেহেতু পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজশাহী যাব, তাই আমার এসি টিকিট প্রয়োজন। যতজনের পেছনে আমার সিরিয়াল, সে অনুযায়ী এসি টিকিট পাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই ৮টার পর থেকেই লাইনে দাঁড়ানো অবস্থাতেই অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করছি মোবাইলে।”

রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের লাইনে দাঁড়ানো বাহার হোসেনও মোবাইলে চেষ্টা করে যাচ্ছেন অনলাইনে টিকিট কাটার। তিনি বলেন, “লাইনে দাঁড়ালেও এসি টিকিট পাওয়ার আশায় অনলাইনে  চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে সার্ভার ডাউনের কারণে ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারছি না। যদি কোনোভাবে অনলাইনেꦇ টিকিট প🌌েয়ে যাই, তখন টিকিটের লাইন ছেড়ে চলে যাব। বেশির ভাগ লোকই লাইনে দাঁড়ানোর পরও ভালো টিকিটের প্রত্যাশায় অনলাইনে চেষ্টা করছেন। সবার হাতে মোবাইল, সবাই চেষ্টা করছেন।”

এদিকে কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, “যাত্রীরা যারাই আসছেন টিকিট থাকার পরিপ্রেক্ষিতে স💎বাইকে দেওয়া হবে।”

অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অনলাইনে চেষ্টা করেও🤪 সার🅠্ভারে ঢুকতে পারছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে সহজ ডটকম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে।”

ঈদ আসলেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদ করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরে মানুষ, যে কারণে প্রতিবছর ঈদের টিকিটপ্রত্যাশীদের এমন ভোগান্তি পোহানোর চিত্র দেখা যায়। যদিও গত দুই বছর করোনার কারণে ঈদের টিকিট এভাবে বিক্রি হয়নি কমলাপুর স্টেশন থেকে। দুই বছর পর ঈদের অগ্রিম টি♔কিট সংগ্রহের লক্ষ্যে স্বরূপে ফিরেছে চিরচেনা এই কমলাপুর। অনেকেই দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর কাঙ্ক্ষিত  টিকিট পেয়েছেন। আবার কেউ বলছেন, “আদৌ পাবেন কি না, ঠিকভাবে বলতে পারছেন না।”

কমলাপুরের কাউন্টারগুলোর পশ্চিম দিকের শেষের কাউন্টারটি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে নারীদের জন্য। সেই কাউন্টারে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট পেয়ে আফসানা বেগম জানান, সাহরি খেয়ে টিকিটের লাইনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত টিকিট পেয়ে তিনি অনেক খুশি। তিনি বলেন, “রংপুর অনেক দূরের জেলা, সড়কপথে যেতে দীর্ঘ সময় লাগে। এছাড়া ঈদের সময় সড়কে থাকে তীব্র যানজট।🙈 তাই সব কষ্ট, ভোগান্তি ভুলে ঈদের ট্রেনের টিকিটের জন্য সাহরি খেয়েই ল♎াইনে দাঁড়িয়েছিলাম। এখন স্বামী এবং সন্তানসহ আমরা গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যেতে পারব।”

রাজশাহী যাওয়ার জন্য টিকিট পেয়েছেন ইয়াফেস আলী। তিনি বলেন, "কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট পেয়▨েছি। এক টিকিটে ৪ সিট ১১৩০ টাকা নিয়েছে। স্ত্রী এবং পরিবার যাবে ২৭ এপ্রিল আর আমি আগামীকাল (রোববার) এসে আবার ২৮ এপ্রিলের টিকিট কাটব। কারণ আমি পরের দিন ꦏযাব।”

ঠাকুরগাঁওগামী হিমেল টিকিট পেয়ে বলেন, “ভোর ৫টা থেকে দাঁড়ানোর পর টিকিট পেয়েছি। এক টিকিটে ৪ সিট🍸 ২১০০ টাকা নিয়েছে। পরিবারের ৪ জন সদস্য এবার যেতে পারব ট্রেনে করে গ্🧔রামের বাড়ি।”

অগ্রিম টিকিট বিক্রির বিষয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, “অগ্রিম টিকিট বিক্রির সব প্রস্তুতি আমরা শেষ করেছি। কাউন্টারের পাশাপাশি অনলাইনে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্🔥রি হবে। সকাল ৮টা থেকে শুরু করে যতক্ষণ টিকিট থাকবে যাত্রীরা টিকিট পাবেন। আমরা সার্বিক চেষ্টা করছি যাত্রীরা যেন নির্বিঘ্নে টিকিট পেতে পারেন।”

এদিকে অগ্রিম টিকিট কিনতে কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীর চাপ কমাতে রাজধানীর পাঁচটি কেন্দ্র থেকে নির্দিষ্ট রুটের টিকিট বিক্রি করা হবে। এগুলোর মধ্যে কমলাপুর থেকে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী ও খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেনের টিকিট, বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট তেজগাঁও থেকে ময়মনসিংহ, জাম🎃ালপুরগামী ও দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জগামী মোহন ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট এবং ফুলবাড়িয়া (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন) থে🌃কে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হবে।

ঈদ যাত্রার বিশেষ ট্রেনগুলোর মধ্যে চাঁদপুর স্পেশাল ১ ও ২ ট্রেন চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে ঈদের আগে ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে এবং ঈদের পর ৪ মে থেকে ৮ মে পর্যন্ত চলবে। আর দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল ট্রেন ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে এবং ঈদের পর ৪ মে থেকে ৮ মে পর্যন্ত চলবে। খুলনা স্পেশাল (মৈত্রী রেক দিয়ে) ♏খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটে ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত চলবে। শোলাকিয়া স্পেশাল-১ ট্রেন ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরববাজার রুটে এবং শোলাকিয়া স্পেশাল-২ ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে শুধু ঈদের দিন চলবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম দিন ২৭ এপ্রিলের টিকিট দেওয়া 🅰হচ্ছে। একইভাবে ২৮ এপ্রিলের টিকিট পাওয়া যাবে ২৪ এপ্রিল (রোববার), ২৯ এপ্রিলের টিকিট ২৫ এ🐲প্রিল (সোমবার), ৩০ এপ্রিলের টিকিট ২৬ এপ্রিল (মঙ্গলবার) এবং ১ মের টিকিট ২৭ এপ্রিল (বুধবার) বিক্রি করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

এবার ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ এই স্লোগান বাস্তবায়নে যাত্রীদের এনআইডি-জন্ম সনদ ফটোকপি কাউন্টারে প্রদর্শ🌱ন করে টিকিট ক্রয় করতে হবে। এনআইডি ছাড়া অন্য কোনো পরিচয়পত্র দিয়ে ট্রেনের টিকিট কাটা যাবে না।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২৫ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত কোনো আন্তঃনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে না এবং ঈদের পরে যথারীতি তা কার্যকর কܫরা হবে। ঈদুল ফিতরের দিন কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চলবে না। সাপ্তাহিক বন্ধ বাতিলের ফলে অতিরিক্ত ৯২টি আন্তঃনগর ট্রেন বিশেষ ট্রিপে পরিচালিত হবে।