আমিন সাহেব, বাজার হাতে বাড়ি যাচ্ছেন। পথেই দেখা পেলেন ছোটবেলার খেলার সঙ্গী রহমানের সঙ্গে। একে অন্যকে দেখেই জড়িয়ে ধরে আনন্দে আত্মহারা। চুলে পাক ধরেছে খানিকট🍎া, তবে বন্ধুর প্রতি অনুভূতিটা যেন এখনও তরতাজা। গল্প করবে ব♏লে পাশেই একটি চায়ের দোকানে বসে গেলেন দুজনে। এরপর কথা ঝুলি খুলে মেতে উঠলেন আড্ডায়।
‘ঈদে কোথায় থাকবি?’ রহমানের প্রশ্নের জবাবে আমিন সাহেব বললেন, ‘শহরেই থাকি এখন। আর ঈদ! সেই ছোটবেলার ঈদের কথা মনে পড়লে এখনও আনন্দ হয়, কষ্টও হয়। সেই দিনগুলো এখন নেই। সব সময়ের সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে।“ কথার মাঝেই নিজেদের ঈদের স্মৃতিচারণ করে রহমান বললেন, ‘মনে আছে, একসঙ্গে নামাজে যাওয়া হতো। ভোর তুই পাঞ্জাবি পড়ে আমার বাসায় হাজির। মায়ের হাতের পায়েস খেয়েই দুজন রওনা করেছি মসজিদে। নামাজ শেষ করে আবারও সবার বাসায় ছুটতাম। সালামি পাব বলে, অপেক্ষা করতাম। সালামি নিয়েই দৌড়। এরপর সেই সালামি জমিয়ে কোথায় কোথায়𝓰 ঘুরে বেড়াতাম।‘
ছোটবেলার ঈদ স্মৃতি মনে করে দুজনই হেসে আত্মহারা। সেই কথার মাঝেই দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে আমিন সাহেব বললেন, ‘এ🦩ই তো জীবন। সময় পাল্টে গেছে, আনন্দও পাল্টে গেছে। আমাদের ঈদ এখন চারদেয়ালেই বন্দি।🧜 নাতি-নাতনিরা মজা করে। কিন্তু তারাও আমাদের মতো সেই আনন্দটা পায়নি।‘
‘একদম ঠিক। রূপকথার গল্পের মতো লཧাগে এখন। নাতিদের সেই গল্প শোনালে তারাও অবাক হয়। আর বলে, সেকেলের ঈদে এতো আনন্দ হতো!’ মুচকি হেসে বললেন রহমান।
চায়ের কাপে শে♈ষ চুমুক দিয়েই উঠে গেলেন দুজন। এরপর বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করলেন। বাড়ি ফিরেই বাজার রেখে সোজা নিজের ঘরে গিয়ে চেয়ারে বসে পড়লেন। কী যেন একটা ভাবনা, অনুভূতি নাড়া দিচ্ছে তার মধ্যে! ইজি চেয়ারে পিঠ ঠেকিয়ে খানিকক্ষণের জন্য ফিরে গেলেন ছোটবেলার সেই ঈদের দিনটিতে।
‘ছোটবেলার সবকিছুই ছিল এ সময়ের তুলনায় অন্যরকম। ঈদের আনন্দও ছিল অন্যরকম। ঈদের কয়েকদিন আগℱ থেকেই শুরু হয়ে যেত আনন্দ। আর মাত্র কয়েকটা রোজা, এরপরই ঈদ। নতুন কাপড়, জুতো সব লুকিয়ে রাখা হতো। কাউকে দেখালেই যেন ঈদ শেষ। ঈদের জামা ঈদের দিনই দেখাতে হবে। নয়তো ঈদ তো শেষই হয়ে যাবে। চাঁদ রাতে ইফতারে পানি মুখে নিয়েই ছাদে ছুটে যাওয়া। ঈদের চাঁদ দেখে হৈ-রৈ করে নেচে উঠার সেই অনুভূতিগুলো এখন অনেকটাই মলিন।
ঈদের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই টেলিভিশনে বেজে উঠতো ‘ও মোর রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ...‘। গানের তালে মনও নেচে উঠতো। ঈদের আনন্দ বলে কথা। বাড়ির ছাদে তাꦉরাবাতি নিয়ে ছোট ভাই বোনেরা চাঁদ রাতের খুশিতে মেতে উঠতাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে সেই সুবাদে ঘুমও হতো না। ঈদের সকালে উঠেই গোসল করে নতুন পাঞ্জাবি পরে মসজিদে যেতাম বন্ধুরা মিলে𒐪। এরপর নিজের বাসায়, সব বন্ধুর বাসায়, আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় 𒁏একেএকে সবাইকে সালাম করে সালামি নিতাম। ও বড়দের থেকেও সালামি নেওয়া হতো। আবার ছোটদেরও সালামি দেওয়া হতো। ঘুরাঘুরি আর সালামি সংগ্রহে কোথায় যে কি খেতাম তা কোনো হদিসও ছিল না। কিছুক্ষণ পর পর গুণে দেখতাম, কত টাকা সালামি পেয়েছি। ভাই-বোনদের সঙ্গে তো বটেই বন্ধুদের সঙ্গেও সালামি নিয়ে প্রতিযোগিতা হতো। কে, কতো বেশি পেয়েছি। সেই সালামি জমিয়ে পরিকল্পনা করতাম কোথায় যাব, কী খাব।
এভাবেই কেটে যেত ঈদের দিনটি। একবার ঈদে বন্ধুরা মিলে দোকানও দিয়েছি। হাট থেকে চানাচুর, বিস্কুট, সন্দেশ, হজমি,&nbs♛p;মনেক্কা, চকোলেট কিনে এনে বাড়ির🐷 পাশেই ছোট্ট দোকান দিতাম। ঈদের দিনের বিকেল থেকে সেই দোকানে আড্ডা দিতাম আর চলতো বিক্রি। ছোটরাই তাদের সালামি দিয়ে এসব কিনতে আসতো। অল্প টাকায় অল্পই লাভ হতো। কিন্তু আনন্দটা ছিল অনেক।
সময় বদলে গেছে। এখনও ঈদের সময় ঈদগাহে গিয়ে নামাজ পড়ি। সবার জন্য দোয়া চাই। কোলাকুলি আর কুশল বিনিময় করি। এরপর বাড়ি ফিরে আসি।🐻 বাড়িতেই ঈদের সারাদিন কেটে যায়। বাসার ছোটরা জামা পড়ে সালাম করে। তাদের ঈদি দেই। এরপর তারাও টিভি বা মো🤡বাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখেই ঈদের দিনটি কেটে যায়।‘
ভাবনা ছেড়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন আমিন সাহেব। চোখের চশমাটা পাশেই রেখে বিছানায় শুয়ে প✱ড়েন। ছোটবেলার সেই ঈদে ফেরা সম্ভব নয়, কিন্তু স্মৃতিচারণে খানিকটা আনন্দের অনুভূতি এভাবেই জড়িয়ে থাকে সবার মাঝে।