প্রতিনিয়ত রূপ পাল্টাচ্ছে করোনাভাইরাস। বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাসের নানা ভ্যারিয়েন্টের𝐆 দেখা মিলেছে। একেক ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গও একেক রকম। যা নিয়ে এখনও গবেষণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। গবেষণা থেকে কিছু ভ্যারিয়েন্টের ধরন খুঁজে পেয়েছেন, কিছু ভ্যারিয়েন্ট এখনও অজানা। বিশ্ব ঘুরে এর প্রভা🌳ব এখন দেশেও পড়েছে। দেশে করোনাভাইরাসে এসব ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন পপুলার মেডিকেল কলেজের মেডিসিন এবং কোভিড কনসালট্যান্ট ডা. মাহবুব ময়ূখ রিশাদ।
সংবাদ প্রকাশের নিয়মিত আয়োজন " ডাক্তার আছেন " অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে উপস্থিত ছিলেন ডা.মাহবুব ময়ূখ রিশাদ। ‘করোনাঃ ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে ভাবনা’ বিষয়ের উপর বিস্তারিত কথা বলেন। সঞ্চালনায় 🍎ছিলেন সানজিদা শম্পা।
কোভিড এর বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের সম্পর্কে ডা.মাহবুব ময়ূখ রিশাদ বলেন, “বিভিন্ন ভ্𒈔যারিয়েন্ট থেকেও গুরুত্বপূর্ন কোভিড ভাইরাস। বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে জানার পরও কোনটিকেই কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা যায় নি। ডেল্টা হোক বা ল্যাম্বডা, বিভিন্নভাবেই এসব দেশে প্রবেশ করে মানুষকে সংক্রমণ করছে। কোভিড টেস্টিং-এর সময় ভ্যারিয়েন্ট নির্ণয় করা হয় না। নতুন ভ্যারিয়েন্ট প্রকাশ পেলে শুধু দেখা হয় এটি কিভাবে সংক্রমণ করে বা স্বাস্থের উপর কি ধরণের প্রভাব রাখে।“
“ভাইরাসের বিবর্তন হবে এটা স্বাভাবিক। প্রশ্ন হচ্ছে, ভ্যারিয়েন্ট অনুযায়ী টিকা তৈরি হচ্ছে কিনা অথবা কোভিড বিরোধ﷽ী টিকা বিভিন্ন ভেরিয়েন্ট ভ্যারিয়েন্ট করতে পারে কিনা? কেন মানুষ মারা যাচ্ছে? এখন মেনে নিতে হবে, কোভিড-এর সঙ্গে আমাদের আরও বেশ কিছুদিন থাকতে হবে। এক পর্যায়ে কোভিড হয়তো সাধারন ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো হয়ে যাবে।“
“কোভিড ভ্যারিয়েন্ট যতটা মৃত্যুর কারণ, তার চেয়ে বেশি কারণ হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা। কারণ যথার্থ চিকিৎসা না হ🥃লে কোভিড আক্রান্তদের প্রাণহাণি অনেক বেড়ে যায়।“
কোভিড- চিকিৎসা নিয়ে ডা.মাহবুব বলেন, “কোভিড-এর মূলত ৪ ধরণের চিকিৎসা আছে। প্রথমত অক্সিজেন সরবরা💃হ করা। এক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, অক্সিজেন কি মাত্রায় হ্রাস পেলে অক্সিজেন ফ্লো দিতে হবে। সাধারনত ৯৪-এর নিচে থাকলে নেজাল ক্যানোলা দিয়ে অক্সিজেন ফ্লো দেওয়া হয়। আরো নিচে নামলে নাকে মাস্ক পরিয়ে অক্সিজেন দেওয়া হয়। আরো বেশি অক্সিজেন প্রয়োজন হলে মাস্কের সাথে একটা ব্যাগ দেয়া হয়। এরপর হাইফ্লো দেওয়া হয়। তারপর ম্যাকানিকাল ভেন💞্টিলেশনের পর লাইফ সাপোর্ট।“
“কোভিড সংক্রমণে দেহে অক্সিজেন স্বল্পতা হয়ে হাইপোক্সিয়া দেখা দিতে পারে। শরীরে অক্সিজেন স্বল্পতাকেই হাইপক্সিয়া বলে। হাইপক্সিয়া হলে শরীরের নানা অংশে অক্সিজেন ঘাটতিজনিত ইনজুরি হয়ে যায়। এ কারণেই হাসপাতালে কোভিড আক্রান্ত ব্যাক্তিকে নিতে দেরি হলে অনেক ক্ষেত্রে ভেন্টিলেশন দিয়ে প্রাণ রক্ষা সম্ভব হয় না। কাজেই ডেল্টা ভেরিয়েন্ট হোক অথবা ল্যাম্বডা কোভিড আক্রান্ত ব্যাক্তির দেহে অক্সিজেনের প্রয়োজন এবং সরবরাহের সময় যত দীর্ঘা𝕴য়িত হয় ততই মৃত্যুর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।“
“টিকা দিয়ে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কিছুটা সহায়তা দেওয়া হয়। টিকা শরীরে কোভিড ভাইরাসকে শনাক্ত করার জন্য মেমোরি সেল তৈরি করে। ফলে কোভিড সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই একে ধ্বংস করা যায়। অধিকাংশ চিকিৎসাকর্মী বর্তমানে কোভিড ভ্যাক্সিন প্রাপ্ত হওয়ায় তাদের 🌼মৃত্যু অনেকাংশে কমে গেছে। চিকিৎসকেরা কোভিড চিকিৎসার পদ্ধতিও জেনে গেছেন।“
“তবে কোভিড টিকা কখনই নিশ্চিত করে না যে আপনার কোভিড হবে না। বরং কোভিড হলেও যেনো গুরুতর না হয়ে মৃদু বা সহনীয়🔯 পর্যায় থাকে এর জন্যই টিকা নিতে হবে। এরকম অনেক প🉐র্যবেক্ষণ দেখা যায়।“
“ভ্যারিয়েন্ট বলতে এমিনো এসিডের সিকোয়েন্স কাঠামো পরিবর্তন হয়ে নতুন ধরন তৈরি হওয়া। এই কাঠামো পরিবর্তনের ফলে টিকার কার্যকারীতায় কোনো প্রভাব ফেলেছে, এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ল্যাম্বডা🐻 ভ্যারিয়েন্ট মাত্র শনাক্ত হয়েছে। কাজেই ব🍒র্তমান টিকার কার্যকারীতা ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টের উপর কেমন এ বিষয় কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এ মুহুর্তে যে টিকা পাওয়া যাচ্ছে তাই গ্রহণ করাটা অত্যন্ত জরুরি।“
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এর উপসর꧑্গ কি হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা: মাহবুব বলেন, “ভ্যারিয়েন্ট যাই হোক, কোভিড সংক্রমণ হলেই প্রাথমিক উপসর্গ জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা থাকবে। সেই সঙ্গে পেট ব্যাথা, ডায়রিয়াও হতে পারে। কখনও দেখা যায় কোন উপসর্গ নেই অথচ ফুসফুস ৩০-৪০ শতাংশ আক্রান্ত হয়ে গেছে। ডেল্টা বা ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণে দ্রুত উপসর্গ দেখা যায় অথবা নীরবে আক্রান্ত করে। নীরবে আক্রান্ত হলে উপসর্গ দেখা যায় না। সেক্ষেত্রে প্রাণ রক্ষা করা কষ্টকর হয়ে পরে।“
ডেঙ্গু ও কোভিড এর উপসর্গ প্রায় একই, এই অবস্♚থায় জ্বর হলে কোনটির পরীক্ষা করতে হবে, এর উত্তরে ডা: মাহবুব বলেন, “সাধারনত ৩-৫ দিন ধরে রোগীর চোখ ব্যাথা, মাথা ব্যথা, সে সঙ্গে অস্থি সন্ধিতে ব্যথা এসাব উপসর্গ বেশি থাকলে প্রথমে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হয়। তবে এর সঙ্গে কাশি, গলা ব্যথা থাকলে অবশ্যই কোভিড পরীক্ষাও করতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে দেখা যায় ৫ দিনের মতো উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বর থাকে। আবার ম্যালেরিয়ায় প্রচন্ড কাপুনি দিয়ে উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বর হয়। জ্বরের ধরন দেখে রোগ নির্ণয় করা হয়। সমস্যা হচ্ছে, কোভিড এর জ্বরের কোনো ধরণ এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায় নি। কখনও উচ্চ আবার কখন গায়ে গায়ে জ্বর দেখা দেয়। যেকোন জ্বর হলেই দ্রুত চিকিৎসকেরღ পরামর্শ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ইদানিং রোগীরা ডেঙ্গু ও কোভিড উভয়েই আক্রান্ত পাওয়া যাচ্ছে।“
সমসাময়িক কিছু গবেষণায় জানা যায়, নতুন যেসব কোভিড ভেরিয়েন্ট প্রকাশ পাচ্ছে প্রচলিত টিকায় সেগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, এটা কতটুকু যৌক্তিক? উত্তরে ডা: মাহবুব বলেন, “পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে অনেক নমুনার প্রয়োজন। বর্তমানে সময় ও নমুনা দুটোই কম। শোনা যাচ্ছে, জনসন অ্যন্ড জনসন এর টিকা ডেল্টা ভেরিয়েন্ট প্রতিরোধে বেশি কার্যকর। ইতিহাসে কথাও দেখা যায়নি, এতো কম সময়ে কোন রোগ প্রতিরোধে এতো রকমের টিকা তৈরি হয়েছে। তবে বর্তমান জরুরি অবস্থায় বৈজ্ঞানিক বা নৈতিক ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দিতে হয়। যতো ধরনের প𓂃র্যবেক্ষণ হয়েছে তার অধিকাংশ বলছে, অনুমোদিত সকল টিকা কোভিড এর ডেল্টা ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে কার্যকর। আবার বিভিন্ন টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও বৈশ্বিক রাজনীতিও এসব পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণকে প্রভাবিত করে। গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে, অনুমোদিত যে কোন টিকা নিয়ে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এতে যে ভ্যারিয়েন্টেই আক্রান্ত করুক পরিনতি গুরুতর না হয়ে সহনীয় হবে আশা করা যায়।“
কোভিড-এর ক্ষেত্রে মোনোক্লোনাল চিকিৎসার বিষয়ে ডা: মাহবুবꦇ বলেন, “কোভিড সংক্রমণে পরীক্ষিত ৪ ধরণের চিকিৎসা আছে। রোগী ও সংক্রমণের অবস্থা বুঝে অক্সিজেন থেরাপি, রেমডেসিভির অ্যান্টিবায়োটিক, ইস্টেরয়েড এবং রক্ত পাতলা করতে এন্টি-কগুলেন্ট ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। দুর্বল ব্যক্তিকে কোভিড ভাইরাস বেশি আক্রমণ করে ও দ্রুত শরীরের ভেতর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে। এ সময় রোগীর স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হয়। এক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে মোনোক্লোনাল এন্টিবডি চিকিৎসা দেওয়া হয়। গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে, রোগী কোভিড ভাইরাসের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে এই চিকিৎসা দেওয়া যায় না। কাজেই পরীক্ষা করে দেখতে হয় রোগীর কোনও ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ আছে কিনা। অন্যথায় এ চিকিৎসায় কোভিড কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রাণহানির সম্ভাবনা দেখা দেয়। এ চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং এখনও এর কার্যকারিতা প্রমানিত না।“
ডেল্টা ও ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টে বাড়তি সতর্কতার কথা জানিয়ে ডা: মাহবুব বলেন, “আগের ভ্যারিয়েন্টগুলো একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠিকে আক্রমণ করতো। বর্তমান ভ্যারিয়েন্টগুলো একটু আলাদা। সব বয়সী জনগোষ্ঠীকেই আক্রমণ করতে পারে। কাজেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয়, যাদের সামর্থ আছে একটি পালস অক্সিমিটার বাসায় রাখুন। কোন কারণে শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা হলেই যেন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে𓆉ন।“