ঘুমের মধ্যে হাঁটার দৃশ্য আমরা অনেক সময় চলচ্চিত্রে দেখে থাকি। এই মজার দৃশ্য দেখে অনেকেই আবার হাসিতে গড়াগড়ি খান। তবে বাস্তব জীবনেও কিন্তু এমন ঘটে। ঘুমের ভেতরে মানুষের এই হাঁটাচলা করাকে বলা হয় স্লিপ ওয়াকিং। ঘুমজনিত রোগে♕র মধ্যে এটি একটি। এই রোগে আক্রান্ত রোগী নিয়ে পরিবারের লোকজন দুশ্চিন্তায় ভোগেন। কারণ এটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ একটি সমস্যা।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ঘুমের মধ্যে হাঁটাকে বলা হয় ‘সোমনমবুলিজম’ বা ‘নকচামবুলিজম’। আসলে এটা এক ধরনের প্যারাসোমনিয়া। যা ঘুমের💯 মধ্যে জাগ্রত ব্যক্তির ন্যায় বিভিন্ন কর্মকান্ড করার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। আর ঘুমের মধ্যে হাঁটার বিষয়টি সাধারণত রাতের প্রথমভাগেই হয়। আবার অনেক সময় দিনের বেলা দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমালেও এমন ঘটতে পারে।
এমন অবস্থায় রোগীকে জাগানো অনেক কষ্টের কাজ। কারণ সে প্রচন্ড ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। কাজেই তাকে জাগাতে গেলে উল্টো বিপদের আশঙ্কা থাকে। সে ক্ষেত্রে ধীরে ধীর🅠ে মমতা দিয়ে তার অচৈতন্য অবস্থা থেকে চৈতন্যে ফেরাতে হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞান ঘুমের মধ্যে এই হাঁটার বেশ কিছু কারণ আবিষ্কার করেছে।
চলুন জ꧟েনে নেওয়া যাক ♏ঘুমের মধ্যে হাঁটার প্রধান কারণগুলো-
গবেষণায় জানা গেছে, বিশেষ করে যেসব ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে অনিদ্রায় ভোগেন, যাদের অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস আছে, এমনকি যারা প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন তারা এমন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ডিপ্রেসশন, স্ট্রেস থেকেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বংশগত কারণেও এটি হতে পারে। যদি বাবা-মা কারো মধ্যে এই অভ্যাস থাকে তাহলে সন্তানদেরও এটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
শরীরে থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য হলে রাতে ঘুমের মধ্যে হাঁটার অভ্যাস তৈরি হতে পারে।
মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে এধরনের সমস্যায় সৃষ্টি হয়।
স্ট্রোক করলে, মস্তিষ্ক প্রদাহজনিত রোগে আক্রান্ত হলে বা মাথায় বড় আঘাত পেলেও স্লিপ ওয়াকিং হতে পারে।
মাদকের প্রতি খুব বেশি আসক্ত থাকলে, শব্দ বা আলোর জন্য যদি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে সেক্ষেত্রেও এ রোগের জন্ম হতে পারে।
তবে এই সমস্যা থেকে বাঁচতে সবার প্রথমে প্রয়োজন রোগীর প্রতি সতর্ক থাকা। সেক্ষেত্রে কিছু বিষয় মেনে চললে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক পরিত্রাণের উপায় গুলো-
ঘরের দরজা-জানালা ভালো করে বন্ধ রাখতে হবে। যাতে খুলে বেরিয়ে যেতে না পারে।
ঘরে কোনো ধারালো ছুরি, ভাঙা কাচের টুকরা কিংবা ধারালো কিছু রাখা যাবে না।
আগুন জ্বালানোর কোনো কিছু রাখা যাবে না।
ঘুমের মধ্যে হাঁটতে গিয়ে ধাক্কা লাগতে পারে এমন কিছু ঘরে রাখা যাবে না।
ঘুমের মধ্যে যাদের হাঁটার অভ্যাস রয়েছে তাদের বিছানা একটু নিচু বানাতে হবে। যাতে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গেলে ব্যথা না পায়।
আক্রান্তরা যেন নিয়মিত ঘুমাতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
ঘুমিয়ে গেলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে কিংবা ঘুম ভেঙে যায় এমন শব্দ বা কাজকর্ম করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
হঠাৎ ঘুমের মধ্যে হাঁটা শুরু করলে তাকে আস্তে আস্তে বিছানায় শুইয়ে দিতে হবে। জোর জবরদস্তি করা যাবে না।
দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা থেকেই কিন্তু দেখা দেয় এমন কঠিন রোগ। তাই সুস্থ থাকতে দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। আর স্লিপ ওয়াকিং প্রতিদিনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়ালে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।