বিশ্ববিনোদন অঙ্গনে ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত ‘রেড সি আন্তর্জাতিক চলচ্ಌচিত্র উৎসব’। যেখানে ঢল নেমেছিল বিশ্বখ্যাত তারকাদের। জেদ্দার প্রাণকেন্দ্র আল-বালাদ শহরের কালচার স্কয়ারে রেড সি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের চতুর্থ আসর মাতিয়েছেন তারা। তাদের পাশাপাশি ছিলেন আরব দেশের নামিদামি অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও। লোহিত সাগরের তীরে এক মোহনায় মিশে গিয়েছিলেন বিশ্বের বিনোদন অঙ্গনের মহারথীরা।
গত ৫ ডিসেম্বর জেদ্দায় পর্দা উঠে ‘রেড সি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল’-এর। এরপর ১৪ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় উৎসব। পৃথিবীর মানচিত্রে কোনো চলচ্চিত্র উৎসবের এভাবে মাথা উঁচু করে তুলে ধরতে বছরের পর বছর লেগে যায়। অথচ প্রচলিত ছক ভেঙে মাত্র চার বছরেই বিশ্🌠বজুড়ে আলোচনার শীর্ষে আসে সৌদির আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।
বিগত ২০২১ সালে শুরু হয়ে হলিউড-বলিউডের তাবৎ আগ্রহের আলো নিজের করে নিয়েছে সৌদির চলচ্চিত্র উৎসবটি। উদ্বো🙈ধনী থেকে প্রতিদিনই সরব উপস্থিতি ছিল হলিউড-বলিউড ও বিভিন্ন দেশের তারকাদের। উইল স্মিথ থেকে শুরু করে সিনথিয়া এরিবো, স্পাইক লি, মিশেল ইয়ো, ভিন ডিজেল, এমিলি ব্লান্টের মতো পশ্চিমা তারকারা এসেছেন🥂 এবার। বলিউড থেকে গেছেন আমির খান, কারিনা কাপুর, রণবীর কাপুরের মতো জনপ্রিয় তারকা।
প্রশ্ন হলো কীভাবে এত অল্প সময়ে এমন𓆉 সাফল্য পেল সৌদির এ উৎসব? এর উত্তরে বেশ কিছু বিষয় আসে সামনে। প্রথমত সৌদি🐎 আরব সরকারের পরিবর্তিত নীতি। ইসলামিক দেশ হিসেবে রক্ষণশীল ছিল সৌদি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রক্ষণশীলতার বন্ধনি অনেকটা খুলে দিয়েছেন সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। ফলে দেশটির বিনোদন অঙ্গনে নতুন জোয়ার এসেছে।
মূলত, সৌদি আরবজুড়ে এখন অসংখ্য প্রেক্ষাগৃহ গড়ে উঠেছে। যেটা বিশ্ব সিনেমার অন্যতম বড় বাজারে রূপ নিচ্ছে। রেড সি 💖উৎসবের মূল অর্থায়ন করে রেড সি ফিল্ম ফেস্টিভাল ফাউন্ডেশন। এটি গঠন করেছেন সৌদি সরকারের সংস্কৃতিমন্ত্রী বদর বিন আব্দুল্লাহ আল সৌদ। যেহেতু সরকারি উদ্যোগ, বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও আসে দেদার। ফলে আয়োজনে কৃপণতা করে না উৎসব কর্তৃপক্ষ। বড় তারকাদের ব෴িশেষ আমন্ত্রণের মাধ্যমে নিয়ে আসেন তারা। এর পেছনে ব্যয় হয় বিপুল অর্থ।
এ ছাড়া উৎসব কর্তৃপক্ষের রয়েছে দক্ষ প্রচারণা টিম। যার সুবাদে উৎসবটির বিভিন্ন কনটেন্ট অন্তর্জালে বিপুল সাড়া পায়। উৎসবটির সিনেমা বাজারের নাম ‘রেড সি সক’। যেটা শুধু চার বছরেই আরব বিশ্বের বৃহত্তম সিনেমা বাজারে পরিণত হয়েছে। যেখানে নিজ নিজ ছবি নিয়ে হাজির হন খ্যাতিমান নির্মাতা-শিল্পীরা। এবারের আসরে বাংলাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিস🦄েবে অংশ নিয়েছেন মাকসুদ রহমানের ‘সাবা’। নির্মাতার সঙ্গে উৎসবে উপস্থিত ছিলেন ছবির অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীও।
শুধু তাই নয়, সৌদির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও ফিল্ম কমিশনের উদ্যোগে রিয়াদে চলচ্চিত্র সমালোচকদের নিয়ে ৬-১০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ‘ফিল্ম ক্রিটিসিজম কনফারেন্স- এফসিসি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন। যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র সমালোচক, লেখকরা বক্তব্য দেন। সম্মেলনের সিম্পোজিয়াম পর্বে বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সমালোচক, লেখক ও সাংবা♓দিক বিধান রিবেরু। তিনি এ ব্যাপা🎀রে বলেন, “সৌদি আরবের সিনেমা ইন্ডিস্ট্রিতে এক নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে। তারা সিনেমা নির্মাণ, প্রদর্শনসহ নানা রকম আয়োজন করছে।”
শুধু ফিল্ম ফেস্ট নয়, কয়েক বছর ধরেই সৌদি সরকার বেশি মনোযোগী হয়েছে সিনেমা ꦑব্যবসায়। যে খাত থেকে কাঙ্ক্ষিত সফলতাও পাচ্ছে দেশটি। ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে সৌদি প্রেক্ষাগৃহগুলোতে বিক্রি হয়েছে ৮৫ লাখের বেশি টিকিট। আর এ থেকে দেশটি আয় করেছে ৪২০ মিলিয়নের বেশি সৌদি রিয়াল। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি! নাটক-সিনেমার ওপর থেকে সাড়ে তিন দশকের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর দেশটির প্রেক্ষাগৃহগুলোতে ক্রমাগত বাড়ছে দর্শক।
সৌদি আরবের সংস্কৃতিমন্ত্রী এবং আল-উলা রয়্যাল কমিশনের গভর্নর প্রিন্স বদর বিন আবদুল্লাহ বিন মোহাম্মদ বিন ফারহান আল-সৌদ এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছেন, চলতি বছরের প্রথমার্ধে সৌদি বক্স অফিস আয় করেছে ৪২১ দশমিক ৮ মিলিয়ন সৌদি 🔜রিয়াল। শুধু তাই নয়, তালিকার শীর্ষ আয়কারী প্রথম তিনটি চলচ্চিত্রের দ๊ুটিই সৌদি প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে।
‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনার আওতায় ২০১৮ সাল থেকে বিনোদনজগৎ থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ওই বছরই এপ্রিলে রাজধানী রিয়াদের ‘এএমসি’ সিনেমা হলে প্রদর্শিত হয় মার্ভেল স্টুডিওর ব্ল্যাক প্যানথার। সৌদি আরবের জেনারেল ౠকমিশন 🅘ফর অডিও ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার (জিসিএএম) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সিনেমা চালুর পর পাঁচ বছরে এই খাত থেকে সৌদি আরবের আয় হয়েছে ১৪ কোটি ২৬ লাখ ডলারের বেশি। প্রথম বছরে এই আয় ছিল ২০ লাখ ডলার।
সরকারি তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি আয় করেছে টম ক্রুজ অভিনীত অ্যাকশন ড্রামা ফিল্ম ‘টপ গান: ম্যাভেরিক’। ১২ লাখের বেশি টিকিট বিক্রি করে সিনেমাটি আয় করেছে ৮ কোটি ৪০ লাখ রিয়ালের বেশি। এরপরই আছে ক্রিস্টোফার নোলানের ‘ওপেনহাইমার’ ও টম ক্রুজ অভিনীত ‘মিশন: ইম্পসি🎃বল-ডেড রেকনিং পার্ট ওয়ান’।
সৌদি সিনেমাগুলোও পিছিয়ে নেই। নিষেধাজ্ঞা তুলে🅷 দেওয়ার আগাম খবর পেয়ে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তৈরির উদ্যোগ নিতে শুরু করেন তিন সৌদি যুবক আল ফাদান, ইব্রাহিম আল খাইরুল্লাহ ও আলী খালতামি। তিনজন মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ‘তেলফাজ ১১’ নামের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। সিনেমার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ছয় বছরের মাথ🏅ায় সৌদি আরব যেমন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বক্স অফিসে পরিণত হয়েছে, তেমনি তেলফাজ হয়ে উঠেছে দেশটির অন্যতম প্রধান প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান।