গত কিছুদিন ধরে জনপ্রিয়তা নিয়ে ভাবছিলাম। এর ফাকে এক কবিবন্ধুর সঙ্গে তার ফলোয়ার কমা-বাড়া নিয়ে আলাপ হয়। আমার অবস্থান এর বিপরীতে। অজনপ্রিয়তার শীর্ণ রেখাতে থাকাই আমার লক্ষ্য। যারা বন্ধু তাদেরই আশকারা চাই, অন্য ক্রাউডের ভালোবাসা তেমন জরুরি নয়। আমি গত কিছুদিন যাবত রক মনুর বই 🌃পড়তে পড়তে জনসংস্কৃতি নিয়ে ভাবতে ভাবতে এক সময়কার দিলরুবা খানের জনপ্রিয়তার সময় ভাবছিলাম। ‘পাগল মন মন কেন এত কথা বলে’, ‘দেখা আরিচার ঘাটে’, ‘রেললাইন বহে সমান্তরাল’, ‘ভ্রমর কইয়ো গিয়া’র মতো` পুরো ন্যাশন ওয়াইড হিট গানের শিল্পীর বড় অভিযোগ তাকে সবাই ঠকিয়েছে। আইনি লড়াই করেও স্বত্বের টাকা পাননি। কেউ তাকে মনে করে না তেমন এসব! অথচ তার জনপ্রিয়তার প্রাসঙ্গিকতা এখনো আছে। এখন কোনো নতুন শিল্পী দিলরুবা খানের গান গাইলে লোকজন বলবে উনার মতো হয়নি। তাই জনপ্রিয়তা ধরা দিলেও আসলে কিছুই হয় না, সাময়িক সাফল্য উপভোগ, সাময়িক নামযশ খ্যাতি।
বাসায় চার-পাঁচꦓ দিন নিথর দেহ পড়ে থাকবার আকষ্মিকতায় আজ অনেকেই মনি কিশোরের নাম নিবেন। একটা সময় এরা ছিল ক্যাসেট যুগের কিং, এখন তার লাশ পড়ে থাকে একলা ঘরে। বাড়িওয়ালার অনুসন্ধিৎসু মনের কারণে পুলিশ মারফতে জানা যায় তিনি আর বেঁচে নেই।
আমরা মনি কিশোরের শিল্পী জীবনকে তিন ভাগে ভাগ করতে পারি। ৯১ থেকে ২০০১ তারকা পর্ব, ২০০২-২০১০ নিজের সংগীতশিল্পী জীবন রেলিভ্যান্ট রাখার চেষ্টা, ২০১১ থেকে ২৪ বিস্মৃতির নানান স্তরে থাকা। শুরুটা হয়েছিল তার অডিও ক্যাসেট চার্মিং বউ দিয়ে। বিটিভির ফিরো🤪জ মাহমুদ বলেই ফেললেন, মনি মন্ডল নামটা শিল্পী শিল্পীর নাম লাগে না। আমার কাছে কিন্তু বেশ লাগে। একটা সাবলটার্ন ভাব আছে। কিশোর কুমারের ভক্ত ও গানটান পছন্দ করেন গাইতে তাই ফিরোজ সাহেব লাগিয়ে দিলেন, মনি কিশোর। যেভাবে শানু ব্যানার্জি হয়েছিলেন কুমার শানু।
মনি কিশোরের আজন্ম দুঃখ, ‘কি ছিলে আমার বল না তুমি’ গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার না পাওয়া। আমি অবশ্য আক্ষেপটার কারণ দেখি না। সরকারি পুরস্কার কতজনই পেল, তাদের ভেতরে মনি কিশোরের মতো বিখ্যাত হতে পেরেছে হাতেগোনা অল্প কজন। প্রয়াত অভিনেতা মাসুম আজিজ বলতেন ভালো কথা, আপনি ভালো কাজ করবেন আর রাষ্ট্র আপনাকে জামাই আদর করবে এ আশাবাদ বাদ দিতে। মনি কিশোরও সেই আশাবাদে থাকেননি। তিনি কাপড়ের ব্যবসা করতেন। এছাড়া বিভিন্ন কাজ করেছেন। ‘কি ছিলে আমার বল না তুমি’ গানটি তাকে রাতারাতি বিখ্যাত করে দেয়। আমেরিকান নারী, যিনি কোকেন পাচারকারী হয়ে ঢাকায় জেল খাটা আসামি থেকে রিমোট গ্রামের স্কুলে যাওয়া কিশোরী পর্যন্ত সবার কাছে এই গান তাকে পৌঁছে দেয়।꧙ ‘সেই দুটি চোখ কোথায় তোমার’, ‘তুমি শুধু আমারই জন্য’, ‘মুখে বলো ভালোবাসি’, ‘আমি মরে গেলে জানি তুমি’ এগুলোও তার বিখ্যাত গান। কিন্তু এসব কোনোটাই `কি ছিলে আমার` এর ধারেকাছে নেই। এ গানটা আমাকে শুনিয়েছিল আমার নানু বাড়ির বন্ধু সবুজ। যার এখন আর কোনো খোঁজ পাই না। ভাইরাও বলতে পারে না তার খবর। তো গানটা যখন শুনেছি তখন প্রেমটেম কিচ্ছু নেই। কিন্তু বিরহের এক হাহাকার গ্রাস করে। অনেক অনেক বছর পরে মনি কিশোর কই জানি করোনায় ত্রাণ দিতে গিয়েছেন, এক ৩৫ বছরের ভদ্রমহিলা তাকে জড়িয়ে ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে কাঁদছেন। খুব ছোটবেলায় নাকি শুনে শুনে বড় হয়েছেন। কিন্তু আজই প্রথম দেখলেন।
মনি কিশোরের নিজেরও অজানা ছিল না তার ভক্ত কারা। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের বেড়ে উঠা ছেলে মেয়ে, গার্মেন্টস শ্রমিক, গ্রামের গৃহিণী তারাই তার শ্রোতা। এবং সেই শ্রোতারা কখনই ভোলেননি মনি কিশোরকে। ইউটিউবে একজনের কমেন্ট কোট করি—“আমার বড় ভাই খালি শুনতো এসব গান, কেন শুনতো এখন বুঝি।” আমাদের এই ব্যাপারটা নিয়ে আলাপ কম হতে দেখি। আমরা অনেক কিছু পাই পরিবার থেকে ও বড় ভাই-বোনদের কাছ থেকে। তাই টিএসসিতে গেলে বাচ্চুর গান শুনে অবাক লাগে। যে গাইছে তার বয়স বড়জোর আঠারো। আর আমরা কিছু ব্যাপারকে সফল কুল এস্টাবলিশ করেছি, যেমন মহীনের ঘোড়াগুলি, সুমন, অঞ্জন, জেমস, এলআরবি। কিন্তু আমার মতে এন্ড্রু কিশোর, মনির খান, মনি কিশোররাও কুল, তারা আরো বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে কুল। সেই জনগোষ্ঠীর আমি ফ্যান না, হবোও না কখনো। কিন্তু আমরা তাদের মেনে নিতে চাই না। আমরা সর্বোচ্চ হাবিবদের নিতে পারি। বালাম যখন ব্যান্ড ছেড়ে পপ গান গাইলো, এক অ্যালবামে সফল হবার পর এরপরের অ্যালবামের জন্য যত টাকা পেয়েছিলেন এত টাকা তিনি আগে কখনো চোখেও দেখেন নাই। মনি কিশোররা সেই আরো রমরমা অডিও ব্যবসার বড় শিল্পের প্রতিনিধি। তিনি চেয়েছিলেন গান গাইতে গাইতেই মরে যাবেন। হয়তো তা পেরেছেনও। তারপর একাকিত্বে তার লাশ পড়েছিল নাকি ছিল না এসব বিবেচ্য ব𓆏িষয় না। তিনি শিল্পী হয়ে মানুষের সাথে কানেক্টেড থেকেছেন এটাই আসল। পরিবার-পরিজন থাকলেও মানুষ একা। জনপ্রিয়তা হীনতার শ🥂ীর্ণ রেখায় যাওয়াই আমাদের সকলের নিয়তি।