‘সকল জীর্ণতা দীর্ণ করে তুমি
এসো হে বৈশাখ
এসো উত্তপ্ত বদ্বীপে,
সবুজ পল্লবে, নবরূপে
এসো স্বপ্ন-সম্ভাবনা বুকে নিয়ে
এসো বারবার,
মুছে দাও ব্যর্থতার যত গ্লানি
জীবনের ভার।’
কবিতার চরণের মতো ব্যর্থতার যত গ্লানি তা মুছে দিতে বসন্তের বাসন্তী রং শেষে গ্রীষ্মের তেজি আগমন। প্রকৃতির আপন আলোয় বিরাজ করে স্বপ্নময় দিনগুলো। তেমনই একটি দিন পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ মানে লাল নীল মঙ্গল শোভাযাত্রা। পহেলা বৈশাখ মানে গরম ভাতে সরষে ইলিশ আর তরুণীর হাতে লাল কাঁচের চুড়ির ঝুনঝুন শব্দ। পহেলা বৈশাখ মানে শিশুর টোল পড়া গালে রঙ্গিন তুলিতে আঁকা শুভ নববর্ষ। এসবই আমাদের সংস্কৃতি। বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য। যে ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে বাংলা সাহিত্য, বাংলা কবিতা, লোকগীতি, লোকনৃত্য, কুটির শিল্প সবকিছু। এই শেকড় ছাড়া যে বাঙালি জাতি অসম্পূর্ণ। ঋতু পরিক্রমায় প্রতিবছরের মতো আমাদের সামনে চলে এসেছে বৈশ🔥াখ। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে সারা দেশের মত নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়েও সাজ সাজ রব পড়ে গেছে।
অতিমারি করোনায় দুই বছর বিরতির পর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের সশরীরে আয়োজন হতে যাচ্ছে পহেলা বৈশাখ। থাকবে মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৈশাখী পালার আয়োজন। এর আগের সন্ধ্যায় চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষ্যে দেশের ম🙈ঙ্গল কামনায় ফানুস উৎসব করা হবে।
এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ঐতিহ্য🔥ের নানা অনুষঙ্গের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন সবাই।
ক্যাম্পাসের গাহি সাম্যের গান মঞ্চ ও চারুকলা বিভাগ ঘুরে দেখা যায় চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। লোকজ সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে টেপা পুতুল, রাজা-রানি ꦆও সূর্যের পেপার ম্যাশ, হাতি, বাঘ, দোয়েল ও পেঁচার মুখোশ ꦆও আমন্ত্রণ পত্র বানাচ্ছে তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে এসব উপকরণ তৈরিতে। রং-তুলির আঁচড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রাঙিয়ে তুলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনকে।
বৈশাখী আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজক কমিটির সদস্য-সচিব ড. সিদ্ধার্থ দে বলেন, “এব𒀰ার আমরা লোকজ ঐতিহ্যবাহী মুখোশ, প্যাঁচার মাস্ক, হাতি, বাঘ, পোস্টার ম্যাশ, রিকশা টানাসহ বিভিন্ন ধরনের 𝓡মুখোশ তৈরির হাতের কাজের আয়োজন করেছি। এখন চলছে রং করার কাজ। এসব আয়োজনের মাধ্যমে আমরা প্রকাশ করি আমরা অসাম্প্রদায়িক, আমরা মৌলবাদী চেতনাকে ধারণ করি না। আমরা সামাজিক ও মানবিক।”
আয়োজক কমিটির সভাপতি ড. মুহাম্মদ এমদাদুর রাশেদ বলেন, “এত সুন্দর কাজ করার পেছনে সম্পূর্𓆉𓃲ণ অবদান আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েদের। তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে আয়োজনকে সার্থক করে তুলতে। সঙ্গীতানুষ্ঠান, মঙ্গল শোভাযাত্রা, নাটিকা সবকিছু থাকছে এবারের পহেলা বৈশাখে।”
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, “বঙ্গাব্দের ইতিহাস বাঙালিജর ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত। আর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি দেশীয় সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করে চলছে। তারই কার্যক্রম হিসেবে আমরা খুব করে চেয়েছিলাম নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে। আমাদের এই আয়োজনের মূলমন্ত্র—অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা।”