জাবির ভর্তিতে কোটার থাবা, শতকরা ১১ জনই কোটায়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৪, ০২:০৫ পিএম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) মোট আসন সংখ্যার বড় একটি অংশ বিভিন্ন কোটায় ভর্তি হয়ে থাকে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে শতকরা ১১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন কোটায়।🅘 এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবি ঘিরে বৈষম্যবরোধী ছাত্র আন্দোলন হয়েছে। বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়েছেন সাঈদ-মুগ্ধরা। ঝরে গেছে অনেক প্রাণ। এ সময়ে কোটার ক্ষেত্রে এ অবস্থা কাম্য হতꦑে পারে না। অথচ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও জোরালো আন্দোলন হয়েছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে।

বিশ্ববিদ্যালয় তথ্য বলছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ඣ১৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন কোটায় ভর্তি হয়েছেন ২২৪ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১০১ জন, পোষ্য কোটায়  ৫৩ জন, নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩০ জন এবং উপাচার্য কোটায় ২০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। ভিন্নভাবে সক্ষম কোটায় ৭ জন করে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া খেলোয়াড় কোটায় ৬ জন ছেলে বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হন।

বিভাগ ভিত্তিক ভর্তির তথ্যমꦓতে, কলা ও মানবিকী অনুষদে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন কোটায় ভর্তি হয়েছেন। এ অনুষদে কোটায় ভর্তি হয়েছেন ৮৫ জন। ইতিহাস ও দর্শন বিভাগে সর্বোচ্চ ১৭ জন করে শিক্ষার্থী কোটায় ভর্তি হয়েছেন। সবচেয়ে কম চারুকলা এবং নাট্য ও নাট্যতত্ত্ব বিভ๊াগে ৩ জন করে। জীববিজ্ঞান অনুষদে বিভিন্ন কোটায় ৪৮ জন ভর্তি হয়েছেন। এ অনুষদের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ এবং পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেট্রিক্স বিভাগে ৯ জন করে কোটায় ভর্তি হয়েছে।

গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদে ৩২ জন শিক্ষার্থী কোটায় ভর্তি হয়েছে। এ অনুষদে ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি হন। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ২০ জন শিক্ষার্থী কো🐬টায় ভর্তি হয়েছেন। সমাজবিজ্ঞান অনুষদে ♌সবচেয়ে কম কোটায় ভর্তি হয়েছেন। এ অনুষদে ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে ১৭ জন কোটায় ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া আইন অনুষদে ৪ জন, ইনস্টিটিউট অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ৬ জন, ইস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজিতে ২ জন এবং তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটে ১০ জন কোটায় ভর্তি হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনির হোসেন তালুকদার বলেন, “বাংলাদেশের অন্যতমꩲ শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের প্রথম শ্রেণির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের কোটাপদ্ধতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি চরম বৈষম্যের ও অন্যায়ের বহিঃপ্রকাশ। মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন আমরা দেখছি তার পথে অন্তরায় এই ধরনের কোটা পদ্ধতি। প্রয়োজনীয় কোটা ছাড়া বাকি সকল কোটা সংস্কার করা বা ক্ষেত্র বিশেষে বাতিল করা সম্ꩲভব হলে সবচেয়ে ভালো। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে এই বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে মেধাভিত্তিক দেশ বিনির্মাণে অগ্রসর হতে।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ইনস্টিটিউটের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “জুলাই বিপ্লবের শুরুটা হয়েছিলো বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধেই। আমাদের আন্দোলনের শুরু থেকে আমাদের অন্যতম স্লোগান ছিলো 
কোটা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক। কিন্তু চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি বাতিল হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে এখনো কোটা পদ্ধতি রয়েছ🗹ে ব্যাপকভাবে। আমরা ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষাগুলোতেও কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিসি কোটা বাতিল, মুক্তিযোদ্ধার নাতি নাত🎶নি কোটা বাতিল এবং পোষ্য কোটার যৌক্তিক সংস্কার। ভর্তির ক্ষেত্রেই যদি মেধার মূল্যায়ন করা না হয় তাহলে মেধাভিত্তিক দেশ গঠনের স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন ব্যাচের ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাব্য ডেট দেওয়া হয়েছে। এর আগেই যদি কোটা পদ্ধতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উপযুক্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না পারে, তাহলে আমার কিছুতেই আগের পদ্ধতি অনুসরণ করে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে দেবো না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করলেও প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান𝓡ের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রশাসন আসায় তারা ভর্তি কোটা সংস্কারের দাবিতে ফের সরব হয়েছ✨েন। গত ১ ডিসেম্বর তারা এ দাবিতে মানববন্ধনও করেন।