৩ লক্ষাধিক গবাদিপশু-হাঁসমুরগির মৃত্যু

নোয়াখালী প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪, ০১:০০ পিএম

স্রোতে ভেসে ও পানিতে ডু🌳বে শুধু নোয়াখালীতে মৃত্যু হয়েছে ৩ লক্ষাধিক গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগির। এতে ক্ষয়ඣক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৪ কোটি টাকা। জেলার আটটি উপজেলা ও সাতটি পৌর এলাকার বানভাসিদের এসব লোকসান হয়েছে। নোয়াখালী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবুল কালাম আজাদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

সম্প্রতি দেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে ভয়াবহ প্🐻রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল, অতিবর্ষণ ও জোয়ারের পানি একাকার হয়ে তলিয়ে যায় নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলার অধিকাংশ এলাকা। গত ৯ আগস্ট থেকে নোয়াখালীর হাতিয়া ছাড়া অপর আট উপজেলা বন্যাকবলিত হয়। বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, সুবর্ণচর, সদর, চাটখিল, সোনাইমুড়ী ও সেনবাগের রাস্তাঘাট ও বসতবাড়িও তলিয়ে যায়। গোয়ালঘরগুলোও ছিল ৩ থেকে ৪ ফুট পানির নিচে। এতে মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুপাখির জীবনে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। পানি কমা অব্যাহত থ𝐆াকলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জলাবদ্ধ ছিল সংশ্লিষ্ট আট উপজেলার ৭৫ শতাংশ এলাকা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নোয়াখালীতে গবাদি পশুর খামার ছিল ২ হাজার ৬২১টি। এগুলোতে গবাদি পশু ছিল ৯৮ হাজার ২৪৪টি। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ও আক্রান্ত গরুর সংখ্যা ৬৯ হাজার ৩৭৭টি, মহিষ ৩ হাজার ৭০১টি, ভেড়া ৭ হাজার ১১৭টি, ছাগল ২৭ হাজার ৪০৭ট♊ি। তবে মৃত্যুতে শীর্ষে রয়েছে ভেড়া, ৪২৭টি। এ ছাড়া গরু মারা গেছে ১৬৭টি, মহিষ ৭৯টি ও ছাগল ২০৯টি। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। হাঁস-মুরগির খামার ছিল ১ হাজার ৫১১টি। এতে হাঁস-মুরগি ছিল ৮ লাখ ৪ হাজার ৫৮৩টি। এর মধ্যে মুরগি মারা যায় ২ লাখ ৯২ হাজার ৯৩০টি। হাঁস মারা গেছে ৪ হাজার ৯৮৫টি। মোট ক্ষতি হ🍬য়েছে ২৪ কোটি ৬৪ লাখ ৩০ হাজার টাকার। এর বাইরে বিভিন্ন গৃহস্তের গুরু, ছাগল, হাঁস, মুরগিসহ গবাদি পশুপাখির মৃত্যুতে ক্ষতি হয়েছে আরও সাড়ে ১০ কোটি টাকার। নষ্ট হয়ে যাওয়া পশুপাখির দানাদার খাদ্যের পরিমাণ ৫৯৯ দশমিক ৬৭ টন। ক্ষতি ১ কোটি ৫৫ লাখ ৩ হাজার টাকা। বিনষ্ট খড়ের পরিমাণ ২ হাজার ৪৮৯ টন, যার মূল্য ১ কোটি ৮৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা। নষ্ট ঘাসের পরিমাণ ৩ হাজার ২৯৭ টন, ক্ষতি ১  কোটি ৯৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।

বেগমগঞ্জের একলাসপুর গ্রামের নারী উদ্যোক্তা নাজমা আক্তার বলেন, তাঁর খামারে অর্ধশতাধিক গরু ছিল। সেগুলো ৩ ফুট পানির নিচে ছিল অন্তত ২০ দিন। এতে ১০টি গরু মারা গেছে, ক্ষতি হয়েছে ১০ লক্ষাধিক টাকার। ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে খামারটি পর💛িচালনা করায় সেই টাকা পরিশোধ করা 💯তাঁর জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সরকারি সহায়তা না পেলে খামারটি বন্ধ হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন তিনি।

সদর উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের অপর নারী উদ্যোক্তা বিবি রহিমা বেবী বলে🧸ন, ১৯৯৩ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালনসহ প্রাথমিক চিকিৎসা ও মৎস্য চাষবিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়ে গবাদি পশু ও মাছ চাষ শুরু করেন। বন্যার আগে ৪০ একর🀅 জমির ওপর ১০টি ঘের ও ৪টি পুকুরে মাছ চাষ এবং ৬৬০টি হাঁস, ১১টি গরু, ১ হাজার ফাওমি মুরগির খামার ছিল। মাছ ও হাঁস-মুরগির খামার থেকে বার্ষিক আয় ছিল ১ কোটি টাকার বেশি। বন্যায় পুকুরের সব মাছ, হাঁস, মুরগি ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে সোয়া কোটি টাকার বেশি।

তিনি বলেন, ~আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে মাছ বিক্রি করে জনতা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও ১০টি এღনজিও থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা যে ঋণ নিয়েছিলাম, তা পরিশোধ করার এবং মেয়ের বিয়ে দেওয়ার আশা করেছিলাম। কিন্তু সর্বনাশা বন্যার পানি আমার সব আশ🍌া ধুয়েমুছে নিয়ে গেছে। আমি এখন ব্যাংক ও এনজিওর ঋণের কিস্তি কীভাবে পরিশোধ করব– ভেবে পাচ্ছি না।"

সুবর্ণচরের আল আমিন বাজার এলাকার গরু খামারি মামুন চৌধুরী জানান, তার খামারে শতাধিক গরু ও অর্ধশত ছাগল ছিল। এর মধ্যে এক𓃲টি গরু ও চারটি ছাগল মারা গেছে।

সোনাইমুড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শুভ সূত্🌸রধর বলেন, বানে সোনাইমুড়ীর অন🍃েক খামারে পানি ঢুকেছে। এতে ২২টি ছাগল, ৫টি গরু ও কয়েক হাজার মুরগি মারা গেছে।

ডা. আবুল কালাম বলেন, প্রাথমিকভাবে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৪ কোটি☂ টাকা। এখনও অনেক উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের খামা🌳রগুলো পানিতে ডুবে আছে, সেগুলো পরিদর্শন করাই সম্ভব হচ্ছে না। পানি কমার পর সব খামারের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। খামারিদের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। তাদের সহায়তা করার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর তালিকা করছে। অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দ পেলেই তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।