‘কত এমপি আইলো-গেল, কেউ কথা রাখল না’

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৪, ০৫:২৯ পিএম
বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে মানুষ। ছবি : প্রতিনিধি

‘কত এমপি আইলো গেল কেউ আমাগো কষ্ট বুঝল না। কেউ আর কথাও রাখল না। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এমপি হইলো কিন্তু আমরা সেতু পাইলাম না। তারপর শওকত মোমেন শাহজাহান এমপি হইলো, তার ছেলে অনুপম শাহজাহান জয় হইলো সেও কথা রাখে নাই। আবার জোয়াহের এমপি হইছিল কথা দিছিল সেও কথা রাখল না, এখন আবার জয় এমপি হয়েছে। এখন কী আমরা সেতু পামু। ভোট নেওয়ার সময় সবাইꦦ অনেক কথা দেয় কিন্তু কোনো কাম করে না। আমাদের জন্মের পর থেꦫকেই এই নদী দেখতাছি, কোনো সেতু হয় নাই।’

এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করে কথাগুলো বলছি🌱লেন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাঙ্গালীছেও গ্রামের কুলসুম বেগম (৫৩)।

নদীর এপার বাসাইল ওপারে সখীপুর। দুই পারের মানুষের মধ্যে গভীর সম্পর্ক। একই সংসদীয় আসন, শিক্ষা-দীক্ষা, বাজার-ঘাট, কেনাকাটাসহ সবই হয় একসঙ্গে। তবুও সারাজীবন তারা দুই পারের বাসিন্দা। টাঙ্গাইলের বাসাইল ও সখীপুর উপজেলাকে বিভক্তকার🅺ী বংশাই নদী। এ📖 নদীর ওপর সেতু নির্মাণ না হওয়ায় যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ দুই উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষকে। একটি মাত্র সেতুর অভাবে এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসেনি এখনো।

[85219]

জানা যায়, বাসাইল ও সখীপুর উ൲পজেলার বুক বয়ে গেছে বংশাই নদী। বাসাইল উপজেলার কাউলজানী ইউনিয়নের সুন্না বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এ নদীর ওপর কোন সেতু না থাকায় যুগ যুগ ধরে ভোগান্তির মধ্যে জীবনযাপন করছেন দুপাড়ের মানুষ। উপজেলার উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত সুন্না বাজার ঘেষে বংশাই নদীর উপর সখীপুর-বাসাইল সংযোগ সেতু নির্মাণ হলে দুই উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

শুকনো মৌসুমে বℱাঁশের সাঁকো আর বর্ষা মৌসুমে একܫটি নৌকাই পারাপারের একমাত্র ভরসা এলাকাবাসীর। এছাড়া একটি হাট, একটি আলিম মাদ্রাসা, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল থাকায় প্রতিনিয়ত চলাচল করতে হয় দুই উপজেলার বাসিন্দাদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, সুন্না বাজার ঘেঁষে বংশাই নদীর ওপর সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে মানুষজন। প্রতিদিন শিক্ষার্থীসহ বাসাইল-সখীপুরের হাজার হাজার জনসাধারণ ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন। হঠাৎ করে কেউ অসুস্থ হলে রোগী বহনের কোনো যানবাহন পারাপারেরও ব্যবস্থা নেই। স𓆏খীপুর উপজেলার কাঙ্গালীছেও, দাঁড়িয়াপুর, যাদবপুর, বেড়বাড়ী, প্রতিমা বংকী, শꩵোলাপ্রতিমা, বোয়ালী, দেওবাড়ী, লাঙ্গুলিয়া, চাকলাপাড়ার গ্রামবাসীসহ উপজেলার পশ্চিম অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন। এছাড়াও বাসাইল উপজেলার সুন্না, গিলাবাড়ী, কল্যানপুর, কলিয়া, কাউলজানীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ ওই সড়ক দিয়ে পার্শ্ববতী সখীপুর উপজেলায় যাতায়াত করেন।

শিক্ষার্থী শিহাব শিಌকদার বলেন, “বর্ষা মৌসুমে আমাদের নৌকা দিয়ে পার হতে হয়। শুকনো মৌসুমে নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে ভয়ে🐻 ভয়ে পার হতে হয়। একটি ব্রিজ হলে আর কোনো ভয় থাকবে না, সময়ও কম লাগবে। সবধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে। সরকারের কাছে দাবি এখানে যেন একটা ব্রিজ করে দেয়।”  

[85042]

মাজেদুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, “বর্ষা মৌসুমে বাঁশের 𝔉সাঁকো ডুবে যায়। তখন নৌকা দিয়ে আমাদের পারাপার হতꦅে হয়। প্রতিদিন মোটরসাইকেল এপারে রেখে ওপারে যাই। এই ভোগান্তি কবে শেষ হবে জানি না। সরকার দেশের কত উন্নয়ন করতেছে। যদি আমাদের দিকে একটু নজর দিত তাহলে আর দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।”

প্রতিদিন সুন্না বাজারে ঝাল মুড়ি বেক্রা করেন কাঙ্গালীছেও গ্রামের আরফা🎐ন মিয়া। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “আমি প্রতিদিন সুন্না ব🧸াজারে এসে ঝাল মুড়ি বিক্রি করি। ঝুঁকি নিয়ে শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো আর বর্ষা মৌসুমে নৌকায় চড়ে বাজারে আসি। আমরা খুব কষ্টে আছি। কত এমপি ও চেয়ারম্যান আইলো গেল কেউ আমাদের কষ্ট বুঝল না। সরকারের কাছে দাবি আমাদের একটি ব্রিজ করে দেওয়া হোক।”

কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, “আমি প্রতিদিন সুন্না বাজারে সবজি বিক্রি করি🎃। সময় মতো নৌকা না পেলে বাজারে যেতে বেশি সময় লাগে। যদি এখানে ব্রিজ হয় আমরা কৃষিপণ্য নিয়ে যথা সময়ে বাজারে যেতে পারব।”

এ বিষয়ে বাসাইল উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দু꧅ল জলিল সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ওই জায়গায় একটি ব্রিজ তৈরি হলে বাসাইল ও সখীপুর দুই উপজেলার মধ্যে সুন্দর যোগাযোগব্যবস্থা তৈরি হবে। বর্তমান এমপি যখন এর আগে এমপি ছিলেন তখন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। শিগগিরই একটি পরিকল্পনা দাখিল করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হবে।”

বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বর্তমান এমপি অনুপম শাহজাহান জয় একটি ব্রিজের অনুমোদন ☂করিয়েছেন। সবধর♐নের প্রক্রিয়া শেষে এক-দেড় বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরু হবে।”