তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি♛ বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দী দুর্গম চরাঞ্চলের বন্যাদুর্গতরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন । তীব্র হয়ে উঠছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। বন্যাকবলিত এলাকার কাঁচা-পাকা স🍌ড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
লালমনিরহাট
ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার পানিবন্দী মানুষে🐭র🧜 ভোগান্তি বেড়েছে। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য তিস্তা ব্যারাজের সব কটি জলকপাট খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (২১ জুন) দুপুর ১২টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ ৫২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০), যা বিপৎসীমার দশমিক ১০ সেন্টিমিটার ওপ🏅র দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি (৫২ দশমিক ৬০) বিপৎসীমা পর্যন্ত অবস্থান করছিল।
এর আগে সোমবার (২০ জুন) সকাল ৬টা থেকে ৯টা🐻 পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর দুপুর ১২টায় পানি 🎐বেড়ে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
তিস্তা পানি বৃদ্ধিতে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ ﷺসুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী,﷽ কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা,পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীতীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকায় এখনো প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী রয়েছেন। এদিকে অব্যাহত বৃষ্টির পানিতে নিম্নাঞ্চলেও কয়েক শ পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর ও ভবন নির্মাণ করে পানির গতিপথ রোধ এবং মাছের খামার ও ডোবার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল জানান, রোববার রাত থেকে তিস্তার পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়ে অত্র ইউনিয়নের দুই হাজার পর🎃িবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দী প্রতিটি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, উজানের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিস্তা ব্য🐲ারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার সমান অবস্থান করে। পরে🌺 পানি বেড়ে দুপুর ১২টা থেকে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, জেলায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ১৫🥃০ মেট্র🔥িক টন জিআর চাল এবং শিশুখাদ্য, গোখাদ্য ও শুকনো খাবার বিতরণের জন্য সর্বমোট ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানিবন্দী হয়ে আছে প্রায় দেড় লাখ মা🌊নুষ। এ অবস্থায় বিশেষ করে চরম দুর্ভোগে পড়েছে🐓 দুর্গম চরাঞ্চলের বন্যাকবলিত মানুষ।
চুলা জ্বালাতে না পඣারায় এবং টিউবওয়েল তলিয়ে থাকায় তীব্র হয়ে উঠছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। অন্যদিকে টানা বৃষ্টিꦅ ও উজানের পানিতে গোখাদ্য নষ্ট হয়ে গেছে। গবাদিপশুর খাদ্য সংকট নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষজন।
বন্যাকবলিত এলাকার ক♉াঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। সদর উপজেলা𓆉র যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের শাহাজালাল বলেন, “হামার এই চরের সোগগুলা বাড়ি অর্ধেকেরও বেশি তলে গেইছে। বাকি পরিবার উচুঁ জায়গায় চলে গেছে। হমরা না যায়া পরিবার নিয়া নৌকায় ও ঘরের ভিতর উঁচু করা মাচানে দিন-রাত পার করছি।”
সরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও কার্যক্রম চলছে। জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নে ৪০০ শুকনা খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মন্জু। 𓄧মানবিক বাংলাদেশ সোসাইটি কুড়িগ্রাম শাখার পক্ষ থেকে সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর ভগবতীপুর এলাকায় ৩০০ পরিবারের মধ্যে এক কার্টন করে বিস্কুট বিতরণ করা 💙হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাধ্যমত বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, “আমার ইউনিয়নে যে পরিমাণ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে, তাতে বরাদ্দের ꧃বাইরে💦 আরও সহযোগিতার প্রয়োজন হবে।”
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ৯ཧ উপজেলার বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ৩৩৮ মেট্রি𒀰ক টন চাল, ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকার শিশুখাদ্য ও ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা গোখাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পান꧃ি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন জানান, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
জামালপুর
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও শাখা নদীগুলোর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে দুর্ভোগ ও যোগাযোꦆগ বিচ্ছিন্ন হ༒চ্ছে বিভিন্ন সড়ক।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি মাপক মো. আব্দুল মান্নান জানান, যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়💝ে বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে জেলার ৬টি উপজেলার ৩২টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত 𒀰হয়ে পড়েছে, পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন ৭০ হাজার মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ১২০০ হেক্টর ফসলি জমি। এদিকে দুর্গতদের জন্য ৩৫০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
পানিবৃদ্ধিতে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস 👍চেয়ারমﷺ্যান, হিসাবরক্ষণ অফিস, পিআইও, প্রকৌশল অফিস, মৎস্য, সমবায়, সমাজসেবা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক, তথ্য আপা, পরিসংখ্যান, পল্লী উন্নয়ন, একটি বাড়ি একটি খামার ও খাদ্য অফিসসহ অন্য অফিসের সামনে বন্যার পানি উঠে গেছে। এতে সেবাদাতা ও সেবাগ্রহীতাদের যাতায়াতে মারাত্মক অসুবিধা দেখা দিয়েছে।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুন্নাহার শেফা বলেন, “আমরা বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি, পানিবন্দী বা কারো খাদ্য-সঙ্কট হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। বিভিন্ন ইউনিয়নে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সঙ্গে যোগা🌟যোগ রাখা হচ্ছে, প্রতিদিন বন্যা পরিস্থিতির রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।”
যে꧟কোনো পরিস্থিতিতে প্রশাসন প্রস্তুত বলে তিনি জানান।
বন্যার পানি সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর থেকে ইসলামপুর উপজেলার আমতলা সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, সরিষাবাড়ী, মেলান্দহ ও 🌠মাদারগঞ্জ উপজেলার ৩২টি ইউনিয়নের দেড় শতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশের ফলে হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধির গতি কমে আসছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারিভাবে জেলার সাতটি উপজেলায় ৩৫০ মেট্রিক টন চাল ও ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছꦫে ৮০টি মেডিকেল টিম, ৪৬১টি আশ্রয়কেন্দ্র ও চার হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার।
নেত্রকোনা
নেত্রকোনায় বন্🅘যাকবলিত মানুষের মধ্যে ত্র💫াণ বিতরণ করেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ আলী খান খসরু।
সদর ও বারহাট্টা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্যাকবলিত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে প্রত𝕴িমন্༒ত্রী সহস্রাধিক মানুষের মধ্যে শুকনা খাবার প্যাকেট, খাবার পানি, খাবার স্যালাইন ও নগদ অর্থ বিতরণ করেন।
এ সময় জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপ🍷স্থিত ছিলেন।