‘শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ... আমাদের দাদাভাই’

আহসান হাবীব প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৩, ১১:৩৫ এএম

সানগ্লাস পরা এক লোক হঠাৎ রাস্তায় আমাকে থামাল।
-আপনি হুমায়ূন আহমেদের ভাই না?
-হ্যাঁ।
-আপনাকে একটা কথা জানাতে চাই। 
-কী কথা?
-আমি তাকে দুচোখে দেখতে ꦦপারি না। বলেই সে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাওয়া। আমি আর কি বলব। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে সেই লোকটাকে আবার দেখলাম একদিন, একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে তার সানগ্লাস খুলে রুমাল দিয়ে মুচছে। আমি খেয়াল করলাম তার একটা চোখ নষ্ট। মানে সে “ওয়ান আইড ম্যান”। বেচারা! হুমায়ুন আহমেদকে দু চোখে দেখবে কিভাবে। খুবই স্বাভাবিক।

আরেকবার আমি একটা টং দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ ঝড়ের বেগে এক লোক এসে আমার পাশে বসল। সেই একই প্রশ্ন, 
-আপনি হুমায়ূন আহমেদের ভাই না?
-হ্যাঁ।
-কিছু যদি মনে না করেন একটা কথা বলতে চাই।
-বলুন।
-আমি, আমি হুমায়ূন আহমেদকে হেট করি, কারণ তিনি বাংলা সাহিত্যকে ধ্বংস করেছেন।
-খুব স্বাভাবিক, সবাই যে হুমায়ূন আহমেদকে পছন্দ করবে তার কোনো কারণ নেই, তার হেটার থাকতেই পারে। তবে আপনি একটা কাজ করতে পারেন। আমি বলি।
-কী কাজ?
-হুমায়ূন হেটারস অ্যাসোসিয়েশন বলে একটি সংঘ নাকি আছে।💫 আপনি তার সভাপতি পদে জয়েন করেন। শুনেছি ওই পোস্ꦑটটা এখনো খালি আছে। কী বলেন?

হঠাৎ আমাদের পেছনে হো হো করে কে যেন হেসে উঠল। আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি এক তরুণ হাসছে, সে নিশ্চয়ই আমাদের কথা-বার্তা শুনেছে। এবং মজা পেয়েছে। লোকটা একবার আমার দিকে একবার ওই তরুণের দিকে তাকাল তারপর... ঝড়ের বেগে এসেছিল, এবার উল্কার বেগে ꦇছুটে 𝔍বেরিয়ে গেল।

আজ হুমায়ূন ꦕআহমেদের জন্মদিনে তার হেটারদের নিয়ে কথা বলছি কেন। বরং একটা সুন্দর ঘটনা বলি। বাবর রোডের বাসার চিলেকোঠার ঘরটা ছিল আমার। সেখানে পড়াশুনা করতাম। বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদ সেখানে এসে সিগারেট খেত। সিগারেটের প♌্যাকেটটা ওখানেই থাকত। একদিন রাত বারটার দিকে এল। প্যাকেটের ভিতর তিনটা সিগারেট ছিল, একটা খেয়ে বাকি দুটো ছিঁড়ে ফেলল।

-কী করলে? আমি অবাক হয়ে বলি।
-আর সিগারেট খাব না। বলে সে গম্ভীর মুখে চলে গেল। রাত একটার দিকে আবার এল। আমি তখনও পড়ছি কারণ সামনে এসএসসি পরীক্ষা, রাত ২টা পর্যন্ত পড়ি। এত রাতে তাকে দেখে অবাক হলাম। সে ইতস্তত করে বলল
-ইয়ে শাহীন, এখন কি দোকান খোলা পাওয়া যাবে? একটা সিগারেট খেত༺ে পারলে... তার চেহারার অবস্থা দেখে মায়া লাগল। (আমার ডাক নাম শাহীন)

আমি বেরুলাম। জানি সব দোকান-পাট বন্ধ তারপরও যদি একটা দুটো দোকান খোলা পাওয়া যায়। সবচে কাছের দোকানটাই খো൩লা পাওয়া গেল। বললাম পাঁচটা ব্রিস্টল সিগারেট দেন 𝓰(সে তখন ব্রিস্টল সিগারেট খেত)।

-এত রাতেও দোকান খোলা যে? আমি জিজ্ঞেস করি।
-স্যার প্রতিদিন দুইবারে আমার কাছ থাইকা পাঁচটা পাঁচটা কইরা সিগারেট নেয়। আইজ নিল না দেইখাই দোকান খোলা র✨াখছিলাম। বলে সে হাসে।

আহা কত মানুষ তাকে ভালবাসত, এখনো বাসে হয়তো। কিছু হেটার হয়তো আছে, থাকুক। কে জানে একদিন তারাও হয়তো তাকে ღভালবাসবে... আর না বাসলেই বা কি। এমার্সনের একটা সুন্দর কথা আছে, “তোমরা আমাকে ঘৃণা করেছিলে বলেই বুঝতে পেরেছি ভালোবাসা কি গভীর...!”  

শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ... আমাদের দাদাভাই।