ঋতুপর্ণ ঘোষ: মধুর তোমার শেষ যে না পাই

অম্লান চক্রবর্ত্তী প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৩, ০৮:১২ পিএম

দ🉐িনটা ছিল বৃষ্টিভেজা। সকালে বেশ দেরি করেই উঠেছি। আনন্দবাজার সহযোগে চা পর্বও চলছে। হঠাৎ তামান্নার ফোন। ধরা গলা। মন্ট্রিয়𝄹ল থেকে জানালো, ‘অম্লান, ঋতুপর্ণ ঘোষ নেই?’ চমকে উঠে টিভি খুললাম। স্ক্রিন জুড়ে শায়িত বাংলার সভ্যতা। 

 

আমাদের প্রজন্ম দেশভাগ দেখেনি। এই রাজ্যে দাঙ্গাও আমাদের তেমন সময় হয় নি। খরা-বন্যা-দূর্ভিক্ষ আমাদের সময়ে আমরা দেখিনি। অতিমারী দেখেছি বটে, তা শেষ দুই বছর। হয়ত আমরা প্রিভিলেজড, কিন্তু সমস্যামুক্ত কি? মানসিক দ্বন্দ্বে আক্রান্ত প্রজন্ম আমরা। সম্পর্কের দ্বন্দ্ব, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, আইডেনটিটির দ্বন্দ্ব এবং সর্বোপরি বড় কথা যৌন অভিমুখের দ্বন্দ্বে মিলেনিয়াল প্রজন্ম বারবার আক্রান্ত হচ্ছে। বৈবাহিক ধর্ষণ সত্ত্বেও সুখী দাম্পত্যের অভিনয় চলছে সমাজে। তার খবর কে দেবে?
 

সেই খবরের কথাকার ঋতুপর্ণ ঘোষ। ঋতু মানুষের মন জানতেন এবং বুঝতেন। বাংলা ভাষায় হৃদপিণ্ড এবং হৃদয় দুটি আলাদা শব্দ আছে। হৃদয়েরও সবথেকে নরম জগত হল মন। আর এই মনোজগতের অনুপুঙ্খের আখ্যানকার ঋতুপর্ণ।  
সরাসরি কয়েকটি ছবির বিষয়ে আসি। ‘তিতলি’ দিয়ে শুরু করি। গল্পটি মা-মেয়ের দ্বন্দ্বের ভিত্তিতে নির্মিত। ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমি বহু বান্ধবী এবং মহিলা সহকর্মীর মধ্যে দেখেছি যেখানে মা-র প্রেমিক বা প্রাক্তন প্রেমিককে মেয়েরও পছন্দ। এবং রীতিমতো সেই ইস্যুতে মা-মেয়ের দ্বন্দ্ব এবং মুখ দেখাদেখি বন্ধ। ভারতীয় “এ মা ছি ছি” সমাজ চিরাচরিত মিডিওক্রিটির চোখে দেখবে তাই স্বাভাবিক।
 

কিন্তু ঋতুপর্ণ কন্টেন্ট হিসাবে বেছে নিলেন এই বিষয়টিকে। জেনারেশান গ্যাপ বোঝাতে ঋতুপর্ণ বেছে নিলেন অন্দরসজ্জা। মা-বাপির ঘর রাবীন্দ্রিক। মেয়ের ঘর আধুনিক হলেও বেশ গোছ আছে। রূপোলী পর্দার নায়কের পোস্টার ওয়ার্ডরোবে। ছবির শুরুতে মা-মেয়ের বন্ধুতার নিদর্শন হিসাবে মায়ের জন্য মেয়ে ‘আরাধনা’ ছবির গানের প্রিল্যুড বাজাচ্ছে তা ও রাখা হল। পরবর্তীকালে ঘটনা এবং দ্বন্দ্ব শুরুর পর, ছবির সংলাপে ঋতুপর্ণ রাখলেন মা-মেয়ের ফেনসিং ম্যাচ। ‘বাপি জানে?’ র সঙ্গে ‘পুরোনো সম্পর্ক রিনিউ’ এর মতো সংলাপ এবং প্রত্যুত্তরে ‘তুমি চাইলে তোমার বাপিকে কাল ব্রেকফাস্ট টেবিলেই জানাতে পারি। বা এখন ঘুম থেকে তুলেও জানাতে আপত্তি নেই। ডাকি?’ র মতো পাল্টা উত্তর। অবশেষে কোনঠাসা হবার পর মায়ের যুক্তি ‘আমাদের বিয়ে হলে তুমি ওঁর মেয়ে হতে’। এরপরেই ঝড়। জানালা বন্ধ করার মুহুর্তে রাতের ♑পোশাক সরে যাওয়া মাকে দেখে মেয়ের যৌন ঈর্ষা ও হীনমন্যতা। এবং শেষ দৃশ্যে প্রেমিকের বিয়ের খবর ফিল্ম ফেয়ার ম্যাগাজিনে দেখে, কিনে এনে মাকে চমকানোর চেষ্টা মেয়ের। উত্তরে মেয়েকে মা দেখান তাঁর কাছে একই খবর আসা প্রেমিকের চিঠি। শেষমেশ ঋতুপর্ণ জিতিয়ে দেন মাকেই। এটিই সনাতন। নচেৎ🍃 উগ্র আধুনিক হত, নান্দনিক হত না।

 

মা-মেয়ের আরেক দ্বন্দ্ব ছিল ‘উনিশে এপ্রিল’। ছবিটির সংলাপ বাংলা চলচ্চিত্রের সম্পদ। মনস্তত্বের গভীর থেকে গভীরতর গলি বেয়ে চলা অভিমান মা-মেয়ের মধ্যে দাবার বোর্ডে শেষ দশটি চালের টেনশন এনে দেয়। 
 

‘উৎসব’ ছবিতে ঋতুপর্ণ দেখালেন ইনসেস্টুয়াল রিলেশনশিপ। আমার এক বান্ধবী তার পিসতুতো ভাইয়ের প্রেমে মজে ছিল। একান্নবর্তী পরিবারে এ এক অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা। অথচ অকথিত একটি অধ্যায়। কেচ্ছা ট্যাগ করে যাকে দমন করা হয় শাসন এবং ত্রাসনের মাধ্যমে। ছবিটি নির্মানের ক্ষেত্রে ঋতুপর্ণ যৌনতার পথের বদলে বেছে নিলেন সংলাপের রাস্তা। পুরো ঘটনাটি বনেদী, পড়তি পরিবারের দূর্গাপুজো এবং বাড়ি বিক্রির গল্পের আধারে। সাবেকীয়ানার মাঝে আধুনিক মনস্তত্বের ছোঁয়া। কিন্তু পরিণামে বঙ্কিমীয় পন্থায় ‘কৈশোরের প্রেমে অভিশাপ লাগে’।
 

‘বিহাইন্ড দ্য সিন’ ঘটনাবলীকে মূল গল্পরূপে পরিবেশন জাতীয় খুব বেশি কাজ ভারতে হয় না। ‘আকালের সন্ধানে’ অবশ্য ছিল। ঐ বিষয়টি কিছুটা আব্বুলিশ। ঋতুপর্ণ এই বিষয়ে বানালেন দুটো ছবি - ‘আবহমান’ এবং ‘বাড়িওয়ালী’। প্রথম ছবি শুটিং চলাকালীন পরিচালকের প্রতি নবাগত নায়িকার মনে সৃষ্ট পূর্বরাগ এবং পরেরটি একটি বাড়িতে শুটিংয়ের সময় বাড়ির প্রৌঢা, যিনি বিয়ের রাতে বিধবা হন। এবং জমিদার শ্বশুরবাড়িতেই বৈধব্যকাল যাপন করেন। তাঁর সিঁথি আরও একবার লাল হয় শুটিংয়ের সময়। কিন্তু সেই শট ছবি থেকে বাদ যায়। শেষ দৃশ্যে নারী কন্ঠে ‘মনসামঙ্গল’-এর মরমী পাঠ পাথরকেও কাঁদিয়ে ছাড়ে।
 

এই প্রসঙ্গেই বলি, ছবিতে কবিতা ব্যবহার ঋতুপর্ণ ঘোষের ন্যায় আর কোনও বাঙালী পরিচালক পারেননি। ঘটকবাবুর ছবিতে কবিতার ব্যবহার নেই। রায় সাহেবও ‘চারুলতা’ বাদে কোনও ছবিতে কবিতা ব্যবহার করেছেন বলে মনে পড়ছেনা। ‘হীরক রাজার দেশে’ তে অবশ্য ছড়া ছিল কিছু। বরং তাঁরা আবহ সঙ্গীতে যন্ত্র ব্যবহার করেছেন। ঋতুপর্ণ এই প্যাটার্নটি বদলালেন। ‘দোসর’ ছবিতে দু’বার ব্যবহার করলেন সুজাতা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘তোমার ঠোঁট আমার ঠোঁট ছুঁল’ কবিতাটি। প্রথমটি পরকীয়ায়। নায়কের প্রেমিকার জন্য। তার পরেই দুর্ঘটনা। প্রেমিকার মৃত্যু। এরপর গোটা সিনেমা জুড়ে সংলাপের ঘাত-প্রতিঘাত। শেষ দৃশ্যে স্বামী-স্ত্রীর মিলনাত্মক দৃশ্যে যৌনতার পরিবর্তে একই কবিতা। স্বামী পরকীয়ায় লিপ্ত, শাশুড়ি পুত্রবধূ কাবেরীকে আশ্বাস দিচ্ছেন, যে কোনও সিদ্ধান্তে সঙ্গে থাকার। কিন্তু কাবেরীর মা শাঁসালো জামাইকে ‘সোনার আংটি বাঁকা হলেও তা সোনা’ অজুহাতে ক্লিনচিট দিচ্ছেন। আদতে ঋতুপর্ণ দেখিয়ে দেন, মধ্যবিত্ত বঙ্গসমাজের প্রতিটি সম্পর্কই ধান্দার।
 

এই সম্পর্কের জটিল বুনোটে মোড়া ছবি ‘দহন’। গুণ্ডার দ্বারা রোমিতার শ্লীলতাহানি এবং বৈবাহিক ধর্ষণকে এক নিক্তিতেই মাপেন ঋতুপর্ণ। সুচিত্রা ভট্টাচার্য্🧔যের গল্পে যে অসম্পূর্ণতা ছিল, তা থেকে ছবিটিকে স্বতন্ত্র করলেন ঋতু। বাঙালী পুরুষের আস্ফালন কেবল মাত্র মশারীর মধ্যে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন ঋতুপর্ণ। একই সঙ্গে শ্লীলতাহানী করা ছেলেটির হবু শাশুড়ির শাঁসালো জামাইয়ের প্রতি হ্যাংলামি এবং আত্মজাকে বলিদানে প্রস্তুত হতে দেওয়ার নির্দেশ। কিন্তু এই সব সম্পর্কই টিকে যায়। সমাজকে সুখী রেখে বৈবাহিক ধর্ষণও জায়েজ হয়ে যায় ভারতীয় সমাজে। কিন্তু সম্পর্ক ভেঙে যায় ঝিনুকের, যে শ্লীলতাহানি থেকে রোমিতাকে রক্ষা করে। আহা ঋতুপর্ণ, আপনি কি রন্ধ্রে-রন্ধ্রে চেনেন বাঙালীকে।

 

‘সবচরিত্র কাল্পনিক’ কবিতার মহোৎসব। কিন্তু এখানেও মন এবং মনন। রাধিকা কোনও দিন ইন্দ্রনীলের সঙ্গে বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। বরং ইন্দ্রনীলের বন্ধু শেখরের সঙ্গেই তার প্রণয়। ইন্দ্রনীলের মৃত্যুর পর আসল গুগলি। রাধিকা চিৎকার করে কেঁদে ওঠে যখন জানে ইন্দ্রনীল তার লেখা কবিতার অনুবাদ করেছিল। এবং ইন্দ্রনীলের প্রতি প্রথম শ্রদ্ধাবনত হয়। মনের এই খুঁটিনাটির সন্ধান কিভাবে পান ঋতুপর্ণ তা এক বিস্ময়। 
 

ঋতুপর্ণর বিনোদিনী শেষ দৃশ্যে বারাণসীর পিঞ্জরে নীচ বিহারীকে অবলম্বন ভাবে না। বরং বিনোদিনীকে ঋতুপর্ণ মুক্তা বিহঙ্গীর মতো নিজের পথে যেতে দেন। তাঁর ছবির পটুয়া “রাতের দেয়ালে জাগা বিরহী তারা” যে দূর্গা ঠাকুরের ঊরু গঠনের সময় গাঁয়ে ফেলে আসা স্ত্রীর ঊরুসন্ধিকে কল্পনা করে। 
 

বাংলা ছবিতে রবীন্দ্রগানের ব্যবহার ঋতুপর্ণ ঘোষ যা করেছেন তা অন্য কোনও সত্যজিৎ রায় এবং ঋত্বিক ঘটক ব্যতীত অন্য পরিচালকদের কল্পনার অতীত। তরুণ মজুমদার করে থাকলেও তা সাংঘাতিক রসোত্তীর্ণ আমার মনে হয়নি। ভুলও হতে পারি। কিন্তু হে প্রিয় পাঠক, একবার ভাবুন, ‘নৌকাডুবি’ ছবির শুরুতে ‘🌠খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি’ গানের ইন্টারল্যুডে সমবেত কন্ঠে  ‘ভেবেছিনু মনে মনে দুরে দুরে থাকি’র অভাবনীয় প্রয়োগ বা ‘আবহমান’ ছবির ‘গহন কুসুম কুঞ্জ মাঝে’ ব্যবহার। ‘উৎসব’ ছবিতে খালি গলায় ‘অমল ধবল পালে লেগেছে’ এবং অবশ্যই ‘দ্য লাস্ট লিয়ার’ ছবির সূচনায় ‘আজ ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার’ একদম মিয়াঁ কি মল্লার রাগে আলাপ সহ।

 

পদাবলী সাহিত্যের প্রতি ঋতুপর্ণ অনুভব করতেন নাড়ির টান। সেই কারণেই শিখে নিলেন ব্রজবুলি ভাষা। অব্যর্থ প্রয়োগ ‘রেনকোট’ ছবিতে ‘মথুরা নগরপতি’। হামলা ছবিতে ব্রজ ভাষা ইতিপূর্বে কদাপি ব্যবহার হয়েছে বলে মনে পড়ে না।
 

বাংলা সিরিয়াল বহুদিন ধরেই মিডিওকার এবং করুণার উদ্রেক করে। ঋতুপর্ণ ঘোষ সেই মরা বাজারে আনলেন বসন্ত। এবং সেই ‘মুক্ত হাওয়ার বসন্তে’ থাকলেন রবীন্দ্রনাথ। তবে দেবজ্ঞানে পুজো করার বদলে ভালোবাসার রবীন্দ্রনাথকে প্রতিষ্ঠা করলেন। এও এক মৃন্ময়কে প্রাণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চিন্ময় রূপ দান। ‘ওহে দয়াময় নিখিল আশ্রয়’ এবং ‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে’ যে একই সঙ্গে গাওয়া যায়, অথবা ‘জয় করে তবু ভয় কেন তোর যায় না’ র অন্তরা যে রক সঙ্গীতের আঙ্গিকে গাওয়া যায় তা ঋতুপর্ণ দেখালেন। ‘গানের ওপারে’ শিক্ষিত বাঙালীকে আবার সিরিয়ালমুখো করল। কিন্তু বাজারের দাঁত-নখ কোয়ালিটির বদলে কোয়ান্টিটি পছন্দ করে। ফলত সরে যেতে হল ঋতুপর্ণকে। সংলাপের মান পড়ল, গানে এক্সপেরিমেন্ট বন্ধ হল। হল বাজারী। পাতি প্রেমকাহিনীতে অকালেই পতিত হল বাংলা সিরিয়ালে এ শতাব্দীর সন্ধ্যেতারা। 
বাংলায় টক শো আগে ছিল না। অথচ জাতীয় স্তরে সিমি গারেওয়ালের ‘রঁদেভু’, বা করণ জোহরের ‘কফি উ꧂ইথ করণ’ তখন দর্শকের মন জয় করছে। কিন্তু বাংলায় কে করবেন সেই কাজ? কার করার ক্ষমতা আছে? একজনই - ঋতুপর্ণ ঘোষ। ‘এবং ঋতুপর্ণ’ ও ‘ঘোষ কোম্পানী’। যাঁরা নিয়মিত দেখতেন তাঁরা জানেন। অন্দরসজ্জা, 🌃পোষাক ছেড়েই দিলাম। কিন্তু প্রশ্নগুলি? সেই প্রশ্নের উচ্চারণ? এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ? আজও অবসরে শুনি, দেখি, জানি। পরের প্রজন্মও জানবে।

 

শেষে একটি ঘটনার কথা বলি। জয় গোস্বামীর সাম্প্রতিক একটি গদ্যে পড়েছিলাম, ঋতুপর্ণ নিজের অবসর সময় যাপন করতেন রবীন্দ্রনাথের কবিতার ইংরিজি তর্জমা করে। সে কবিতা প্রকাশ করতেন না। নিজের ডাইরিতে থাকত পরম যত্নে। কিশোরী যেমন নিভৃত যতনে প্রেয়সের নাম মনের মন্দিরে লিখে রাখে। রবীন্দ্রনাথের প্রতি ভালোবাসাই শেষ বয়সে ঋতুপর্ণকে দিয়ে বানিয়ে নেয় ‘জীবনস্মৃতি’। ছবির মধ্যে কোথাও যেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মিশে যান ঋতুপর্ণ। ছবির শুরুতেই শান্তিনিকেতনের রাস্তায় রাখাল তাড়ানো বৃষ্টির মধ্য দিয়ে গোটা ছবি প্রবেশ করে রবীন্দ্রনাথের শরীরে। আত্মার খোঁজে। গোটা ছবিতে সেই আত্মার সাথেই তাঁর সংলাপ।  
রবীন্দ্রনাথ ‘ক্ল্যাসিকিয়ানা’ শব্দটি সৃষ্টি করেন। শব্দের প্রয়োগ দেখে ধারণা হয়, চিরন্তনী নান্দনিকতা যা প্রাচীন রসে সিক্ত, গোটা বিশ্বের রূপ-রসে জারিত এবং সমকালের পাত্রে পরিবেশিত। অর্থাৎ একদম  রবীন্দ্রনাথের নিজস্ব নন্দনবোধ। আমাদের সময়, অর্থাৎ আটের দশকে জাত এবং নয়ের দশকে বেড়ে ওঠা সময়ের কাছে ক্ল্যাসিকিয়ানার উদাহারণ ছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। যা প্রতিফলিত হয় তাঁর ছবির ভাষা, সংলাপ, পোশাক-পরিচ্ছদ, অন্দরসজ্জা, গদ্য সাহিত্য, সম্পাদনা এবং ব্যক্তিগত যাপনের মধ্যেও। 
 

প্রথম ছবি ‘হীরের আংটি’র শুরু হয় ‘অনাবিল বাংলার স্বকীয় শরতে’র মহিষাসুরমর্দিনীর সুরে। আসলে ঐ দৃশ্যটিই ছিল ঋতুপর্ণর আগমনী। 
 

শেষ বয়সে ঋতুপর্ণর ইচ্ছা ছিল মহাভারত থেকে ছবি বানানোর। অধ্যাপক ডঃ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর কাছে ক্লাসও নিচ্ছিলেন। কিন্তু সুযোগ পেলেন না। হয়ত আমরা খুঁজে পেতাম মহাভারতের নতুন কোনও দিক? 
 

ঋতুপর্ণরা চলে গেলে আসলে নিয়ে যান একটি এস্থেটিকস। মর্ত্যে রেখে যান এক অমৃতমূরতি। ৩০ শে মে, ২০১৩ য় বৃষ্টিভেজা সকালে শেষ যাত্রায় নন্দন চত্বরে শেষ বারের মতো যাচ্ছিল নন্দনবোধে পরিপূর্ণ এক মনন। “আকাশ মুখর ছিল যে তখন ঝরো ঝরো বারিধারা।”

৩০ মে, ২০২৩