জন্মেছিলেন সেই সময়ে (১৮৯৯) যখন বাংলা সাহিত্যের বিস্ময় রবীন্দ্রনাথের খ্যাতি মধ্যগগণে। এর൩পর মাত্র বাইশ বছর বয়সে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে এলেন ধূম🍷কেতুর মতোই।
বহু কবিতা, বহু কালজয়ী গান লিখে তিনি নিজে যখন খ্যাতির মধ্যগগনে, যে বছর তাঁর প্রিয় গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ প্রয়াত হলেন, সেই ১৯৪১ সাল থেকেই একটু একটু করে দানা বাঁধতে থা﷽কল তাঁর দুরারোগ্য ব্যাধি- আলঝ💞েইমারস।
১৯৪২ সাল থেকে ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট (বাংলা ১২ ভাদ্র) মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের মূল্যবান ৩৪টা বছর তিনি❀ এই রোগে থাকলেন নির্বাক, বেঁচে থেকেও মৃত।
জন্মালেন পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের চুরুলিয়া গ্রামে, মারা গেলেন, চিরদিনের মতো শায়িত হলেন বাংলাদেশের ঢাকꦬায়।
বꦯিয়ে করেছিলেন এই বাংলার মানিকগঞ্জের ত্যাঁওতা গ্রামের মেয়ে আশালতা সেনগুপ্ত তথা দুলিকে। কুমিল্লায় দুলির আত্মীয়ের বাসায় পরিচয়, সেখান থেকে প্রণয়। আদর করে তাঁর নাম দিয়েছিলেন প্রমীলা। মানিকগঞ্জের মܫেয়ে প্রমীলা সমাহিত হলেন ভারতে, চুরুলিয়ায়।
বহু ট্রাজেডির টানাপোড়েনে ভরা এই কবি জীবনไকে কোনো নির্দিষ্ট ছকের গণ্ডিতে আটকে রাখেন নি। তিনি꧋ কাজী নজরুল ইসলাম।
আজ তাঁর ম🤪ৃত্যুর ৪৫ বছর পরে তো বটেই, শত শত বছর ধরেই তাঁকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করব। তা কি তিনি শুধু অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে কবিতা-প্রবন্ধ-সাংবাদিকতার মাধ্যমে বিদ্রোহ করেছিলেন বলে?
সে জন্য তো তিনি শ্রদও্ধা পাবেনই, তবে সবচেয়ে বেশি যে কারণে তিনি নন্দিত থাকবেন তা হলো তিনি মানুষে মানুষে সাম্যের গান গেয়েছিলেন। বিশেষ করে অখণ্ড ভা⛎রতের দুই প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায়- হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর লেখার ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছিল ‘হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে গালাগালি নয়, গলাগলি’র আকাঙ্ক্ষা।
বিয়ে করেছিলেন একজন হিন্দু নারীকে। প্রথম যে পুত্র জন্মানোর কয়েক দিনের মধ্যে মারা গিয়েছিল তার নাম রেখেছিলেন ‘কৃষ্ণ মহম্মদ’। দ্বিতীয় যে পুত্র মাত্র চার বছর বয়সে মারা যায়, বুলবুল, তার ভাল নামও রেখেছিলেন অরিন্দম খালেদ। এরপরের দুই পুত্র কাজী সব্যসাচী ও কাজী অনিরুদ্ধর ডাক নাম রেখেছিলেন দুꦗজন সাম্যবাদী নেতার নামে, যথাক্রমে সান ইয়াৎ সেন থেকে সানী ও লেনিন থেকে নিনি।
তিনি হিন্দুদের জন্য লিখেছেন জনপ্রিয় বহু শ্যামাসঙ্গীত। আবার মুসলমানদের জন্য লিখেছেন কালজয়ী𓄧 হামﷺদ, নাত, ইসলামি গজল।
এভাবে শুধু কলমে নয়, ব্যক্তিজীবনেও লালন করেছেন অসাম্প্রদায়িক চেতনা। তিনি বুঝেছিলেন, ব্রিটিশ শাসকেরা নিজেদের শাসন শক্তিশালী করতে ‘হিন্দু-মুসলমানদের’ মধ্যে ‘ভাগ কর ও শাসন ꧅কর’ নীতি নিয়ে যে বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছিল এই দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে তা নিরসন করতে না পারলে শুধু হানাহানিই হবে, হিংসা-দ্বেষই ছড়াতে থাকবে, শান্তি বিনষ্ট হবে এই ভূখণ্ডের মানুষের। এর বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন তিনি।
নজরুলের আশঙ্কা ঠিক হয়েছিল। দেশভাগ, দাঙ্গা, একাত্তর- সবই সাক্ষ্য দেয় কী নিদারুণ বিষবাষ্প ছড়িয়েছে উপমহাদেশের প্রধান দুই ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে। সেই উন্মাদনা আজ এতোটাই যে নজ𓄧রুল যদি আজকের যুগে বসে এভাবে হিন্দু-মুসলিম মিলিয়ে সন্তানদের নাম রাখতেন, নিজ পরিবারে হিন্দু স্ত্রী-শাশুড়ির পুজা-অর্চনার পরিবেশ বজায় রাখতেন, সব ধর্মের গোঁড়ামির বিরুদ্ধে কলম ধরতেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিতেন লেখার মাধ্যমে, তাহলে হয়তো আমরা নজরুলের কল্লা ফ🧸েলে দেওয়ার মতো ঘটনাও দেখতে পেতাম।
নজরুল শান্তির অন্বেষণ করেছেন, মানবতার গান, সাম্যের গান গেয়েছেন। তাঁকে আমরা সেভাবেই স্মরণ করব, তাঁর আদর্শকেꦡ বুকে লালন করব, তবেই নজরুলের প্রতি আমাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে।
৪৫তম ♏প্রয়াণ দিবসে মানবতার কবি, দ্রোহে♓র কবি, প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।