জিম্বাবুয়ে নয়, রাজার কাছেই হারল বাংলাদেশ

অঘোর মন্ডল প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২২, ০২:০৫ পিএম

সংকট এবং সংকট! সর্বত্রই সংকট।

জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। মানুষের যা൲পিত জীবনে দুর্দশা বেড়েছে। জাতীয় অর্থনীতি নিয়ে আপাতত খুব বেশি আশার বাণী নেই অর্থনীতিবিদদে💮র মুখে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে কি না, শঙ্কা জাগছে!

শঙ্কা বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়েও। জিম্বাবুয়ের মতো 🧔দলের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে দুটো সিরিজই হারল তারা। এবং খুব বাজেভাবে! যে যুবনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে জিম্বাবুয়েতে দল নিয়ে যাওয়া, সেটা মুখ থুবড়ে পড়ল। তরুণরা নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণে ব্যর্থ হলেন। আর ‘অভিজ্ঞ’ সাইনবোর্ড যাদের গায়ে লাগানো, তারা যা খেললেন, তাতে মনে হলো দলে জায়গা ধরে রাখা প্রথম লক্ষ্য!

এ রকম পরিস্থিতির মধ্যে টিম ডিরেক্টের নিজেই ক্রিকেটারদের দিকে অভিযোগের তির ছুড়ে দিলেন! এসব অভিযোগ বিতর্কের আগ্নেয়গিরি দলের মধ্যে জ্বলতে পারে, তা কি তিনি বুঝেছেন? সিরিজের মাঝপথে,𒅌 ক্রিকেটারদের সমালোচনা করা টিম ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বশীল আচরণ নয়। এটা আসলে আত্মরক্ষার জন্য অন্যের দিকে তির ছোড়া।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিরিজে যা ঘটল, তাতে বাংলাদেশ ক্রিকেটে এক মহাসংকটের ইঙ্গিত। ক্রি🌞কেটে হার-জিত দুটোই থাকে। কিন্তু মাঠের ভেতর ক্রিকেটাররা শতভাগ দিচ্ছেন কি না, সেটাই আসল। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে যা বলা হলো, তাতে প্রশ্ন ওঠে, ক্রিকেটাররা শতভাগ দিয়েছেন কি? তবে টিম ম্যানেজমেন্ট যুবনীতির যে স্টেটমেন্ট দিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন, সেটা ভারত মহাসাগরে নিক্ষেপ করে গেছেন হারারেতে পৌঁছানোর আগে। তাই ‘বিশ্রাম’ দেওয়া মাহমুদউল্লাহকে তৃতীয় ওয়ানডেতে খেলাতে হলো!

অনেক সমস্যা ও সংকট নিয়ে এশিয়া কাপে যাবে বাংলাদেশ। সেখানে নেতৃত্ব থেকে দলে অনেক পরিবর্তন হবে, সে আভাস দౠিয়েই রেখেছেন বোর্ড কর্তারা। নতুনভাবে বিজ্ঞাপন বিতর্কে জড়ানো সাকিবই হয়তো দলের নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু তাতে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে মনে হয় না। সোহান ও লিটন দাস ইনজুরিতে। তাদের জায়গা ভরাট করতে হবে। নির্বাচকদের জন্য কাজটা সহজ হবে না। ধারাবাহিকতায় লিটন দারুণ সময় পার করছিলেন। একজন ইনফর্ম ব্যাটারের অনুপস্থিতি ভোগাতে পারে দলকে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে যুবশক্তি আহ্বানের সময় হয়েছে। এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন সবাই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সুযোগ পাওয়ার পরও তরুণরা সেটা কাজে লাগাতে পারছেন কোথায়? সুযোগ পাওয়া নতুন ব্যাটাররা সেঞ্চুরি করেননি। বা করতে পাররেনি। কিন্তু রিয়্যাল টিমের জন্য কাজে আসে, এমন ইনিংস খেলতে পারলেন কে কয়টা? ত্রিশ-চল্লিশ রান করা যায় মনের জোরে। টেকনিক্যালি সাউন্ড না হয়েও। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দাগ কাটতে হলে বড় ইনিংস জরুরি। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে সেই ইনিংস খেলতে পারলে, তা আরও ঝকঝকে, উজ্জ্বল মনে হয়। জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজাই তার বড় উদাহরণ রেখে গেলেন এই সিরিজে। কী অসাধারণ ব্যাট করলেন প্রথম দুই ওয়ানডেতে। টানা দুটো সেঞ্চুরি। তা-ও কোন পরিস্থতিতে! উদগ্র ইচ্ছাশক্তি আর সংকল্প ফুটে বেরিয়েছে তার প্রতিটি স্ট্রোকে। অসাধারণ শৈল্পিক-মাধুর্য মেশানো কাব্যিক ইনিংস হয়তো ছিল না রাজার কোনোটাই। কিন্তু রাজ্য আর ক্রিকেট অনুরাগীদের মন জ♏য়ের জন্য দারুণ কার্যকর ইনিংস খেললেন তিনি।

ক্রিকেট রাজত্বে রাজার প্রতিষ্ঠায় হাহাকার পড়ে গেল বাংলাদেশজুড়ে। দুদিনে দুটো দ💛ুশোর ওপর পার্টনারশিপ গড়লেন। জিম্বাবুয়েকে নিয়ে গেলেন নির্ভরতার কুঠুরিতে।❀ কত দিন পরে সিরিজ জিতল জিম্বাবুয়ে! তার সেই আনন্দদায়ক ইনিংস দুটো হৃদয় বিদীর্ণ করল বাংলাদেশের ক্রিকেটানুরাগীদের।

সিকান্দার রাজাতে বলীয়ান জিম্বাবুয়ে সির🌌িজ জিতল। কিন্তু গোটা সিরিজে বাংলাদেশকে অনেক বেশি এলোমেলো মনে হলো। তারা এমন কাউকে পেলেন না, যিনি জিম্বাবুয়ের কাছে হারের গ্লানি থেকে বের করে আনতে পারতেন! তবে হারারেতে হেরে ܫবাংলাদেশের সব যন্ত্রণা শেষ হয়ে গেল, তা মনে করারও আপাতত কিছু নেই।

আইএমএফের ঋণ আমাদের জনজীবনে কতটা স্বস্তি দেবে জানি না। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট অনুরাগীদের মনে স্বস্তি ফেরাতে এশিয়া কাপে ভালো ক🦹িছু করা দরকার। আর ক্রিকেটারদের মনের অস্বস্তি দূর করতে একজন মনোবিদ জরুরি, যিনি ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলাদা আলাদা বসে তাদের কথা শুনবেন। সমস্যার সমাধানে পথ বাতলে দেবেন। গ্রেগ চ্যাপেল, ভিভ, শচীন, সৌরভদের মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটাররাও মাঝেমধ্যে মনোবিদের শরণাপন্ন হয়েছেন। হতে হয়েছে।

জিম্বাবুয়ের কাছে ওয়ানডে আর টি-𝐆টোয়েন্টি সিরিজ হারার পর বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনেক রুগ্‌ণ দেখা෴চ্ছে! শুধু ক্রিকেটার বদল। কঠিন অনুশীলনে সেই স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার হবে না। পেশাদারি মানসিকতা আনতে মনের খবরটা জানাও জরুরি। ক্রিকেটীয় সংকট উত্তরণে ক্রিকেটারদের মনকেও অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার।

 

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক