ঈদের দিন এক চিমটি অস্বস্তি

বিধান রিবেরু প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২২, ১১:৫১ এএম

ঈদ অভিযাত্রায় পদ্মা সেতুই এবারের চাঁদমারি। দক্ষিণপন্থীদের স্বস্তি। পথে গরুবাহী ট্রাকের ওপর ও হাটে হাটে চাঁদাবাজির কারণে স্বস্তি পাননি ব্যবসায়ীরা। কাজেই তার ভার বহন করতে হয়েছে যারা মনের পশু কোরবানি দিয়েছে🐽ন তাদেরও। গরুর দাম 🌺এবার নাকি বেশিই ছিল। তারপরও উৎসব বলে কথা! দেশে দ্রব্যমূল্যের দিকে অগ্নিনির্বাপক দলের যখন তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হচ্ছে, তখন অবস্থাসম্পন্নরাই মেটাফরিক্যালি পশু জবাই করতে পেরেছেন। অন্যরা দর্শকমাত্র। তারাও মনের পশুকে কতল করতে চায়, কিন্তু সাধ্যে কুলোয়নি। গরুর মাংসের যা দাম! তার সঙ্গেই সামঞ্জস্য রাখা হয়েছে গরুর দামের! গরিবের আর উৎসব, ধনীদের মুখপানে চেয়ে কাটিয়ে দেওয়া একটি দিন মাত্র।

স্বস্তির কথা যদি বলি, তো সবচেয়ে আনন্দ রাজধানীর। বারবার ঢাকা বিশ্বে বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকার একেবারে ওপরে স্থান পায়। কেবল ঈদের সময়টাতেই সে সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ায় পরিণত হয়। এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত, মাত্র আধ ঘণ্টায়। ফাঁকা ঢাকার এমন স্বস্তিই সবার কাম্য। অন্তত ঢাকায় যাদের স্থায়ী নিবাস। যাদের ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি’ গান গাইবার সুযোগ নেই। কিন্তু যারা স্বপ্ন বাড়ি পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যান, তারা ঢাকা ফিরে আসেন ঠিকই, ঢাকাকে কি ভালোবাসেন? মেট্র♕োপলিটন সিটি। চোখ ধাঁধানো সব দালানকোঠা। এখানে টাকা ওড়ে। সেটা ধরতেই স্বপ্ন সিন্দুকে রেখে শহরে আসে মানুষ। শহরটাকে ভারী করে তোলেন। সবকিছুর কেন্দ্র যে ঢাকা! কিন্তু বুড়িগঙ্গার পাড়ে গড়ে ওঠা শহরটাও তো বুড়ো হয়েছে। আর কত বইতে পারবে ভার? ভারবাহী পশু হিসেবে গাধার সুনাম আছে। এই শহর কি গাধা হয়ে যাচ্ছে? মেটামরফোসিস? যদি হয়েও যায় তারও তো একটা শেষ আছে। ᩚᩚᩚᩚᩚᩚ⁤⁤⁤⁤ᩚ⁤⁤⁤⁤ᩚ⁤⁤⁤⁤ᩚ𒀱ᩚᩚᩚশেষটা তবে কেমন হবে?

অজানা শঙ্কায় অস্বস্তি হয়, কিন্তু চোখে উন্নয়নের সুরমা থাকলে সেই শঙ্কা দূর হয়ে যায়। আমরা সুরমা মেখে, সুরম্য সেতুর স্তুতি সংগীতে ব্যস্ত। ওদিকে খোঁড়াখুঁড়ি আর অপরিকল্পিত নগরায়ণের ঠেলায় খোদ রাজধানী রক্তাক্ত। এই ক্ষরণ বন্ধে করণীয় কি? নানা মুনীর নানা মত। কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। এꦬই ঈদের মৌসুম গেলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা পিচগলা রোদে বসে থাকতে হবে ভাঙাচোরা বাসগুলোর। পাশেই ভাঙাচোরা চেহারার ড্রাইভার বসে থাকবে কোনো এলিটের ঝাঁ-চকচকে রোলস রয়েস নিয়ে। জি, ঢাকায় এখন সাতাশ কোটি টাকার রোলস রয়েসও আমদানি হয়। উন্নয়ন যত বাড়ছে, বৈষম্যও তত বাড়ছে। ঘন ডাল রান্না করা মানুষের সংখ্যা কমছে।

তারপরও ঈদ আসবে এবং চলে যাবে। এই আসা-যাওয়ার খেলায় জাতীয়তাবাদী জাদুর মতো ধর্মও সবাইকে বলবে—আমরা সকলেই সমান, একই খোদাতালার বান্দা। কিন্তু কারও ঘরে চাউমিন, কারও ঘরে ভাতই চড়ে না—এই রাজনৈতিক অর্থনীতির অঙ্ক কষার জন্য কোনো শুভংকরের দেখা মেলে꧃ না। উৎসব ও উন্নয়নের ফাঁকে তাই কেউ যদি ꦡজিজ্ঞেস করে, ভাই দেশের অবস্থা কেমন? তখন নমস্কার জানাতে হয় মশহুর গল্পকার সাদাত হাসান মান্টোকে।

মান্টোকে নাকি একবার একজন জিজ্ঞেস করেছিল সেই একই রকম প্রশ্ন, আপনার দেশের খবর𓂃 কি? উত্তরে মান্টো বলেছিলেন, দেশের অবস্থা কারাগারে জুমার নামাজে যে দৃশ্য হয়, ঠিক সে রকম। 𒀰আজান দেয় বাটপার, ইমামতি করে খুনি, পেছনে নামাজ পড়ে সব চোরের দল।

আমি জ♋ানি, ম♒ান্টোর এই উত্তর সকলের জন্য স্বস্তিকর নয়। তবে কি, লেখক ও দার্শনিকদের কাজই হলো সমাজে অস্বস্তি উৎপাদন করা। তাতেও যদি স্থানান্তর ঘটে! একই চক্রে আর কত?

 

লেখক: প্রধান নির্বাহী, সংবাদ প্রকাশ