চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোর আগুন ও বিস্ফোরণে অগণন প্রাণের অপচয় হয়েছে। ও𝓀খ💧ানে কী ধরনের রাসায়নিক আছে, সে তথ্য জানা যায়নি তাৎক্ষণিক। ফলে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছিল অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদের। মালিকপক্ষের কেউ প্রাথমিক অবস্থায় সহায়তা দেয়নি উদ্ধারকারীদের। এতে মানুষ পুড়ছে, মরছে মানুষ; মানবিক বিপর্যয় ঘটছে সীতাকুণ্ডে।
সংখ্যার হিসাবে হতাহত কয়েকশ। দগ্ধ-মৃত মানুষের সারি গিয়ে থামছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। সাধারণ মানুষদের অনে꧑কেই দুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে আসছেন। রক্ত দিতে আসছেন অনেকেই, ওষুধ সহায়তা দেওয়ার জন্যে এগিয়ে এসেছেন কেউ কেউ। মানবিক বিপর্যয়ের এই সময়ে সামান্য হলেও এই ইতিবাচক খবর আমাদেরকে আশাবাদী করে।
ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় রাসায়নিক ফ্যাক্টরি কীভাবে হয় তার তদন্ত চেয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলম। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ ক🐬থা বলেছেন। মালিকপক্ষ আসেনি বলে জানা যায়নি ওখানে কী ধরনের কেমিকেল রয়েছে—এমনই অভ𒁃িযোগ ফায়ারসার্ভিস কর্মকর্তার। তাদের এটা জানা জরুরি। আগুন নেভাতে অংশ নেওয়া কর্মীরা রাসায়নিকের প্রভাবে বেকায়দায় পড়েছেন। অনেকের চোখ লাল হয়ে গেছে, চোখ দিয়ে পানি পড়ছে—এমনই তথ্য জানাচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যম।
কী ধরনের রাসায়নিক এবং এর পরিমাণ কত এসব জানা জরুরি। ওগুলো কী বৈধভাবে ছিল ওখানে, কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল—এসব এখন আলোচনায় আসছে। সচরাচর এমনই হয়। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে রাসায়নিক নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, তদন্ত কমিটি হয়, প্রতিবেদনে সুপারিশ দেওয়া হয়, কিন্তু এরপর আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। পুরান ঢাকার একাধিক ঘটনা থেকে শুরু করে সীতাকুণ্ডে𓆉র এই আগুন, একটির সঙ্গে অন্যটির মিল অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু তারপরেও সতর্কতামূলক কোন ব্যবস্থা নꦇেওয়া হয় বলে মনে হয় না। ব্যবস্থা নেওয়া হলে পুনঃপুন এসব দুঃখজনক ঘটনা ঘটত না নিশ্চিত।
সীতাকুণ্ডের কন্টেইনার ডিপোর হতাহতের বেশির ভাগই শ্রমিক। হতাহতের তালিকায় আছেন উদ্ধারকারী ফায়ারসার্ভিস কর্মী, পুলিশ সদস্য। কেউ দুইবেলা ভাতের জন্যে জীবনকে হুমক𝔍ির মুখে রেখেই কাজে ছিলেন, কেউ কেউ মানবিক টানে মানুষকে বাঁচাতে নিজেদের জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছেন। যে শ্রমিক আগুনে পুড়ে জীবন দিল, যে শ্রমিক আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে, দগ্ধ হয়ে পুরো জীবন অনিশ্চয়তার মুখে পড়ল যাদের তাদের দায়িত্ব কে নেবে? মালিকপক্ষ নেবে না, কারণ ঘটনার বারো 🎉ঘণ্টার অধিক সময় পার হয়ে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে তাদের দেখা যায়নি। কঠিন সত্য হলো, এমনটাই ঘটে আসছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় নগদ এক কোটি টাকা ও এক হাজার খাবার প্যাকেটের সহায়তা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ও আহতদের পরিবারকে এককালীন পঞ্চাশ ও বিশ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এগুলো করা হয় সাধারণত দাফন-কাফন ও শেষকৃত্যের জন্যে। এগুলো যদিও জীবনের মূল্যমান নির্ধারণসূচক নয়। তবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা। এই সহানুভূতি-সহায়তার চাইতে জরুরি এমন ঘটনার পথ বন্ধে উদ্যোগী হওয়া। জরুরি সার্বক্ষণিক মনিটরিং, নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাচাই এবং অনুমোদনের বাইরে কোনো রাসায়নিক বিভিন্ন জায়গায় থাকে কি-না তার নজরদারি। নজরদারির এই ব্যবস্থা শক্ত হলে⛄ রাসায়নিক রাখার অনুমোদনসহ কী প্রক্রিয়ায় সেগুলো রাখা হবে সে বিষয়ে নীতিমালা, বিধিমালা কি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছিল তা বেরিয়ে আসতো? এগুলো অনুসরণ করা হ𝕴লে আগুন এত দূর গড়াত বলে মনে হয় না। এছাড়া ঘটনার পর এত দীর্ঘ সময় কেন সামনে আসছে না মালিকপক্ষ?
আগুন ও বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে একাধিক তদন্ত কমিটি কাজ করছে, করবে; তারা প্রতিবেদনও দেবে। এই প্রতিবেদন অন্য অনেক ঘটন﷽ার মতো স্রেফ সময়-কাগজ ও অর্থের অপচয় এবারও হতে পারে, শঙ্কা এমনই। শঙ্কার কথা এমনি-এমনি বলছি না; বলছি অতীত থেকে। অতীত সতত দুঃখের হলেও ওখান থেকে আমরা শিক্ষা নেওয়ার কথা বলি, এবারও বলছি। তবে সাধারণত অতীত থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। রাষ্ট্র ও সরকারের কিছু দায়িত্বশীল প্রতি ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখালেও এরপর সব ভুলে যান। চাপা পড়ে যায় মানুষের আহাজ💯ারি, মৃত-পোড়া মানুষের দেহগুলো স্রেফ সংখ্যা হিসেবে পরিগণিত হতে থাকে।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক