ড্যান্স ক্লাবের আড়ালে নারীপাচার, গ্রেপ্তার ১১

সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২১, ০৫:৫০ পিএম
কামরুল ইসলাম জলিল ওরফে ডিজে কামরুল ওরফে ড্যান্স কামরুলসহ গ্রেপ্তাররা/ছবি: সংগৃহীত

নাচ শেখানোর প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীদের কৌশলে ভারত হয়ে বিভিনཧ্ন দেশে পাচার করা হতো। সম্প্রতি এ রকম ২৩ নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে। 

মানবপাচারের অভিযোগে চক্রের মূল হোতা মো. কামরুল ইসলাম ওরফে জলিল ওরফে ডিজে কামরুল ওরফে ড্যান্স কামরুলসহ ১১ জ🍸নকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

শনিবার (৩০ অক্টোবর) র‌্যꦉাবের আইন ও গণমাধ‌্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে 🌜এসব তথ্য জানান।

তারা হলেন- ভারতে পাচারচক্রের মূলহোতা কামরুল ইসলাম ওরফে জলিল ওরফে ডিজে কামরুল বা ড্যান্স কামরুল, রিপন মোল্লা, আসাদুজ্জামান সেলিম, নাইমুর রহমান। এছাড়া ম♊ধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচারচক্রের বাকি সদস্যরা হলেন- নুর নবী ভুইয়া রানা, আবুল বাশার, আল ইমরান, মনিরুজ্জামান, শহিদ শিকদার, প্রমোদ চন্দ্র দাস ও টোকন।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫৩টি পাসপোর্ট, ২০টি মোবাইল, বিদেশি মদ, ২৩ ক্যান বিয়ার, দুটি ম꧂োটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, এই মানবপাচারকারী চক্রের মূলহোতা কামরুল ইসলাম জলিল ওরফে ডিজে কামরুল বা ড্যান্স কামরুল। এই চক্রে প্রায় ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে চক্রটি মানবপাচার অপরাধে জড়িত। ꦺচক্রটি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কম বয়সী তরুণীদের প্রতারণামূলক ফাঁদে ফেলে ও প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেন।&rdꦦquo;

খন্দকার আল মঈন বলেন, “চক্রটি প্রথম🌞ে ভিকটিমদের নাচ বা ড্যান্স শেখানোর নামে প্রত্যন্ত অঞ্চলের থেকে সুন্দরী মেয়েদের ঢাকায় নিয়ে আসতো। পরে তাদের বেপরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত করা হতো। পরে তাদের পার্শ্ববর্তী দেশে বিভিন্ন চাকরিতে প্রলুব্ধ করে পাচার করতো চক্রটি। এভাব♏ে চক্রটি তিন বছরে প্রায় শতাধিক মেয়েকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেছে।”

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, “এসব ভিকটিমদের পার্শ্ববর্তী দেশের মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পার্লারসহ লোভনীয় চাকরির প্রলোভন 🃏দেখিয়ে আকৃষ্ট করা হতো। মূলত পার্শ্ববর্তী দেশে🍸 অমানবিক ও অনৈতিক কাজ করানোর উদ্দেশ্যে তাদের পাচার করতো। এই চক্রটি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় সক্রিয় রয়েছে।

ভিকটিমদের সীমান্তের অরক্ষিত এলাকা দিয়ে পাচার করে জানিয়ে মঈন বলেন, “এই চক্রের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশের সিন্ডিকেটের যোগসাজশ রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশের চক্রের সদস্যরা ভিকটিমদের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে। এরপর বিপুল অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন শহর বা প্রদেশে অনৈতিক কাজ ক♏রানোর উদ্দেশ্যে বিꦇক্রয় করে দিতো। আর এরপর থেকে ভিকটিমদের আর কোনো সন্ধান মিলতো না।”

কামরুল ইসলাম ওরফে ডিজে কামরুলের পরিচয়

২০০১ সালে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসেন কামরুল। এরপর বাড্ডা এলাকায় রিকশা চালাতে শুরু করেন। এর কয়েকদিন পর তিনি একটি কোম্পানির ডেলিভারি ভ্যানচালক হিসেবে কাজ নেন। এরপর ড্যান্স গ্রুপের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পরে হাতিরঝিল এলাকায় ‘ডিজে কামরুল ড্যান্স কিংডম’ নামে একটি ড্যান্স ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এই ক্লাবের মাধ্যমে উঠতি বয়সী নারীদের বিনোদন জগতে প্রবেশের নামে প্রলুব্ধ করতেন তি𝓰নি। একপর্যায়ে তাদের উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করতেন।

র‌্যাব জানায়, সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশে ꦬবাংলাদেশের এক তরুণীকে পৈশাচিক নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পার্শ্ববর্তী দেশে মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা বস রাফিসহ চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এছাড়া একজন ‘মা’ নিজের জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার হয়ে মেয়েকে পাচারকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার করেন, যে ঘটনা ভাইরাল হয়।

র‌্যাব আরো জানায়, কামরুলের মাধ্যমে এক নারীকে ভারতে পাচারের ঘটনায় তার বোন বাড্ডা থ💦ানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেন। সেই মামলায় ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে পুলিশ তাকে আটক করে। তিনমাস পর কারাগার থেকে বের হয়ে পুনরায় নারী পাচারে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এসব নারীদের সীমান্তবর্তী জেলায় অবস্থিত সেফ হাউজে রাখা হতো। পরে সেফ হাউজে থাকা অবস্থায় তাদের মোবাইল নিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হতো। এরপর সুবিধাজনক সময়ে চক্রের সদস্যরা নারীদের অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে পার্শ🃏্ববর্তী দেশে পাচার করতো। 

এই চক্রের গ্রেপ্তার রিপন, সেলিম ও শামীম নারী পাচারের অবৈধ কাজে মূলহোতাকে সহায়তা করতো বলে র&🍌zwnj;্যাবের কাছে স্ꦉবীকার করেছে।

এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে পাচার চক্রের সদস্যদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা মধ্যপ্রাচ্যে মানবপাচারকারী একটি চক্র। চক্রে দেশের ১০-১২ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। ৫ থেকে ৭ বছর ধরে এই চ𓂃ক্রটি সক্রিয়ভাবে মানবপাচার করে আসছে। হাউজ কিপিং, নার্স, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি পেশায় নারী কর্মীদের বিনা টাকায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে উঠতি বয়সী তরুণী ও মধ্যবয়সী নারীদের প্রলুব্ধ করতো চক্রটি। মূলত বিদেশে পাচার🥀ের মাধ্যমে ভিকটিমদের বিক্রি করে দেওয়া হতো।

চক্রটি এরই মধ্যে ৩০-৩৫ জন নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার ꧑করেছে বলে জানতে পেরেছি। পাচারকারীরা ঢাকায় কয়েকটি সেফ হাউজ পরিচালনা করে। বেশ কয়েকদিন সেফ হাউজে ভিকটিমদের আটকে রেখে পরে মধ্যপ্রাচ্যে পাচার করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যে ভিকটিমদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়꧅ে বিক্রি করা হতো। চক্রটি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় সক্রিয়। চক্রটি কয়েকটি ধাপে বিভিন্ন দেশে নারীদের পাচার করে আসছে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রথমত তারা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উঠতি বয়সী ও আর্থিকভাবে অসচ☂্ছল তরুণ-তরুণী ও মধ্যবয়সী নারীদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে ও বিদেশে বিভিন্ন লোভনীয় চাকরির প্রলোভন দেখায়। এতে তারা রাজী হলে প্রথমত তাদের ঢাকায় অবস্থিত সাজানো অফিসে এনে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানো হয়। বিদেশে যাওয়ার জন্য স্বল্পকালীন ভুয়া প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে তারা। এ সময় কোনো নারী বিদেশে যেতে অ꧙নীহা প্রকাশ করে পাসপোর্ট ফেরত চাইলে তাদের থেকে দেড়-দুই লাখ টাকা দাবি করতো চক্রটি। এই মধ্যপ্রাচ্যে মানবপাচারকারী চক্রের মূলহোতা নুর-নবী ভুইয়া রানা।

কে এই নুর-নবী ভুইয়া?

এই চক্রের প্রধান নুর-নবী ভুইয়া রানা লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে উচ্চ মা♔ধ্যমিক পাস করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি ঢাকায় এসে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি দিয়ে কর্মজীবন শুরু করে। পরে ১৯৯৮ সাল থেকে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে প্রবাসী হিসেবে কাজ করেন। ওমানে থাকা অবস্থায় পাচারকারী একটি চক্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তখন থেকেই মানবপাচার কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। 

পরে ২০২০ সালে ওমান থেকে দেশে ফিরে মানবপাচার💫ের সঙ্গে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন।