পুলিশের হাতে তালিকা, তবুও সক্রিয় ছিনতাইকারীরা

আবদুল্লাহ আল মামুন প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২২, ০৯:৪১ পিএম

রাজধানীর কোন কোন এলাকায় কারা ছিনতাই করে সেই তথ্য আছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে। অথচ সেটা দমনে কার্যকর কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে না পুলিশকে। এতে প্রতিদিনই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। 
ডিএমপি সদর দপ্তর বলছে, ঢাকা মহানগরের ৫০ থানা এলাকায় ৫৭৫টি জায়গায় প্রায় ৫০০ ছিনতাইকারী সক্রিয়। এর বাইরে ‘অজ্ঞান পার্টি’, ‘মলম পার্টি’ ও ‘টানা পার্টি’র সদস্য রয়েছেন প্রায় ৮৫ জন।
এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর যতই ঘনিয়ে আসছে ঢাকায় ছিনতাইকারীরা ততই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ছিনতাই মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্💛ষাকারী বাহিনীও অভিযান অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু ছিনতাই থামছে🐟 না।

সাম্প্রতিক ছিনতাইয়ের ঘটনা
শুক্রবার (২২ এপ্রিল) ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার সাত মসজিদ রোডে চলন্ত প্রাইভেটকার থেকে রিকশা আরোহী এক নারীর ভ্যানিটিব্যাগ টান মেরে নিয়ে যায় ছিনতাইকারী।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল (বুধবার) লালবাগে রাত সাড়ে ৮টার দিকে কবির হোসেন নামের এক ব্যক্তি ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে নগদ ১০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইলফোন নিয়ে পালিয়ে যান। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করানো হয়। আগের দিন ১২ এপ্রিল মঙ্গলবার রাতে মোজাব্বির হাসান নামের এক গণমাধ্যমকর্মী রাত সোয়া ১১টার দিকে অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার পথে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। ছিনতাইকারীরা তার পকেটের মোবাইলফোন নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে অল্পের জন্য রক্ষা পান তিনি।
গত ২৭ মার্চ ভোরে রাজধানীর কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে ‘ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে’ নিহত হন দন্তচিকিৎসক আহমেদ মাহি ওরফে বুলবুল। এছাড়া ২২শে মার্চ মাহমুদ হোসাইন নামে এক ব্যক্তি শাহবাগ থেকে রিকশায় সেগুনবাগিচা যাওয়ার সময় রমনা পার্কের কাছে কয়েকজন ছিনতাইকারী মোটরসাইকেলে এসে তার কাছে থাকা মূল্যবান সবকিছু নিয়ে পালিয়ে যায়।
১৭ মার্চ কাকরাইল মোড়ে রাফি রিদভি নামের এক শিক্ষর্থীকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয় তাকে। একই দিন সাংবাদিক কামাল হোসেন তালুকদার গুলিস্তান থেকে আজিমপুর বা🎀সায় যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীরা তার সঙ্গে থাকা ব্যাগ ও মোবাইলফোন নিতে সজোরে ধাক্কা দিয়ে রিকশা থেকে ফেলে দেয়। এতে তিনি মারাত্মক আহত হন।

র‌্যাবের অভিযান
এদিকে ঈদকে সামনে রেখে ছিনতাইকারী গ্রেপ্তারে র‌্যাবও অভিযানে নেমেছে। শুক্রবার (২২ এপ্রিল) বিকা🔯লে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় র‌্যাব-১০-এর একটি দল অভিযান চালিয়ে নাজমুল (২৮) ও সাইফুল ইসলাম ওরফে পলক (২৬) নামে দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে। এসময় তার কাছ থেকে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত ১টি ছুরি, ১টি সুইচ গিয়ার চাকু ও ২টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। এর আগে ১২ এপ্রিল রাতে রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে ২০ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব ।

যা বলল র‌্যাব
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন𒀰 বলেন, “খিলগাঁও, মালিবাগ রেলগেইট, দৈনিক বাংলা মোড়, পীরজঙ্গি ꩵমাজার ক্রসিং, কমলাপুর বটতলা, মতিঝিল কালভার্ট রোড, নাসিরের টেক হাতিরঝিল, শাহবাগ, গুলবাগ, রাজউক ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং পল্টন মোড়, গোলাপ শাহর মাজার ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, আব্দুল গণি রোড, মানিকনগর স্টেডিয়ামের সামনে, নন্দীপাড়া ব্রিজ ও বাসাবো ক্রসিং এলাকায় সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেশি দেখা যায়।” 

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীবাসী ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঈদের কেনাকাটা উপলক্ষে রাজধানীমুখী মানুষের বড় বড় শপিং মল ও বাজারকেন্দ্রিক চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র যাত্রাপথে নিরীহ পথচারীদের সর্বস্ব ছিনতাই করে নিয়ে যায়। রাজধানীর বিভিন্ন অলি-গলিতে ওৎঁপেতে থাকে ছিনতাইকারীরা। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নিত। ইফতারের সময় এবং সেহেরির পর তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাইকাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধাবোধ করে না। এ লক্ষ্যে ভবিষ্যতে সব ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি সবসময় টহল ও চেকপোস্ট থাকবে। এছাড়াও ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকার কারবারি চক্রের বিরুদ্ধেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে  যেকেউ সমস্যায় পড়লে র‌্যাবের কিছু মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে, সেখানে আমাদের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন।”
এছাড়া রাজধানীর শাহবাগ ও হাতিরঝিল থানা এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ধারালো চাকুসহ ১০ ছ✃িনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।

ডিএমপির পরিসংখ্যান
ছিনতাই বাড়ার বিষয়টি দেখা যায় খোদ পুলিশের পরিসংখ্যানেই। ডিএমপির হিসাব বলছে, গত ডিসেম্বরে রাজধানীতে ৬টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। জানুয়ারি মাসে সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়ায় ১৫। ফেব্রুয়ারিতে ১৯টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। মার্চের হিসাব পাওয়া যায়নি।
অবশ্য পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডিএমপি যে হিসাব দেখায়, ছিনতাইয়ের প্রকৃত ঘটনা তার চেয়ে বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী মামলার ঝামেলায় যেতে চান না। অনেক ক্ষেত্রে থানা পুলিশ মামলা করতে ভুক্তভোগীকে নিরুৎসাহিত করে, নয়তো মামলা না নিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনাকে কোনো মূল্যবানসামগ্রী ‘হারিয়ে যাওয়া’ হিসেবে উল্লেখ করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে নথিভুক্ত করে। মূলত নিজের থানায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে নথিপত্রে ভালো দেখাতেই এমনটা করা হয়।
ডিএমপির তালিকা অনুযায়ী, পুলিশে🧸র তেজগাঁও বিভাগে ছিনতাইকারী ও সমজাতীয় অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের সংখ্যা বেশি। সেখানে ছিনতাইকারী রয়েছে ১২২ জন। এর পরে রয়েছে রমনা, গুলশান, মিরপুর, উত্তরা, মতিঝিল, ওয়ারী ও লালবাগ বিভাগ।

পুলিশের পরিসংখ্যান

পু🦹লিশের হিসাবে ২০০৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৪ বছরে রাজধানীতে ছিনতাইয়ের (ডাকাতি ও দস্যুতা) ঘটনায় ৩ হাজার ৯৫৫টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) এসব ঘটনায় মোট মামলা হয়েছে ৪৩টি। ২০১৭ সালের পুলিশ সদর দফতরের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ওই বছরের প্রথম ৯ মাসের হিসাব মতে, রাজধানীতে ৮৮ ভাগ ছিনতাইকারীর বিচার হয়নি।

বছরভিত্তিক হিসাবে দেখা গেছে, ২০০৮ সালে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ঢাকায় ৭৫৫টি মামলা হয়। ২০০৯ সালে ৫৪০টি, ২০১০ সালে ২৬৭টি, ২০১১ সালে ৩৩৭টি, ২০১২ সালে ২৮৮টি, ২০১৩ সালে ২৮৮টি, ২০১৪ সালে ৩১২টি এবং ২০১৫ সালে ২৫০টি, ২০১৬ সালে ১৫৪টি, ২০১৭ সালে ১২০টি, ২০১৮ সালে ১০০টি, ২০১৯ সালে ১৭৬টি, ২০২০ সালে ১৯৭টি এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে ১৬৮টি মামলা হয়।
এ ছাড়া এ বছরের প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) ডাকাত༺ি, দস্যুতা ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় মোট মামলা হয়েছে ৪৩টি। এ বছরের ডিএমপির তালিকায় ডাকাতি, দস্যুতা ও ছিনতাইয়ের আলাদা হিসাব দেখা গেছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে দস্যুতা, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ১৮টি মামলা হয়েছে ও ফেব্রুয়ারি মাসে ২৫টি মামলা হয়েছে। তবে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে শুধু ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৫টি করে মোট ১০টি মামলা হয়।

যেসব জায়গায় ছিনতাই বেশি
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, এলাকাভিত্তিক হিসেবে ছিনতাই বেশি হয় বাড্ডা, ভাটারা, মিরপুর ও পল্লবী এলাকায়। শাহবাগ, মগবাজার, রমনা, মাল🦩িবাগ রেলগেট, চানখাঁরপুল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকা, গুলিস্তান, ধানমন্ডি, জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড, নিউমার্কেট, পান্থপথ মোড় ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায়ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

যা বললেন তেজগাঁও জোনের ডিসি
এ বিষয়ে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ঈদ উপলক্ষ্যে তেজগাঁও বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মূলত তিন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করে থাকি সবসময়। প্রথমে ঈদের আগের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যেটি রমজান মাসে কার্যকর থাকে। আরেকটি হলো ঈদকে কেন্দ্র করে। ঈদের দিন বিভিন্ন এলাকায় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন মানুষ ঘুরাফেরা করে।🏅 সেই সময়টাতে একটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে এবং ঈ💃দের পরে আরও ৫ থেকে ৭ দিন অনেকে বাসা-বাড়িতে মানুষ থাকে না, গ্রামের বাড়িতে ঈদ কাটাতে চলে যায়। সেসময় আরেক ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে।”

ডিসি বিপ্লব কুমার আরো বলেন, “এবারও এই তিন ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। এক ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন চলছে। যেহেতু আমাদের ঈদ প্রায় সমাগত। মার্কেটগুলোতে প্রতিনিয়ত ভিড় বেড়েই চলছে। তাই বাসা থেকে মার্কেট পর্যন্ত মানুষ যেন নির্বিঘ্নে যেতে পারে এবং কেনাকাটা করার পর সে যেন নিশ্চিন্তে বাসস্থানে ফিরে যেতে পারে, মার্কেটে যাওয়া-আসার রাস্তাগুলোতে যেন কোনো প্রকার ছিনতাইয়ের শিকার না হয়, সেজন্য ব্যাপক নিরাপত্তা গ্রহণ করেছি এবং সেটা কার্যকর হয়েছে।”
ডিএমপির তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, থানাভিত্তিক হিসাবে ছিনত🦂াইকারীর সংখ্যা বেশি রাজধানীর ভাটারা, শাহবাগ ও শেরেবাংলা নগর থানায়। সেখানে ছিনতাইকারী রয়েছে ৩৪ জন করে। এরপর রয়েছে হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, তেজগাঁও, রমনা, হাতিরঝিল ও উত্তরা পশ্চিম থানা। ছিনতাইকারী কম রাজধানীর উত্তরখান, দক্ষিণখান ও উত্তরা পূর্ব থানায়। ওই তিন থানায় তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারীর সংখ্যা ৬ জন।

যে সময়টায় ছিনতাই বেশি
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে মূলত মধ্যরাত থেকে ভোরে তৎপর থাকে🍸 ছিনতাইকারীরা। তারা ভোরে রিকশায় বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশন থেকে বাসামুখী অথবা বাসা থেকে স্টেশনমুখী যাত্রীদের লক্ষ্য๊বস্তুতে পরিণত করে। কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন আড়তমুখী কাঁচামাল ও মাছ ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য করেও তারা ছিনতাইয়ে নামে। নির্জন অলিগলিতে ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে পথচারীদের টাকাপয়সা কেড়ে নেয় কোনো কোনো ছিনতাইকারী চক্র। 

এলাকাভেদে ছিনতাইয়ের ধরনে পার্থক্য আছে। যেমন পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিমানবন্দর সড়কে পুলিশ, ডিবিসহ (গোয়েন্দা পুলিশ) বিভিন্ন সংস্থার পরিচয়ে বেশির ভাগ ছিনতাই হয়। তারা রাস্তায় সাজানো তল্লাশিচৌকি (চেকপোস্ট) বসিয়ে বিদেশফেরত যাত্রীদের গাড়ি থামিয়ে সবকিছু ছিনিয়ে নেয়।
গত বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার🍷൩ দিকে রাজধানীর বনানী ফ্লাইওভারে পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায় একটি চক্র।

এদিকে অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির তৎপরতা মূলত বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেলস্টেশন ✃ঘিরে। পথেঘাটে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, ব্যাগ, স্বর্ণালংকার টান দিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় ‘টানা পার্টি’।

ছিনতাইকারীদের নামের তালিকা
রাজধানীর কোন এলাকায় কার নেতৃত্বে ছিনতাই হয়, তাও উল্লেখ করা হয়েছে ডিএমপির তালিকায়। যেমন মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকা থেকে কাজীপাড়া হয়ে শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এলাকায় ছিনতাইয়ের নিয়ন্ত্রণ করেন মো. সবুজ (২৫)। মিরপুর ১০ (অরিজিনাল ১০), পূরবী সিনেমা হল ও মিরপুর ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সক্রিয় আরিফুল ইসলাম ও জুবায়ের হোসেন ওরফে রাসেলের নেতৃত্বাধীন চক্র।
পান্থপথ ও বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স এলাকায় সক্রিয় মো. সেন্টুর (৩৪) নেতৃত্বাধীন চক্র। সোনারগাঁও ক্রসিং এলাকায় ছিনতাই করে মো. তৌসিফ (২৪) নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বাধীন ছিনতাইকারীদের একটি দল। এ ছাড়া পান্থপথ মোড় থেকে গ্রিন রোড এলাকায় তারেক ওরফে সাগরের নেতৃত্বে ছিনতাই করা হয়। এছাড়া শাহবাগ এলাকায় মো. খোরশেদ আলম ও মো. ফেরদৌস, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায় মিরাজ হোসেন, তোফাজ্জল, আলামিনসহ আটজন, গুলশান–১ নম্বরে শফিকুল ইসলাম, মো. আলম, ইসমাইল হোসেন, নূরে আলমসহ সাতজন, ভাটারায় মো. আরিফুর রহমান, মো. জিমানসহ ১১ জন, বাড্ডা ও আফতাবনগরে মো. দীন ইসলাম, মো. মুন্না, মো. মামুন, মো. সবুজসহ ১২ জন এবং ধানমন্ডি এলাকায় মো. সাব্বির শেখ, মকবুল হোসেন, ফালান সিকদারসহ মোট ১৪ জন ছিনতাই ও সমজাতীয় অপরাধ করে। আদাবরের শেখেরটেকে মো. সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বের ছিনতাই চলে।
বিমানবন্দর ও আশপাশꦕ এলাকায় ছিনতাইয়ে জড়িত মো. মাসুদ, হৃদয় হোসেন, মো. রাজীব, শাকিলসহ ২৬ জন। গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ছিনতাইয়ে সক্রিয় হৃদয় 🅷হাসান কালা চান ওরফে কালা ও শফিকুল ইসলাম ওরফে বিপ্লব।

পুলিশ বলছে, ছিনতাইকারীরা ধরা পড়লেও বারবার জামিনে বেরিয়ে একই অপরাধে জড়ায়। যেমন কাজীপাড়ায় দন্তচিকিৎসক খুনের ঘটনায় রায়হান ওরফে সোহেল, রাসেল হাওলাদার, আরিয়ান খান হৃদয় ও সোলায়মান নামের চার ‘ছিনতাইকারী’কে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। পুলিশ জানিয়েছে, ছিনতাইয়ের অভিযোগে রায়হান ও রাসেলকে আগেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে ঘটনার কিছুদিন আগে জামিনে বেরিয়ে আবার ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা।
পুলিশের এ ধরনের তালিকাও নতুন কিছু নয়। ২০০৮ সালে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার নাইম আহমেদ কার্যকরভাবে ছিনতাই প্রতিরোধের লক্ষ্যে ‘ছিনতাই প্রতিরোধ নির্দেশিকা’ বের করেছিলেন। ওই নির্দেশিকায় ডিএমপির তখনকার ৩৩ থানায় ৫৪৪টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়, যেখানে ছিনতাই হতো।
তালিকা হলেও ছিনতাই কমছে না কেন—জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ব🌳লেন, “বাজারে আর্থিক লেনদেন বেড়েছে। আবার কর্মসংস্থানের অভাব ও বেকারত্ব রয়েছে।♏ এসব কারণে কিছু ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। তবে তা অস্বাভাবিক পর্যায়ে যায়নি।”