রাজধানী ঢাকার যে কোনো রাস্তার দুপাশে তাকালেই চোখে পড়বে বাংলা লেখার চেয়ে বিদেশি ভাষায় লেখা বিভিন্ন নামফলক বা বিলবোর্ডের। সেইসঙ্গে বড় শপিংমল থেকে ক্ষুদে চায়ের দোকান-বেশিরভাগের🧸ই ইংরেজি ভাষায় লেখা নাম সাইনবোর্ড। অথচ বাংলা ভাষার অধিকারের জন্য রক্ত দিয়েছিল হাজারো বাঙালি।
এদিকে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে ন💜ানা আদেশ ও নির্দে🐓শনা জারি হয়েছে দেশে। তবুও অবহেলায় আছে এই ভাষা।
বাংলা ভাষা প্রচলন আইন ১৯৮৭-এর ৩ ধারা অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড ও নামফ𒊎লকে প্রতিষ্ঠানের নাম বাংলায় ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
পাশাপাশি ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সব ধরনের সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বরপ্লেট, সরকারি দপ্তরের নামফলক ও গণমাধ্যমে ইংরেজ🍒ি বিজ্ঞাপন ও মিশ্র ভাষার ব্যবহার বন্ধ করতে সরকারকে আদেশ দেন। সে আদেশের রায় এখনো শতভাগ বাস্তবায়ন হয়নি।
বাংলা ভাষা ব্যবহার না করলে এবং এ সংক্রান্ত আইনটি লঙ্ঘন করলে অসদাচরণের দ💃ায়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ জারি হলেও এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কারও বিরুদ্ধে।
এ নি💛য়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, “সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিতে সব সরকারই শুধু আদেশ–নির্দেশ দিয়ে গেছে, সেসবের কঠোর প্রয়োগ কেউ করেনি। এটাকꦯে রক্তে অর্জিত বাংলা ভাষার প্রতি স্পষ্টত অবহেলা ও উদাসীনতা বলেও অভিযোগ করেন বেঁচে থাকা এ সব ভাষা সৈনিকরা।
সরজমিনে রাজধানীর চিত্র
বাংলা ভাষার এমন অবহেলা দেখতে সরজমিনে চোখ রাখে সংবাদ প্রকাশ টিম। রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমন্ডি, গুলশান, বারিধারাܫ, বনানী💜 ও উত্তরায় বাংলা ভাষার অবহেলা চোখে পড়ার মতো।
ধানমন্ডি এলাকার প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নামফলক ইংরেজি শব্দে লেখা। দোকানপাটসহ প্রায় সর্বত্রই বাংলার প্রতি অবজ্ঞা ও অবহেলার নজ꧟ির ধানমন্ডিতে দেখা যায়।
অন্যদিকে রাজধানীর গুলশান, বনানী ও বারিধারা এল🔯াকায়ও একই চিত্র। এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ইংরেজি শব্দে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম রাখার প্রবণতাই বেশি। এছাড়া ইংরেজিতে (রোমান হরফ) লেখা সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড ও বিদেশি নামফলকের ছড়াছড়ি।
রাজধানীতে অবস্থিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল, দোকান🥃পাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ সাইনবোর্ড ইংরেজিতে লেখা। তবে সরকারি দপ্তরের সাইনবোর্ড বা নামফলক বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাংলায় রূপান্তর হয়ে গেছে।
এ ছাড়া যা🧸নবাহনের ড🐎িজিটাল নম্বরপ্লেটগুলো বাংলায় সরবরাহ হওয়ার কারণে এ ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ অনেকটাই বাস্তবায়ন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের মতামত
বিলবোর্ড ও প্রতিষ্ঠানের নামফলকে বাংলা ভাষার ব্যবহারে যে আদালতের নির্দেশ রয়েছে তা অনেকেই জানেন নܫা। তারা বলছেন, “তাদের ব্র্যান্ডের নাম ও লোগো ইংরেজিতে হওয়ার কারণে তারা ইংরেজিতেই সাইনবোর্ড তৈরি করেছেন।”
ব্যবসায়ীরা বলেন, “এখন ক্রেতারা ইংলিশের ও🐟পর গুরুত্ব দিচ্ছেন। ইংরেজিতে নাম থাকলে ক্রেতাদের আকর্ষণ বেশি হয়, যার কারণে ইংলিশে নাম দেওয়া।”
ভাষা সৈনিকের মতামত
এদিকে ৭০ বছর আগে যারা ভাষার জন্য লড়াই করেছিলেন, তারা এটাকে মোটেই ভাল✱ভাবে দেখছেন না। তাদের অভিযোগ—যোগ্য সম্মান দেওয়া হচ্ছে না রাষ্ট্রীয় ভাষাকে।
এ বিষয়ে ভাষা সৈনিক ইঞ্জিনিয়ার সাবির হোসেন চৌধুরী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বাংলা ভাষার এমন অবহেলা দেখে বুকে ব্যথা লাগে। এমন উদাসীনতা ও অবহেলার কারণেই সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার আজও নিশ্চিত করা যায়নি। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও আদালতের নির্দেশসহ এত সব উদ্যোগ থাকার পরও বাং🎀লা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমন ♋অবনতি শুধু মাত্র আমাদের সদিচ্ছার অভাবে।”
এই🃏 ভাষাসৈনিক আরও বলেন, “বিচার বিভাগকে সালাম জানাতেই হয়। কারণ প্রত্যক্ষ কাজ না হলেও বিচারকরা বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়ে ভেবেছেন, এটা কার্য🥀কর করার নির্দেশও দিয়েছেন তারা।”
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) যা বলছে
অন্যদিকে ট্রেড লাইসেন্স (ব্যবসা করার ꦓঅনুমতি) নেওয়ার সময় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সাইনবোর্ডে বাংলা ব্যবহারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়। অতিরিক্ত একটি সিল দিয়ে ট্রেড লাইসেন্সে 💛লেখা থাকে, ‘সাইনবোর্ড/ব্যানার বাংলায় লিখতে হবে’।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “সব লাইসেন্স অনুমতিতে আমরা বলে দিই সাইনবোর্ড অবশ্যই বাংলায় করতে বা লিখতে হবে। কোনো বিদেশি সংস্থা যদি তাদের একান্তই ইংরেজিতে সাইনবোর্ড প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্র✤ে এক༺টা অংশ বাংলা লিখতে হবে।”
এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “সাইনবোর্ডে বাংলার ব্যবহার করার আইন আছে। এই আইন বাস্তবায়ন আমা🌸দের দায়িত্ব। আমরা দায়িত্ব থেকে অভিযান বা শাস্তি দিতে পারি প্রতিষ্ঠানকে, কিন্তু সবার চেতনা থেকে যদি ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা না 𝓀আসে তাহলে আইন দিয়ে কী হবে?”
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “ডিএসসিসি এলাকায় যত বিলবোর্ড থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেখ🐎ানে বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করবে ডিএসসিসি।”
শিক্ষাবীদদের মন্তব্য
বাংলা ভাষার এমন অবহেলা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রৌবায়েত ফেরদৌস সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর প্রস্তাব গৃহীত হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য এখনও আমরা সেই কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। রাজধানী ঢাকাসহ প্রতিটি জেলা শহরে এখনও নির্ভুলভাবে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে পা🎃রিনি আমরা। মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের রক্তের ঋণ পরিষদের জন্যই নির্ভুলভাবে বাংলার প্রচলন করা জরুরি।”