দ্বিতীয় সন্তানের জন্মে প্রথম সন্তানের হিংসা

ঝুমকি বসু প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২২, ০৫:১১ পিএম

জামিল আর মিলা দম্পতির তিন বছরের কন্যা দিতি। তাকে নিয়ে খুব সুখেই দিন কাটছিল তাদের। সমস্যাটা শুরু হলো নীল জন্মের পর থেকে। কিছুতেই নীলকে পরিবারে মেনে নিতে পারছে না দিতি। বাবা-মা ওকে কোলে নিলেই দিতির কান্না শুরু হয়ে যায়। ওর চিৎকার-চেঁচামেচিতে ছোট ভাইটিকে নামিয়ে দিয়ে শেষে ওকেই কোলে তুলতে হয়। মা একটু ওকে আদর করলেই দিতি তেড়ে উঠে মারতে যায়। জামিল-মিলার বড়ো ভয় হচ্ছে, কখন না কোন মারাত্মক বিপদ ঘটে যায়। সারাক্ষণ এত চোখেচোখে রাখাটাও তো সম্ভব হয় না। 
দিতির ক্ষেত্রে যেটা ঘটছে, এটাকে বলে সিবলিং রাইভালরি বা ভাইবোনের জন্ম নিয়ে হিংসা। ভালোবাসা ভাগ হয়ে যাওয়া কিংবা নিরাপত্তাজনিত কারণে কিছু কিছু শিশু, ভাইবোনের জন্ম হলে তাকে সহ্য করতে পারে না। আর এ কারণেই জন্ম নেয় হিংসা। বিশেষ করে প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটে বেশি। তবে এই স📖মস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না, তা কিন্তু নয়। এক্ষেত্রে পরিবারে দ্বিতীয় সন্তানের আগমন টের পাওয়া মাত্রই প্রথম সন্তানকে মানসিকভাবে তৈরি করে নিতে হয়। কিভাবে আপনার প্রথম সন্তানের মানসিক প্রস্তুতি শুরু করবেন, সেটাই জানাচ্ছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার।

১. প্রথম সন্তানকে বোঝান যে, একা একা খেলাতে কোনো আনন্দ নেই। তাই ওর জন্য আপনারা একজন খেলার সাথী আনবেন। ক্রিকেট খেলতে হলে যেমন একজনকে বল করতে হয়, আর অন্য একজনকে ব্যাট করতে হয়, তেমন রান্নাবাটি খেলায় একজনকে বাজার করতে হয়, অন্যজনকে রাঁধতে হয়। এভাবে ও যে যে খেলাগুলো খেলে, তা দুজন 🍸মিলে একসঙ্গে খেললে যে আনন্দ পাওয়া যায় তার উদাহরণ দিন।

২. দু💜জনের জন্য একসাথে শপিং করুন। জামা-কাপড়, খেলনা কিনুন ওকে সঙ্গে নিয়ে। এতে ও বুঝতে পারবে নতুন ভাই বা বোন এলে সে বঞ্চিত হবে না। আপনারা ওর কথাও সমানভাবে ভাবছেন।

৩. বুঝতে না দিয়ে অল্প অল্প করে ওকে স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা করুন। যেমন নিজের হাতে খাবার খাওয়া, পটিতে বসা, জামা-কাপড় খোলা🥃 বা পরা𝕴 শেখানোর চেষ্টা করুন।

৪. ওর সঙ্গে গল্প করুন যে ও আপনার পেটের ভেতর ঠিক যেভাবে বড় হয়𓆉েছিল, ওর ছোট ভাই কিংবা বোনটাও ঠিক একইভাবে আপনার পেটের ভেতর বেড়ে উঠছে। আপনার অনাগত সন্তান নড়াচড়া করা শুরু করলে, প্রথম সন্তানকে তা কান পেতে শুনতে দিন। 

এগুলো হলো ভাইবোন জন্মানোর আগে আপনার প্রথম সন্তানের মা♉নসিক প্রস্তুতির কথা। এরপরে আসা যাক কেমন হবে আপনার নতুন শিশু জন্♊মানোর পর প্রথম সন্তানের সঙ্গে আপনার আচরণ, সেটা নিয়ে কথা :

১. নতুন শিশুকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি আপনার প্রথম সন্তানকেও অবহেলা করবেন নꦅা। ওকে মাঝে মাঝে জড়িয়ে ধরুন, আদর করুন।

২. স্বাভাবিকভাবেই নতুন জনকে মায়েদের সময়টা একটু বেশি দিতে হয়। তাই প্রথꦕম জনের সঙ্গে বাবাকে সময় কাটাতে হবে বেশি, যাতে সে একাকিত্বে না ভোগে।

৩. প্রথম সন্তান যদি নতুনজনকে কোলে নিতে চায় তাহলে দ্বিধা না করে আপনাদে🎀র সামনে ওকে🔯 কোলে নিতে দিন।

৪. ভাইবোনের ছোটখাটো কাজ ওকে দিয়ে করান। তাতে ওর উৎসা🎃হ বাড়বে। যেমন : জামা প্য💖ান্ট নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা, লোশানের বোতল এগিয়ে দেওয়াসহ আরও টুকটাক কাজ।

৫. প্রথমজনকে ব্যবহার করতে দিন দ্বিতীয়জনের প্রসাধনী। এতে ওর ভেতর বোধ তৈরি হবে💮 যে, দুজনকে বাবা-মা একই চোখেই দেখেন।

৬. নতুনজনকে দেখে প্রথমজন কিছু কিছু জিনিস অনুকরণ করতে চাইবে। এতে বাধা দেবেন না। আস্তে💯 আস্তে এটা ঠিক হয়ে যাবে।

৭. ভুলেও কাউকে প্রথম সন্তানের সামনে বলবেন🔜 না যে, ওর দুষ্টুমির কারণে বা ওর পেছনে ꦅসময় দিতে গিয়ে আপনি নতুনজনকে ঠিকমতো যত্ন নিতে পারছেন না। 

৮. ভাই-বোন একটু বড় হলে দুজনের জন্য একইরকম খেলনা বা খাবার জিনিস কিনুন। তারপর সেটি প্রথম সন্তানের হাত দিয়ে দ্বিতীয়জনকে দিতে দিন। তাহলে ওর ভেতর তৈরি হতে 🌃শুরু করবে শেয়ারিং প্রবণতা।