দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দেওয়া এক নেতা সাবেক সোভি♚য়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ। মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) ৯১ বছর বয়সে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা।
১৯৩১ সালের ২ মার্চ রাশিয়ার স্টাভরোপোল অঞ্চলের এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন গর্বাচেভ। ১৯৪৬ সালে কিশোর বয়সেই তিনি যোগ দিয়েছিলেন তরুণদের কমিউনিস্ট লিগ কমোসোমল-এ। পরে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি কৃষি খামারে চালিয়েছেন কম্বাইন হারভেস্টার। এভাবেই তার চম♔কপ্রদ রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয়েছিল।
মিখাইল গর্বাচেভ ১৯৫২ সালে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আইন বিভাগে পড়াশোনা শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হয়েছিলে🦩ন তিনি। এরপর ১৯৭০ সাল পর্যন্ত স্টাভরোপোলের আঞ্চলিক কমিউনিস্ট পার্টিতে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। হয়েছিলেন আঞ্চলিক কমিটির ফার্স্ট সেক✤্রেটারি।
তার প্রতিভা ও দক্ষতার কারণে ১৯৭১ সালে তাকে সোভিয়েত ইউনিয়ন কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদ 🍬দেওয়া হয়। এভাবেই শুরু হয় তার𝔍 ইতিহাস রচনার দৌড়।
১৯৮০ সালে তিনি পার্টির নির্বাহী কমিটি পলিট ব্যুরোর সদস্য হন। ধীরে ধীরে তিনি সেখানকার সবচেয়ে সক্রিয় সদস্যে পরিণত হয়েছিলেন। পার্টিতে তার অনবদ্য ভূমিকার কারণে ১৯৮৫ সালের ১১ মার্চ পলিট ব্যুরোর সাধারণ সম্পাদক নিꦆর্বাচিত হন। এরই মাধ্যমে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বকনিষ্ঠ চেয়ারম্যান ও সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর নেতা হয়ে ওঠেন। পরে এই চেয়ারম্যান পদটি ১৯৯🍬০ সালে ‘প্রেসিডেন্ট’ নামকরণ করা হয়।
ক্ষমতায় এসে শুরুতেই দেশটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারে মনোযোগ দেন গর্বাচেভ। গ্লাসনস্ত বা মুক্তচিন্তা ও পেরেস্ত্রাইকা বা পুনর্গঠন নামে দুটি নতুন নীতি গ্রহণ করেন তিনি। এর মাধ্যমে গর্বাচেভ সোভিয়েত ꧒ইউনিয়নকে গণতান্ত্রিক ও মানবিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। অর্থনীতিতে আনতে চেয়েছিলেন মুক্ত বাজার ব্যবস্থা।
তবে তিনি আবার সবকিছুর রাষ্ট্রীয় মালিকানাও ছাড়তে চাচ্ছিলেন না। বহির্বিশ্বের🎶 সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক গড়তে চাইলেও ঠিকভাবে বেসরকারীকরণ হয়নি সোভিয়েত ইউনিয়েনে।
গর্বাচেভের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কারণে দেশটির জনগণ মুক্ত চিন্তা এবং মতপ্রকাশের অভূতপূর্ব স্বাধীনতা লাভ করে। তারা হঠাৎ করে বিলাসী জীবন যাপন করতে আরম্ভ করেন। তবে দেশটির অর্থনীতি ধীরে ধীরে মুখ থুবড়ে পড়ে। পাশাপাশি সোভিয়েত ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্যান্য দেশগুলোতে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। সেগুলোতে প্রতিষ্ঠিত হয় গণতান্ত্ꦍরিক সরকার। এভাবেই ভাঙন ধরে সোভিয়েত ইউনিয়নে। পার্টির হিসাবে যা ছিল গর্বাচেভের ব্যর্থতা।
ফলে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গর্বাচেভকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পরিকল্পনা করে কট্টর কমিউনিস্টরা। তারা সফলও হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন মিখাইল গর্বাচেভ এব𝐆ং সেদিনই ভেঙে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। এরপর ১৯৯৬ সালে তিনি ক্ষমতায় আসার জন্য আবার নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে জনগণ তাকে সমর্থন দেয়নি।
ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণে থাকা দেশসমূহ, আফগানিস্তান থেকে সেনাꦆ প্রত্যাহার, ১৯৯০ সালে বার্লিন ওয়াল ভেঙে দুই জার্মানি একত্রকরণসহ অসংখ্য সংস্কারমূলক কাজ করেছিলেন। ফলে স্তিমিতি হয়েছিল স্নায়ুযুদ্ধ। বিশ্বরাজনীতিতে তার অবদানের জন্ꦇয ১৯৯০ সালে তাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে সম্মানিত করা হয়।
রাজনৈতিক জীবনে মিখাইল গর্বাচেভ হয়তো সবাইকে খুশি করতে পরেননি, তবে ইতিহাসের পাতায় তার নাম লেখা থাকবে চিরদিন।