নায়ক রাজ রাজ্জাক তখন তার রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন থেকে নিজের পরিচালনায় নতুন একটি সিনেমা নির্মাণ শুরু করেছেন। সেই সিনেমার গান লেখার জন্য একদিন সন্ধ্যাবেলা রাজ্জাক সাহেবের বাসায় গেলাম। গিয়ে দেখি সেখানে আমাদের ঘনিষ্ঠজন গুণী নির্মাতা কামাল আহমেদও উপস্থিত। রাজ্জাক সাহেব তখনও বাসায় এসে পৌঁছাননি। আমি, কাম🐼াল আহমেদসহ আরও বেশ কয়েকজন তখন রাজ্জাক সাহেবের অপেক্ষায়🐲।
বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে থাকতে রাজ্জাক সাহেবের বাসার বাইরে এসে হাঁটাহাঁটি🎐 করছি। আমাকে বাইরে আসতে দেখে কামাল আহমেদও বাইরে এলেন। বললেন, রাজ্জাক সাহেবকে কে তো পাওয়াই যায় না, আপনাকেও তো ঠিকমতো পাওয়া যায় না গাজী ভাই। ভালোই হলো আমার নতুন সিনেমার হিরোর জন্য এসে গীতিকারকেও পেয়ে গেলাম।
রাজ্জাক-শাবানা জুটিকে নিয়ে ভাঙ্গাগড়া নামে নতুন একটি সিনেমা নির্মাণ করতে যাচ্ছি, আমার এই সিনেমার টাইটেল গান🍨টা আপনাকে লিখে দিতে হবে। রাজ্জাক সাহেব বাসায় আসতে আসতে গানটা আমাকে লিখে দেন, সুবল দাস আমার সিনেমার সংগীত পরিচালক। আমি বললাম, লিখতে এলাম রাজ্জাক সাহেবের গান, রাজ্জাক সাহেব যেহেতু এখনও♔ বাসায় নেই, তাহলে চলুন সময়টা কাজে লাগাই।
কামাল আহমেদ ভীষণ খুশ🧸ি হয়ে নিজেই তার🍷 ব্যাগ থেকে একটি ডায়েরি আর কলম বের করে আমাকে দিলেন এবং ভাঙ্গাগড়া সিনেমার গল্প এবং গানের সিচ্যুয়েশন বুঝিয়ে দিলেন। সিচ্যুয়েশন শুনে কি লেখা যায় তা নিয়ে ভাবছি। তখনও একটি লাইনও লিখতে পারিনি এমন সময় রাজ্জাক সাহেব এসে উপস্থিত হলেন। আমার হাতে ডায়েরি আর কলম দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কি লিখছো গাজী?
আমি তাকে বিষয়টি খুলে বললাম। রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ছিল বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু। তিনি মজা করে হাসতে হাসতে বললেন, শালা আমার বাড়িতে এসে তুমি কামালের সিনেমার গান লিখছো?
আমিও হাসতে হাসতে বললাম, যে সিনেমার গান লিখছি সেই সিনেমার হিরো তো তুমিই। ঠিক আছে, কামাল আহমেদ তাহলে এই হিরোকে বাদ দিয়ে অন্য কোন হিরোকে সিনেমায় নিয়ে আসুকౠ, আর আমরা সেই সিনেমার হিরোর বাসায় গিয়ে গান লিখি।
আমাদের কথায় সেখানে হাসির রোল পড়ে গেল। রাজ্জাক সাহেব অট্টহাসি দিয়ে বললেন, ‘তোমার সঙ্গে যুক্তিতে পারা যায় না। কি লিখছো এবার তাড়াতাড়ি শেষ করে দেখাও তো।’
রাজ্জাক সাহেব অন্যদের সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমি তার ড্রয়িংরুমের এক পাশে বসে গানটি লিখলাম। লেখা শেষ করতেই কামাল আহমেদ এবং রাজ্জাককে দেখালাম। রাজ্জাক বললেন, ‘শালা তুমি কি ফাঁকি দিয়েছো নাকি? এই মাত্রই না আমার সঙ্গে কথা বললে, এত তাড়াতাড়ি কি লিখেছো? দেখাও�🐠� তো...।’
পরিচালক কামাল আহমেদ গানটি দেখার আগেই রাজ্জাক সাহেব গানটি পড়ে খুব খুশি হয়ে বললেন, ‘এই না হলে গাজী! পরিচালকের উদ্দেশ্যে বললেন, কামাল তোমার সিনেমার ভালো একটা গান হয়ে গেছে। এই গানটা দেখো মানুষের মুখে মুখে থাকবে।’ পরিচালক কামাল আহমেদও💦 ভীষণ খুশি হলেন। দেশের প্রখ্যাত সুরকার সুবল দাস বরাবরের মতোই অপূর্ব সুর করলেন। সৈয়দ আব্দুল হাদী ভাই তাঁর দরাজ কণ্ঠে এতটাই দরদ দিয়ে গানটি গাইলেন, সেই থেকে এখনও গানটি মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়।
গানের কথা-
চলে যায় যদি কেউ বাঁধন ছিঁড়ে
কাঁদিস কেন মন
ভাঙ্গাগড়া এই জীবনে আছে সর্বক্ষণ
হাসির পরে কান্না আছে দুঃখের পরে সুখ
আঁধার রাতের শেষে যেমন দেখিস আলোর মুখ
জন্ম নিলেই ভুলিস কেন আছে রে মরণ
দুদিনের এই দুনিয়াতে সবাই মুসাফির
এ সংসারের মোহ মায়ায় হই কেন অধীর
যায় না মোছা কখনো যে ভাগ্যেরই লিখন
গীতিকার : গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুরকার : সুবল দাস, শিল্পী : সৈয়দ আব্দুল হাদী, চলচ্চিত্র🍸 : ভাঙ্গাগড়া, পরিচালক : কামাল আহমেদ, মুক্তির সাল : ৯ অক্টোবর ১৯৮১
বাংল🌠াদেশের কিংবদন্তি গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার প্রণীত প্রকাশিতব্য ‘অল্প কথার গল্প গান’-এর ৫ম খণ্ড থেকে। বইটি প্রকাশিত হবে অমর একুশে বইমেলা ২০২৫।
সুত্র: ভাষাচিত্র প্রকাশনা