স্থাপত্যশৈলী ও ইতিহাসখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র নাটোর রাজবাড়ি। নাটোর শহরের বঙ্গজ্বলে ১২০ একর জমির ওপর নাটোর রাজবাড়ি অবস্থিত। ইতিহাস থ✨েকে জানা যায়, অষ্টাদশ শতকের শুরুতে নাটোর রাজবংশের উৎপত্তি হয়। ১৭০৬ সালে পরগনা বানগাছির জমিদার গণেশ রায় ও ভবানী চরণ চৌধুরী রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হয়ে চাকরিচ্যুত হন। পরে দেওয়ান রঘুনন্দন জমিদারটি তার ভাই রামজীবনের নামে এ স্থানটি বন্দোবস্ত নেন। রাজা রামজীবন নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা হিসেবে প্♌রতিষ্ঠা লাভ করেন ১৭০৬, মতান্তরে ১৭১০ সালে। এভাবে নাটোর রাজবংশের পত্তন হয়। ১৭৩০ সালে রামজীবন মারা যান। ১৭৩০ সালে রানী ভবানীর সঙ্গে রাজা রামজীবনের দত্তক পুত্র রামকান্তের বিয়ে হয়।
রাজা রামজীবনের মৃত্যুর পর রামকান্ত নাটোরের রাজা হন। ১৭৪৮ সালে রাজা রামকান্তের মৃত্যুর পরে নবাব আলীবর্দী খাঁ রানী ভবানীর ওপর জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন। বগুড়া জেলার ছাতিনা গ👍্রামের আত্মরামচৌধুরী ও জয়দুর্গা দেবীর প্রথম কন্যা ছিলেন রানী ভবানী। মাতৃকুলের দিক থেকে তিনি ছিলেন উচ্চবংশীয়। রানী ভবানী ছিলেন খুব সুন্দরী এবং আধ্যাত্মিক গুণের অধিকারী। তার স্বামীর মৃত্যুর পর অর্ধেক বঙ্গে রাজত🐽্ব করেন। তাই তাকে বলা হতো অর্ধ বঙ্গেশ্বরী। রানী ভবানী একটি ঐতিহাসিক চরিত্র।
রানী ভবানী উদারপন্থী, প্রজাবৎসল জমিদার ছিলেন। জমিদার হিসেবে তার উদারতা ও বদান্যতা ছিল প্রণিধানযোগ্য। রানী ভবানীর এক🌼টি মাত্র কন্যাসন্তান ছিল, নাম তারা সুন্দরী। ১৮০২ সালে রানী ভবানীর মৃত্যুর পর তার দত্তকপুত্র রামকৃষ্ণ রাজ্যভার গ্রহণ করেন। রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর রাজবাড়ী বড় তরফ ও ছোট তরফ এ দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়।
রানী ভবানীর স্মৃতিবিজড়িত মূল ভবনটিই ‘রানী ভবানীর রাজবাড়ী’ অর্থাৎ ঐতিহ্যবাহী নাটোর রাজবাড়ি। গোটা রাজবাড়িতে ছোট-বড় ৮টি ভবন, ২টি গভীর পুকুর ও ৫টি ছোট পুকুর আছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রবেশমুখে রয়েছে বিশাল একটি পুকুর, সেই পুকুরের শানবাঁধানো ঘাট দেখে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। জলটুঙ্গি, তারকেশ্বর, গোপীনাথ, আনন্দ, ও মহাল নামে রাজবাড়ীর ছোট পুকুরগুলির নাম। রাজবাড়ি ঘিরে আছে দুই স্তরের বেড়চৌকি। জানা যায় এই বেড়চৌকি রাজবাড়িতে বহিঃশত🌠্রুর হাত থেকে রক𝄹্ষা করত।
রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে আটটি মন্দির 🅺রয়েছে, যার প্রাণ এক বিশাল শিবমন্দির। এখানে এখনো রীতি মেনে নিয়মিত পূজা হয়। দৃষ্টিনন্দন মন্দিরের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। মন্দিরকে ঘিরে আছে একটি শিবমূর্তি, ফণা তোলা সাপের মূর্তি, একজন বাউলের মূর্তিসহ নানা রকম শৈল্পিক কাজ। মন্দিরটির দেয়ালজুড়ে টেরাকোটার শিল্পকর্ম।
হানি কুইন নামে একটা রেস্টহাউস, ১টি বৈঠকখানা, মালখানা, রানী ভবানীর উন্মুক্ত মঞ্চ ও ১টি মৃত্যুকূপ রয়েছে। পুরো রাজবাড়ি ঘিরে রয়েছে হরেক রকমারি বিশাল সব গাছ। রয়েছে নানা জাতের ফুলগাছ। পাশেই নবনির্মিত কমিউনিটি সেন্টার। কমিউনিটি সেন্টার ধরে সামনে গেলে তারকেশ্বর মন্দির। আরেকটু সামনে এগিয়ে ডান দিকে বিশাল মাঠ। এই 💞অংশের নাম ছোট তরফ। এর ঠিক উল্টো দিকে বড় তরফ। যমজ প্রায় বড় তরফের সামনে রয়েছে বিশাল পরিখা⛄ ও পুকুর। সামান্য দূরেই রানী মহলটিতে রানী ভবানী বাস করতেন। এখন রানীমহল আছে নামমাত্র। শুধু সাইনবোর্ডে লেখা দেখে চেনা যায়। এখানে একটি অতিথিশালা আছে, নাম মাত্র। তবু ভগ্নপ্রায় অতিথিশালা দেখে সে সময়কার নাটোর রাজার অতিথিসেবার কিছুটা নমুনা পাওয়া যায়।
মহারানী ভবানীর পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে জগদীন্দ্রনাথ ছিলেন স্বনামধন্য রাজা। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র যোগীন্দ্রনাথ বড় তরফের রাজা হন। কিন্তু তিনি কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। যোগীন্দ্রনাথের দুই পুত্র একে একে রাজ্যভার নিলেও তাদের নিজেদের সন্তান না থাকায় রাজবংশের পরিসমাপ্তি ঘট𓂃ে।