ছাত্র-জনতার একদফা আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। বহু থানা ও ট্রাফিক পুলিশ বক্সে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে জীবনের নি🐬রাপত্তার শঙ্কায় ট্রাফিকসহ সব ইউনিটের পুলিশ সদস্য চলে যান 🧜কর্মবিরতিতে। পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়ে সারা দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা।
এমন পরিস্থিতিতে সড়কের শৃঙ্খলায় 🍬হাল ধরেন শিক্ষার্থীরা। সারা দেশের বেশিরভাগ সড়কে স্বপ্রণোদিত হয়ে তারা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করেন। ৫ আগস্ট বিকেল থেকে সীমিত পরিসরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ শুরু হলেও পরবর্তীতে তা ব্যাপক পরিসরে বেড়ে যায়। ক্রমান্বয়ে সারা দেশে তা ছড়িয়ে পড়ে।
দায়িত্ব পালনকালে চালকদের নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোর অনুরোধ জানায় শিক্ষার্থীদের। হেলমেট না পরে যারা মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন, তাদের থামিয়ে হেলমেট পরার জন্য অনুরোধ জানায়। অনেককে আবার শাস্তি হিসেবে কিছু সময় দাঁড় করিয়েও রাখতে দেখা যায়। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্স এলে অন্য গাড়ি থামিয়ে সবা💖র আগে সেটিকে যেতে দিতেও দেখা গেছে। এসব ঘটনায় শিক্ষার্থীরা প্রশংসা লাভ করেন।
রাস্তায় সিগন্যালের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা ফুটপাতে হাঁটা, নির্দিষ্ট স্থান থেকে গাড়িতে ওঠানামা ও গণপরিবহনগুলোকে নির্দিষ্ট স্থানে থামার অভ্যাস করানোর চেষ্টা করেন। নিয়ম মেনে চলতে মানুষ ও গাড়িচালকদের অনেক ক্ষেত্রে তারা বাধ্য করেন। এতে অবশ্য অনেককে কিছুটা ক্ষুব্ধ হতেও দেখা যায়।൲ তবে সুশীল সমাজের বেশিরভাগই শিক্ষার্থীদের এমন দায়িত্ব পালনে খুশি।
মিজানুর রহমান নামে এক অভিভাবক জানান, শিক্ষার্থীরা সড়কে বাসের আলাদা লাইন ও নির্দিষ্ট স্থানে বাস থামি𝕴য়ে যাত্রী ওঠানামা, ইমারজেন্সি লাইন ও ব্যক্তিগত পরিবহনের লাইন তৈরি করেছে। এতে সড়কে শৃঙ্খলা ব🔥িরাজ করছে। তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার রয়েছে বলে জানান তিনি।
ধানমন্ডি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা তারিকুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে সড়কের সৌন্দর্য ফিরিয়ে এনেছে। পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যবস্থায় এনে൲ছে ব্যাপক পরিবর্তন। খালেদ বিন সামি নামের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, “সুন্দরভাবে দেশ চলুক। আমর✤া শিক্ষার্থীসহ সবাই সচেতন হলে মানবিক দেশ গঠন সহজ হবে। আশা করছি তরুণদের হাত ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।”
শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার ব্যবস্থা
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এরপরই রাজধানীসহ সারাদেশের সব থানা পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে। নিরাপত্তাহীনতায় কর্মবিরতি ঘোষণা করে বসেন পুল♈িশ কর্মকর্তারা। তবে পুলিশের অনুপস্থিতিতে দেশের দায়িত্ব নিয়ে নেন শিক্ষার্থীরা। দিন-রাত কাজ করে যান সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে তাদের কাজে খুশি হয়ে খাবার, পানি ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে পাশে দাঁড়ান স্থানীয় লোকজন ও বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেই তালিকায় যুক্ꦯত হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি)।
ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা
রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও কাজ করছেন। এজন্𒉰য তারা সম্মানি ভাতা পাচ্ছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গত ২১ অক্টোবর বলেন, “প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০০ ছাত্র ট্রাফিক সপ্তাহে কাজ 🐼করবেন। পরে এই সংখ্যা বাড়ানো হবে। তাদের সম্মানি ভাতা দেওয়া হবে।“ বর্তমানে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে প্রশিক্ষিত রোভার স্কাউট ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা সড়কের মোড়ে মোড়ে দায়িত্ব পালন করছেন।
শিক্ষার্থীদের ৫ পরামর্শ
প্রায় ৪ মাস ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনে♏র অভিজ্ঞতার পর তারা জানিয়েছেন এই কাজ সহজ নয়। এখানে শুধু ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণই নয় আরও অনেক কাজ আছে। আর সেই অভিজ্ঞতা থেকে সড়কে যানজট নিরসনে ৫ পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
১. ট্রাফিকে লোকবল বাড়ানো
ট্রাফিক পুল♚িশের লোকবল বাড়াতে হবে। সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব না হলে সহায়ক হিসেবে আনসার, এপিবিএনের সদস্যদের কাজে লাগানো যায়। কোনো কোনো রাস্তায় রোভার স্কাউট বা বিএনসিসির সদস্যরাও সহায়তা করতে পারেন।
২. অভ্যাসের পরিবর্তন
অধিকাংশ গাড়িচালকই ট্রাফিকের নিয়মকানুন জানেন না। জানলেও উল্টো পথে যাওয়া কিংবা ফুটপাথে উঠে পড়ার মতো ‘ছোটখাটো’ নিয়ম ভাঙাকে তারা ‘ಞঅপরাধ’ মনে করেন না। 🌞তবে বুঝিয়ে বললে শোনেন। তাই ট্রাফিক–ব্যবস্থার সংস্কার করতে হলে আগে সামগ্রিকভাবে মানুষের অভ্যাস পরিবর্তন করা উচিত। স্কুল পর্যায় থেকে ট্রাফিকের নিয়মকানুন শেখানো উচিত।
৩. লেন মেনে চলা
বাইকচালক, রিকশাচালকেরা বারবার লেন পরিবর্তন করতে চান। বাসচালকদের মধ্যেও ওভারটেক করার প্রবণতা প্রবল। এটাও যানজটের অন্যতম কারণ। দুই–তিনজন ট্রাফিক পুলিশের পক্ষে চালকদের লেন মেনে চলার অভ্যাস ক♊রানো সম্ভব নয়। সে জন্য সাধারণ মানুষকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
৪. ফিটনেস জরুরি
ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় বড় চ্যালেঞ্জ। আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে এই সমস্যা রোধ করা সম্ভব। লোকাল বাসগুলোর বেশির ভাগেরꦰই ফিটনেস নেই। অটোরিকশাগুলোর ব্রেকের অবস্থা একেবারেই ভালো না। তাছাড়া কাগজপত্র ঠ💦িক না থাকলে চালকদের মধ্যে একধরনের বেপরোয়া ভাব দেখা যায়।
৫. গাড়ি থামার নির্দিষ্ট জায়গা
সড়কে যানবাহন যেখানে-সেখানে থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায় যানজট বেড়ে যায়। এতে লেন ঠিক রাখা কঠিন হয়ে যায়। শুধু বাস নয়; রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা ভাড়ায় চালিত বাইকগুলোর জন্যও নির্দ🍸িষ্ট জায়গা থাকা উচিত।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ শুধু ট্রাফিকের কাজই সহজ করছে ন꧅া, পাশাপাশি অনেক শিক্ষার্থী সড়কের নিয়ন-কাণুন সম্পর্কেও সচেতন হয়ে উঠছেন। ২০২৪ সালের শেষের দিকে এসে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা দেশে উল্লেখযোগ্য ঘটনা।