বারবার জাহাজডুবিতে সংকটে সুন্দরবন

এমএম ফিরোজ, মোংলা প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪, ০৬:২২ পিএম
সুন্দরবন এলাকা। ছবি : প্রতিনিধি

সুন্দরবন এলাকায় 🌞কয়লাবাহী জাহাজডুবির ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বারবার কয়লার জাহাজডুবির কারণে  সুন্দরবনের বিপর্যয়ের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়লার সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন প্রভৃতি সুন্দরবনের পানি, জীব ও বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করে। আর ক্ষতিকর মিথেন গ🦹্যাস সুন্দরবনের শ্বাসমূল উদ্ভিদ ও মাছের প্রজননের ক্ষতি করে।

সবশে𒊎ষ শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে পশুর নদের চরকানা এলাকায় ৯৫০ মেট্রিক ট𝕴ন জ্বালানি-কয়লা নিয়ে ‘এম ভি ইশরা মাহমুদ’ নামের একটি কার্গো জাহাজ ডুবে গেছে।

বন বিভাগ ২০১৫ সাল থেকে সুন্দরবনের ভেতরের নদী দিয়ে পণ্যবাহীসহ সব ধরনের জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করলেও তা কার্যকর হয়নি। আগে একটি চ্যানেল দিয়ে নৌযান চলাচল করলেও💎 এখন তিনটি চ্যানেল দিয়ে পণ্য পরিবহন হয় বলে জানꦰান নাম প্রকাশ না করে একজন বন কর্মকর্তা।

এর আগে ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর পশুর নদের চরকানা এলাকায় ৮০০ টন কয়লা নিয়ে ডুবে যায় ‘এমভি প্রিন্স অব ঘষিয়াখালী’ নামের একটি⭕ কার্গো জাহাজ। জাহাজ মালিক মো. বশির হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, তার ৩০০ টন কয়লা পানিতে মিশে গেছে। এর ঠিক একমাস আগে ৮০০ মেট্রিক টন সিমেন্ট ক্লিংকার নিয়ে মোংলা বন্দরের পশুর নদে ডুবে যায় আরেকটা কার্গো জাহাজ এমভি আনমনা-০২।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগর থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত সুন্দরবনের মধ্যে প্রায় ১৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ পশুর নদী দিয়ে জাহাজ চলাচল শুরু হয় ১৯৫৪ সালে। ৭০ বছর ধরে এই রুটে চলাচল করছে দেশি-বিদেশি জাহাজ। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা জাহꦕ𝓰াজ ১৯৭২ সাল থেকে মোংলা হয়ে সুন্দরবনের মধ্যে থাকা কালিঞ্চি, রায়মঙ্গল, কাচিকাটা, আড়পাঙ্গাসিয়া, বজবজা, আড়ুয়া শিবসা, শিবসা ও পশুর নদী দিয়ে ভারতে যাওয়া-আসা করে।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, পশুর নদী দিয়ে প্রতিদিন গড়ে দেশি-বিদেশি ২২৫টি জাহাজ চলাচল করে। আর অন্য ৭টি নদীতে প্রতিদিন এই সংখ্যা গ𓄧ড়ে প্রায় ১২০টি। এ দুটি রুটের জাহাজে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ক্লিংকার, ফ্লাইঅ্যাশ, কয়লা, ফার্নেস অ𝕴য়েল, পাথর, এলপিসি গ্যাস, খাদ্য সামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্য থাকে।

একের পর এক দুর্ঘটনায় সরাসরি কী ধরনের ক্ষতি হয় জানতে চাইলে ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, “ডলফিন মাছ ও কাঁౠকড়া কমতে শুরু করবে। বঙ্গোপসাগর থেকে বড় মাছ আমাদের মোহনায় আসে, ডিম পাড়ে। এপ্রিল মাস পর্যন্ত এরা এই এলাকায় থাকবে, আবার চলে যাবে। সামুদ্রিক মাছ বঙ্গোপসাগর থেকে এসে বাচ্চা দেয়। বাচ্চা একটু বড় হলে সেটা আবার সাগরে চলে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।”

পরিবেশবাদী ও নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ১০ বছরে একের পর এক কয়লা ও তেলবাহী জাহাไজডুবিতে শত শত টন কয়লা পানিতে মিশেছে। এর ক্ষতির দিকটি হয়তো দৃশ্যমান নয়, কিন্তু বন ও নদীর প্রাণপ্রকৃতি এরইমধ্ℱযে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদের জন্য এর ফল ভালো হবে না।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, বারবার জাহাজডুবির কারণে জাহাজে থাকা পণ্যগুলো ছড়িয়ে পড়ে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণীসহ পুরো জলজ জৈববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জলজ প্রাণী মারা যায় এবং জলজ প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়। জলজ খাদ্য শৃঙ্খলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
নদীর যে পানি দূষিত হয় তা জোয়ারের সময় বনের মাটিতেও ছড়িয়ে পড়ে। ফ🍷লে চারা 💎গজানো কমে যাওয়ারও আশংকা রয়েছে।

কয়লা থেকে দূষণের শঙ্কার বিষয়ে বাগেরহাট পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আরেফিন বলেন, কয়লার মধ্যে আর্সেনিক, সালফারসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ থাকে। দীর্ঘ সময় পানির নিচে থাকলে এই কয়লা পানির সঙ্গে মিশে পানিকে দূষিত করতে পারে। পানি দূষিত হলে পশু꧂র নদ꧃ের মাছসহ নানা ধরনের প্রাণীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।