হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষ্টি-সংস্কৃতি

সুজন সেন, শেরপুর প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২৪, ০৩:৫৮ পিএম

শেরপুরের নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকায় বাস করে হাজং, কোচ ও গারো সম্প্রদায়ের লোকজন। ওইসব উপজেলা🤡র ২৮টি ইউনিয়নে ৩৪৩টি গ্রামে লক্ষাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন নানা প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে বসবাস করে আসছে। কালের বিবর্তনে তাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে।

গারোরা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। কোচ ও হাজং সম্প্রদায়ের লোকজন সনাতন ধর্মাবলম্বী। গারোদের সমাজব্যবস্থা মাতৃ🌄তান্ত্রিক। তাদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হ✃লো বড়দিন। এছাড়াও প্রতিবছর ইস্টার সানডে, তীর্থ উৎসব, ইংরেজি নববর্ষ ও ওয়ানগালা উৎসব পালন করে থাকেন তারা। অন্যদিকে কোচদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হলো দুর্গাপূজা ও কালীপূজা। ধর্মীয় উৎসব ছাড়াও এ দুই সম্প্রদায়ই আলাদা আলাদা সামাজিক আচার অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।

জানা গেছে, ওই তিন উপজেলার সীমান্তবর্তী পানিহাটা, তাড়ানি, ফেকামাড়ি, মায়াঘাসি, নাকুগাঁও, দাওধ♑ারা🐷, আন্ধারুপাড়া, খলচান্দা, বুরুঙ্গা, বাতকুচি, সমেশ্চুড়া, খলিসাকুড়া, গাছগড়া, নয়াবিল, রাংটিয়া, শালচুড়া, ডেফলাই, গান্ধিগাঁও, নকশী, হালচাটি, গজনী, বাকাকুড়া, পানবর, জোকাকুড়া, তাওয়াকুচা, ভালুকা, সিংগাবরুনা এলাকায় কোচ ও গারো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বসবাস।

স💙্থানীয় গ🧸ারো জনগোষ্ঠীর নেতা প্রদীপ জেংচাম বলেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের কৃষ্টি সংস্কৃতি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। হারিয়ে যাওয়া বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে আছে মান্দিদামা, ক্রাম, খোল, নাগ্রা, জিপসি, খক, মিলাম, স্ফি, রাং, বাঁশের বাঁশি, আদুরী নামের বাদ্যযন্ত্র ও পোশাক দকবান্দা, দকশাড়ী, খকাশিল, দমী, রিক মাচুল আর কোচ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের পোশাক রাঙ্গা লেফেন ও আছাম। আর খাদ্যের তালিকায় আছে বাঁশের কড়াল আর চালের গুড়া দিয়ে তৈরি খাবার উপকরণ ‘মিয়া’, কলাপাতায় করে ছোট মাছ পোড়া দিয়ে খাওয়া যার নাম ‘ইথিবা’, মুরগির বাচ্চা পুড়ে বাঁশের চোঙ্গায় ভরে পেঁয়াজ ও কাচামরিচ দিয়ে ভর্তা করে খাওয়া যার নাম ব্রেংআ, মিমিল, কাঁকড়া, শামুক ও শুকরের মাংস, চালের তৈরি মদ যার নাম চু, কোচ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের কাঠমুড়ি ইত্যাদি খাবার উপকরণ এখন প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে।

সী🦩মান্তবর্তী খলচান্দা গ্রামের কোচ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিমল কোচ বলেন, “আমরা বন পাহাড়ে জীবন যাপন করে আসছি। ইতিহাস ঐতিহ্য বুঝি না, শুধু বুঝি বেঁচে থাকতে হবে।”

নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য কোচদের আছে ‘কোচ ভাষা’ আর গারোদের আছে ‘আচিক’ ভাষা। বর্তমানে এই দুই ভাষাতেও বাংলাভাষার সংমিশ্রণ হয়ে গেছে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই তাদের নিজস্ব ভাষার ফাঁকে ফাঁকে বাংলা জুড়ে দিয়ে কথা বলে থাকে।

একই গ্রামের রমেশ চন্দ্র কোচ বলেন, “আমাꦦদের কোচ ভাষায় এখন বাংলা ভাষার মিশ্༺রণ ঘটে গেছে।”

নালিতাবাড়ীর সাবেক ট্রাইবাল চেয়ারম্যান ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নে☂তা লুইস নেংমিনজা বলেন, “ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের কৃষ্টি সংস্কৃতি সংরক্ষণে নালিতাবাড়ীতে আমরা একটি ‘কালচারাল একাডেমি’ স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি।”