দিনাজপুর সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়ন। দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়ক হয়ে ইউনিয়নের সীমানার শুরুতেই রয়েছে চেহেলগাজী মাজার। ভেতরে প্রবেশ করলেই দেখা মিলবে প্রাচীন এক মসজিদের। নাম চেহেলগাজী মাজার জামে মসজিদ। তবে নেই আগের মতো জৌলুশ। বর্তমান ধ্বংসাবশেষ অবস্থা দেখে মনে হতে পারে মসজিদের বয়স পেরিয়েছে কয়েকশ বছর। তবে জরাজীর্ণ অবস্থ🌸াতেও চলে নামাজ আদায়।
অপরদিকে জেলার কাহারোল উপজেলায় রয়েছে নয়াবাদ মꦑসজিদ এবং খানসামায় রয়েছে আওকরা মসজিদ। যেসব স্থাপত্য আজও বহন করছে প্রাচীন নির্মাণ শৈলীর নিদর্শন। এসব মসজিদেও চলে নামাজ আদায়। এছাড়াও প্রতিদিনই দূর দূরান্তের পর্যটকরা ছুটে আসেন এসব মসজিদের সৌন্দর্য উপভোগের আশায়। এমন মসজিদগুলো স্থানীদের কাছে গৌরবের স্তম্ভ। স্থানীয়রা মনে করেন, এসব মসজিদগুলো সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হলে সকলেই জানতে পারবে ইসলামের সঠিক ইতিহাস।
চেহেলগাজী মাজার জামে মসজিদ
বলা হয়ে থাকে দিনাজপুর জেলায় প্রথম নির্মিত মসজিদ এটি। মসজিদের নির্মাণকা🤪ল নির্দেশক তিনটি শিলালিপির মধ্যে একটি সংরক্ষিত রয়েছে দিনাজপুর জাদুঘরে। আর তাতে লেখা রয়েছে নির্মাণের সময় ১ ডিসেম্বর, ১৪৬০ খ্রি.। হিসাব বলছে, এই মসজিদটির বয়স বর্তমানে ৫৬২ বছর পেরিয়েছে। তবে এখনও চলে নামাজ আদায়। প্রয়োজনের তাগিদে পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে নতুন মসজিদ। পুরাতন মসজিদের বয়স যতই বাড়ছে, মসজিদটি হারিয়ে ফেলছে তার আপন ঐতিহ্য।
জানা যায়, উলুঘ নুসরত খান এই মসজিদের নির্মাতা। 🐷তৎকালীন (১৪৫৯-১৪৭৪ খ্রি.) সুলতান রুকনুদ্দিন বারবক শাহের রাজত্বকালে দিনাজপুর ছিল পূর্ণিয়া জেলার ওঅন্তর্গত জোর ও বারুক পরগনার অংশ। আর এই স্থানের শাসক ছিলেন উলুঘ নুসরত খান। সুলতান রুকনুদ্দিন বারবকের রাজত্বকালে তার উজির ইকরাব খানের নির্দেশে উলুঘ নুসরত খান এই মসজিদ নির্মাণ করেন।
ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে, দেখে বোঝার উপায় নেই 🍬মসজিদটি কত গম্বুজ বিশিষ্ট ছিল। ধারণা করা হয়, বর্গাকৃতির মসজিদটির মূল স্তম্ভের ওপর একটি গম্বুজ ছিল। এ ছাড়াও পূর্ব বারান্দার ওপর ছিল তিন গম্বুজ। ভেতরের মিহরাবের কাছে ফুল, লতাপাতা ছাপ বিশিষ্ট কিছু পোড়ামাটির ফলক লক্ষ্য করা যায়। মসজিদটি বর্তমানে উপজেলা প্রশাসনের অধীনে রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ওপরে একটি টিনের চালা দেওয়া হয়েছে।
মসজিদের ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ আফজালুল হক বলেন, মসজিদের চতুর্দিক𓄧ে ঘেরা নেই🧸। ফলে গরু, ছাগল ঢোকে। এতে আরও ভেঙে যাচ্ছে মসজিদটি। এর চতুর্পাশে যদি ইটের ঘেরা দেওয়া হয়। তবে খুব ভালো হয়।
মসজিদটির বিষয়ে কথা হলꦗে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রমিজ আলম বলেন, মসজিদটি বর্তমানে সার্বিক দেখাশোনা করছে উপজেলা প্রশাসন। মসজিদটির চারদিকে একটি প্রাচীর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছ🐻ে। অর্থ বরাদ্দ পেলে বাস্তবায়ন করা হবে।
নয়াবাদ মসজিদ
জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে কাহারোল উপজেলায় রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নে অবস্থান এই মসজিদটির। ঢেপা নদীর কোল ঘেঁষা নয়াবাদ গ্রামে দৃষ্টি নন্দন এই মসজিদটিতে প্রাচীন স্থাপত্য নির্মাণ শৈলীর কারুকার্য লক্ষ্য করা যায়। আয়তাকার আকৃতির মসজিদটি ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট। মসজিদটির চারকোণে চারটি, নিচ থেকে ক্রমশ ছোট হয়ে অষ্টভুজ আকৃতির টাওয়ার রয়েছে। যার চূড়ায় রয়েছে ছোট গম্বুজ। বাই🌼রের দিকে দৈর্ঘ্যে ১২ দশমিক ৪৫ মিটার এবং প্রস্থে রয়েছে ৫ দশমিক ৫ মিটার। প্রাচীরগুলো প্রশস্ত প্রায় ১ দশমিক ১০ মিটার, রয়েছে ৩টি খিলান। ভেতরের পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে তিনটি মিহরাব। প্রাচীরের চারপাশে পোড়ামাটির ফলক থাকলেও বহু জায়গায় সেগুলো খুলে পড়েছে। তবে যে ফলকগুলো রয়েছে তাতে লতাপাতা ও ফুলের নকশা লক্ষ্য করা যায়।
ইতিহাস বলছে, নয়াবাদ গ্রামের ১ দশমিক ১৫ বিঘা জমির 🥃ওপর অবস্থিত এই মসজিদটি নির্মাণ হয়েছিল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের রাজত্বকাল ১৭৯💙৩ সালে। সেই হিসাব অনুযায়ী মসজিদটির বয়স প্রায় ২৩০ বছর।
কথিত আছে, দিনাজপুরের তৎকালীন রাজা রামনাথ পার্শ্ববর্তཧী কান্তনগর মন্দির নির্মাণের সময় ইরান থেকে নির্মাণ শ্রমিক আনিয়েছিলেন। আগত শ্রমিকদের মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের নির্মাণ শ্রমিকরা নিজের ধর্ম সাধনার জন্য এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। ২৩০ বছরের পুরাতন এই মসজিদটিতে এখনও চলে নামাজ আদায়।
নয়াবাদ মসজিদের বিষয়ে কথা হলে কাহারোল উপজেলা নির্বাহী কর্ম🌸কর্তা নাইম হাসান খান বলেন, মসজিদটি বর্তমানে প্রত্নততಌ্ত্বের অধীনে।
আওকরা মসজিদ
আওকরা মসজিদ জেলার খানসামার ৬ নম্বর গোয়ালডিহি ও ৩ নম্বর আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী মীর্জার মাঠে অবস্থান এই মসজিদটি। মসজিদটি মূলত চিকন ইটের গাঁথুনি দিয়ে নির্মಞিত। পাশেই রয়েছে খাꦦনসামার বেলান নদী।
জনশ্রুতি আছে, যদি কেউ মসজিদটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়, মসজিদের মধ্যবর্তী স্থানে দাঁড়িয়ে কথা বলতেন, তার উত্তর দিত মসজিদটি। অর্থাৎ মসজিদটিতে প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হতো। আর প্রতিধ্বনিকে লোকে ভাবত মসজিদটি তার উত্তর দিচ্ছে। তাই লোকমুখে উঠে আসে এই মসজিদের নাম ‘আওকরা মসজিদ’। আওকরা প্রকৃত অর্থ হলো ‘কথা বলা’। এখনও অনেকেই এই প্রতিধ্বনি শোনার আশায় মসজিদের পাশ দিয়ে হেটে যান। তবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে মসজিদটির প্রাচী♐র ফেটে যাওয়ায় এখ🌟ন আর প্রতিধ্বনি ভেসে আসে না।
জানা যায়, ১৭৬৫ সালে মীর্জা লাল বেগ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। তবে স্থানীয়রা জানেন না, তার আমলে মসজিদটির নাম কী ছিল? স্থানীয়দের ধারনা মসজিদটির আশেপাশে বসতি ছিল। যাদের নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে মীর্জা লাল বেগ এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। ব্রিটিশ শাসন কিংবা অন্যকোনো কারণে বসতি উঠে গেলে পরিত্যক্ত হতে শুরু করে মসজিদটি। অবশেষে ২০১৮ সালে স্থানীয়রাꦍ মসজিদটি নামাজ আদায়ের উপযোগী করে গড়ে তোলেন। ꧟সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত হলেও মসজিদটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বলে আক্ষেপ রয়েছে স্থানীয়দের। তবে জনবল সংকটের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
মসজিদ কমিটির সদস্য মজনু বলেন, মসজিদটিতে বর্ত🍒মানে টিনের চালা দিয়ে নামাজ আদায় চলে। সংস্কারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে মসজিদটি। সংস্কার করা না হলে শেষ হয়ে যাবে মসজিদটি।
তিনটি মসজিদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় কান্তনগর প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের সহকারী কাস্টেডিয়ান হাফিজুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, “তিনটি মসজিদের মধ্যে নয়াবাদ এবং আওকরা মসজিদটি প্রত্নতত্ত্বের অধীনে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালে এডিপির বরাদ্দের মাধ্যমে নয়াবাদ মসজিদটি সংস্কার করা হয়েছে। আওকরা ম🦹সজিদটিও সং⛄স্কার করা হবে। তবে আমাদের জনবল সংকট থাকার কারণে একটু সময় প্রয়োজন। আর চেহেলগাজী মাজার মসজিদটি বর্তমানে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। তাই আমাদের আওতায় নেওয়ার সুযোগ নেই।”