যমুনায় দৃশ্যমান বঙ্গবন্ধু রেলসেতু

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২, ০৯:২৫ এএম

দেশের অন্যতম বৃহৎ মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু এখন দৃশ্যমান। প্রমত্তা যমুনার বুকে দ্রুত এগিয়ে চলছে এ সেতুর নির্মাণকাজ। রাতদিন চলছে বিশাল🀅 এই কর্মযজ্ঞ। ডুয়েলগে🌺জ ডাবল ট্র্যাকের এই রেল সেতুর ৪৭ ও ৪৮ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হচ্ছে প্রথম স্প্যান। সেতুটি চালু চলে উত্তরাঞ্চলের দ্রুত যোগাযোগসহ খুলবে ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার দ্বার।

সরেজমিন দেখা যায়,ꦦ যমুনা নদীর বুকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু এখন দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। প্রতিটি দৃশ্যমান পিলার দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু ঘিরে যমুনার দুই প্রান্তে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকের এই সেতুতে কয়েক দিনের মধ্যে আরও ৬টি স্প্যান বসানো হবে। দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে সেতুর ৫০টি পিলারের মধ্যে ৩৪টি পিলারের এখন কাজ চলমান।

সমানতালে এগিয়ে চলেছে পুরো সেতুর কাজ। দিনরাত যমুনার বুকে টুংটাং শব্দে চলছে নির্মাণযজ্ঞ। সেতুটি চালু হলে উত্তরাꦇঞ্চলের রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা হবে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ চালু হয়। তবে ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতি। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে শিডিউল বিপর্যয়। বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। এমন সমস্য💛া সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা একটি রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপান এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে রেলসেতু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে জাইকা।

এদিকে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে নদীর দুপ্রান্তে দুটি ভাগে চলছে এই সেতুর নির্মাণ কাজ। ২🍰০২১ সালের মার্চ মাসে পিলারের পাইলিং কাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তবে চলতি বছরের অক্টোবরে সম্পূর্ণ হবে সেতুর প্রথম স্প্যান বসানোর কাজ। নতুন প্রযুক্তির লোহা আর কংক্রিটের সমন্বয়ে তৈরি হচ্ছে মেগা এই প্রকল্প। অত্যাধুনিক স্প্যান বসছে সেতুটিতে। এই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে তাতে আলাদাভাবে রং করার প্রয়োজন হবে না। এই প্রক্রিয়াটি বেশ টেকসই। বলা হচ্ছে, এর ফলে ১০০ বছরেও সেতুর কাঠামোয় মরিচা ধরবে না। এমনকি আবহাওয়া বদলের সঙ্গে সঙ্গে গার্ডারের রংও বদলে যাবে নিজে থেকেই। ২০২৪ সালে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর কাজ শেষ হবে।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন জানান, এই সেতুটির কাজ দ্রুত এগিয়ে চলায় খুশি ব্যবসায়ীরাও। অল্প খরচে ট্রেনে উত্তরাঞ্চল ♓থেকে সারা দেশে সরাসরি কৃষি ও শিল্প পণ্য আনা নেওয়া করা যাবে। ইতোমধ্যে সেতুর পশ্চিমপাড়ে গড়ে উঠেছে সি♍রাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন ও বিসিক শিল্প পার্ক। রেলসেতুটি নির্মাণ শেষে এখান থেকে উৎপাদিত শিল্পপণ্য ট্রেন যোগে পরিবহন করা যাবে দেশ-বিদেশে।

সিরাজগঞ্জ চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ সূর্য বলেন, বঙ্গবন্ধু রেলসেতুটি বাস্তবায়িত হলে রাজধানীর সঙ্গে উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগের এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। এতে যাত্রীসেবার মান বাড়ার পাশাপাশি ভারত থেকে সরাসরি ঢাকায় ট্রেনে পণ্য পরিবহন করা যাবে। এছাড়া যে কোনো দেশে পণ্য পরিবহন সহজ হবে, কমে আসবে আমদানি রপ্তানি খরচ। 
সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মণ্ডল বলেন, জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর পর দেশের রেল যোগাযোগে এক নতুন মাত্রা যোগ দিতে প্রমত্তা যমুনার বুকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। সেতুটি নির্মাণ হলে দেশের রেল যোগাযোগ সমৃদ্ধ হবে। এছাড়া উত্তরবঙ্গের বহু মানুষ নির্বিঘ্নে রেল পথে বাড়ি থেকে রাজধানীতে দৈনন্দিন যাতায়াত করেই গার্মেন্টস শিল্পসহ পে⭕শাগত কাজ করতে পারবেন। যার ফলে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ রেলসেতুটি।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, ৫০টি পিলার আর ৪৯টি স্প্যানে তৈরি হচ্ছে এই রেল🌠সেতু। জাপান এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর এ সেতুর কাজ ইতোমধ্যে প্রায় ৪৫ ভাগ শেষ হয়েছে। সেতুটি চালু হলে ডাবল লাইনে ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে অন্তত ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে।