নওগাঁয় গত বোরো মৌসুমে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন চাষিরা। মৌসুমের শেষ দিকে একটানা বৃষ্টির কারণে মাঠেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ধান। তবে এবার আউশের ফলনে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছেন চাষিরা। এবার আউশের ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে ধানের দামও ভালো থাকায় খুশি কৃষক𒀰রা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ কার্যালয় সূত্র জানায়, ১ সেপ্টেম্বর বাজারে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে আউশ ধান বিক্রি হয়েছে। গত মৌসুমে জেলায় ৫১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছিল, এবার 🍌তা বেড়ে ৫৫ হাজার ৫০০ হেক্টর হয়েছে। চাষিরা জিরা, কাটারি, বিআর-২৬ ও ২১, ব্রি-২৮, ৫৬, ৬৫, ৮২, ৮৫, বিনা-১৯, পারিজা ও হাইব্রিড হীরা জাতের ধান চাষ করেছেন। এ বౠছর ২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন আউশ ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার অনাবৃষ্টির কারণে আউশ ধানের খেতে সেচ দিতে হয়েছে। যার ফলে অন্য বছরের তুলনায় খরচ কিছ🅘ুটা বেশি হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় বাড়তি খরচ পুষিয়ে নিতে পারছেꦯন চাষিরা। সারা বছর সপ্তাহের প্রতিদিন ধান বেচাকেনা হয়ে থাকে জেলার নিয়ামতপুর সদর বাজারে। শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ওই বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি মণ জিরা জাতের আউশ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৫০ টাকায়। এছাড়া ব্রি-২৮, ৫৬, পারিজা ও হীরা ধান প্রতি মণ ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ধানের আড়✱তদার আব্দুল জব্বার জানান, গত বছর আউশ ধান ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই ধান এবার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকায়। এ বছর ঘন ঘন বৃষ্টি না 𒆙হওয়ায় আউশ ধানের দানা পরিপুষ্ট হয়েছে। মিল মালিকদের মধ্যে আউশ ধান কেনার বেশ চাহিদা দেখা যাচ্ছে।
নওগাঁ সদর, মান্দা ও মহাদেবপুরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খেতের ধান🌟 পেকে গেছে। কাটা, আঁটি বাঁধা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত কৃষকরা। ভ্যান, ট্রলিসহ বিভিন্ন বাহনে করে কৃষকরা খেত থেকে ধান তুলে মাড়াইয়ের কাজ করছেন।
চাষি আলমঙ্গীর হোসেন জানান, এবার বোরো মৌসুমে যে সময় মাঠের ধান পাকতে শুরু করেছিল, সে সময় ঘন ঘন বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছিল। ঝড়ে ধানগাছ পড়ে যাওয়ায় ও পানিতে ডুবে খেতেই প্রায় ৩০ শতাংশ ধান নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া ধানগাছ পড়ে যাওয়ায় ধান কাটতেও বেশি খরচ হয়েছে। সেই তুলনায় এবার আউশ ধান লাভজনক হয়েছে। অনাবৃষ্🀅টি ছাড়া বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। সেচের কারণে বাড়তি খরচ হলেও বাজারে ধানের দাম ভালো থাকায় সেই ক্ষতি পুষিয়ে য꧃াচ্ছে।
কৃষক কার্তিক বলেন, “দেড় বিঘা জমিত জিরা ধান লাগাইছি। এর মধ্যে এক বিঘা জমিত ধান লাগানোর জন্য সরকারি বীজ ও সার প্যায়ছিনু। দেড় বিঘা খ্যাতের মধ্যে ১৬ শতক জমির ধান মাড়াই করে ১💟০ মণ ধান হইছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে ৪ মণ ধান বাজারত ব্যাচে (বিক্রি) দিছি। গত বছর বর্ষালি ইরি (আউশ ধান) ধানের দাম আছিল ৭০০-৮০০ টাকা মণ। সেই তুলনায় এবার ধানের দাম ভালো।”
মান্দা উপজেলার সাবাইহাট গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, “প্রতি বিঘা জমিতে আউশ ধান চাষে সাধারণত ৮ থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা খরচ পড়ে। তবে এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ১০ হাজার টাকা করে খরচ পড়েছে। এবার প্রতি বিঘায় ধানের ফলন হচ্ছে ১৭–১৮ মণ করে। সে হিসাবে প্রতি মণ ধান উৎপাদনে খরচ পড়েছে প্ﷺরায় ৬০০ টাকা। বর্তমানে প্রতি মণ ধানের বাজারদর ১ হাজার ২০০ টাকা।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আবু হোসেন বলেন, “এবার কৃষি বিভাগ থেকে ১৬ হাজার ৫০০ কৃষককে ৫ কেজি করে বীজ ধান, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি করে এমওপি সার দেওয়া𒊎 হয়েছে। এছাড়া চাষিরা কৃষি বিভাগের পরামর্শে সঠিক সময়ে আꦑউশ ধান রোপণ ও বপনের কাজ করায় ভালো ফলন হয়েছে। ৬-৭ শতাংশ জমির ধান কাটা ও মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে বাকি জমির ধান ভালোভাবে কৃষকের ঘরে উঠে আসবে।”