অধ্যক্ষকে জুতার মালা: ১৭০ জনের নামে মামলা, আটক ৩

নড়াইল প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২২, ০৯:১৬ পিএম

নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে ১৮ জুন (শনিবার) সহিংসতা এবং অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরানোর ঘটনায় পꦬুরো দেশে তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট হয়েছে। এলাকায় চলছে নানা ধরনের গুঞ্জন। ঘটনার দিন থেকে বাড়ি না ফিরে নিজেকে আড়াল করেছেন অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। আতঙ্কে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না পরিবারের লোকজন। অধ্যক্ষকে হেনস্তা করার ঘটনাকে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিয়েছেন কেউ কেউ। ১১দিন পরে মঙ্গলবার (২৮ জুন) সদর থানা পুলিশ বাদী হয়ে সহিংসতা ঘটানোর দায়ে ১৭০ জনের নামে মামলা করেছে। তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ।

ঘটনার পর থেকে কলেজ বন্ধ। নি♎রাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে নড়াইল সদর থানার একদল পুলিশ। প্রশাসনের ঘোষণায় আগামী ১৮ জুলাই পর্যন্ত কল🥂েজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

কলেজের ইসলামী শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক মো๊.আব্বাস আলী আকুঞ্জি বলেন, “একজন অধ্যক্ষকে বিনা অপরাধে এভাবে জুতার মালা পরিয়ে অপমান করা শিক্ষক সমাজের জন্য কষ্টের। নিন্দা জানানোর ভাষা নেই, এটা একটা ষড়যন্ত্র।”

হিসাব রক্ষক মো. আলাউদ্দিন মোল্যা বলেন, “অধ্যক্ষকে জুতার মালা✅ পরানো একটি ষড়যন্ত🍸্র। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত স্যারের কোনো নাম ছিল না। এরপরই স্যারকে অপমানের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। স্যার তো রাহুল দেবকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে চেয়েছেন, তার কোনো অপরাধ নাই।”

মির্জাপুর বাজার অনেকটা মানুষ শূন্য। লোকজনের মধ্যে এ নিয়ে চলছে আলোচনা। এলাকার লোকেরা কেউ এখন আর এ ঘটনার দায় নিচ্ছ🅰েন না, শিক্ষককে জুতার মালা পরানোর নিন্দা করছেন।

ঘটনার পরদিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অব্যহতি দিয়ে কলেজের সা😼বেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আক্তার হোসেন ক🙈িংকুকে দায়িত্ব দেওয়ার মৌখিক ঘোষণা আসে। এরপর থেকেই ঘটনার দায় চাপে কিংকুর কাঁধে।

আক্তার হোসেন কিংকু বলেন, “আগে আমি সাড়ে ৬ বছর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছি। ওই পদে যাবার আমার কোনো ইচ্ছা নাই। কিছু কুচক্রি মহ🎐ল আমার ঘাড়ে দায় চাপানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। স্বপন বাবু একজন নিরীহ প্রকৃতির লোক, তাকে এভাবে অপমান করা পুরো শিক্ষক জাতির অপমান।”

অধ্যক্ষ স্বপনের বাড়ির নিরাপত্তায় পুলিশ পাহারা রয়েছে। ঘটনার দিন থেকে অধ্যক্ষ স্বপন আর বাড়ি ফেরেনি। পরিবারের সকল সদস্য রয়েছেন আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তায়। একেবারে এলোমেলা অবস্থা পুরো পরিবারের। ভয়ওে দুই মেয়ে পড়ালেখা করত💃ে বাইরে যেতে পারছে না।

অধ্যক্ষের স্ত্রী সোনালী দাস প্রায় বাকরুদ্ধ। তিনি কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলেন, “আমার স্বামীর কী দোষ ছিল যে তাকে এভাবে অপমান করা হলো। বাড়িতে নাই, কোথায় আছে কী করছে কিছুই জানি না। আমরা নিরাপদে ন🤪াই।”

মেয়ে জুঁই বিশ্๊বাস এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। ভয়ে যেতে পারছে না স্কুল ও প্রাইভেটে। ‘আমার পরীক্ষার কী হবে’ বলেই সে কেঁদে ফেলে জুঁই।

অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ছোট মেয়ে ওই🌄দিনের পর থেকে ঘর থেকেই বের হচ্ছে না। আতঙ্কে দিন কাটছে বৃদ্ধ বাবা সুমন🌄্ত বিশ্বাসের।

তিনি বলেন, “আমাদের ভরসা না দিলে কীভাবে সাহস পাব? পুলিশ পাহারায় আছে তারপরও যা ঘটিয়েছে। ♔তারা আবারও কিছু ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কী?”

জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতেই ঘটেছে জনসাধারণের মধ্য জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করার ঘটনা। ১১দিন পরে আজ (মঙ্গলবার) সদর থানার এসআই মোহাম্মদ মোরছালিন বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এ ঘটনায় আড়পাড়া গ্রামের শাওন, মির্জাপুর গ্রামের অটোচালক রিমন ও মাদ্রাসাশিক্ষক মনিরুল ইসলামকে আজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে💫 পুলিশ। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, “ঘটনার পর থেকেই পুলিশ কলেজ এবং অধ্যক্ষের বাড়ি পাহারায় রেখেছে। অধ্যক্ষকে যখন জুতার মালা পরানো হয় সে সময় আমি এবং🐬 জেলা প্রশাসক দুজনেই ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম। পুলিশ কঠোর হলে গুলি চলত ও হতাহত হতো। সেটা অনেক ভয়াবহ হতো। আমরা চেয়েছি তাদের নিরাপদে রক্ষা করার।”

মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেসবুক আইডিতে নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে লেখেন- ‘প্রণাম নিও বস নূপুর শর্মা জয় শ্রীরাম।’ এ পোস্ট দেওয়ার পর ১৮ জুন সকালে কলেজে আসেন রাহুল। এরপর তার বন্ধুরা পোস্ট🐠টি মুছে ফেলতে বললেও পোস্ট মোছেনি 💧রাহুল।

শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান। এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজের সব শিক্ষকদের পরামর্শে রাহুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে। ঘটনার সময় ২ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।