ক্ষেতে পচছে সয়াবিন, লোকসানের মুখে চাষিরা

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২২, ০৭:০৫ পিএম

মেঘনার উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর। অনুকূ🌳ল আবহাওয়া ও উর্বর মাটির কারণে এ অঞ্চলে সয়াবিনের বাম্পার ফ👍লন হয়। দেশে উৎপাদিত মোট সয়াবিনের ৮০ ভাগ সয়াবিন লক্ষ্মীপুরে উৎপাদিত হয়ে থাকে। ব্যাপকভাবে এই ফসলের আবাদ ও বাম্পার ফলন হওয়ায় লক্ষ্মীপুর ‘সয়াবিনের রাজধানী’ খ্যাতি পেয়েছে। যে কারণে ব্রান্ডিং হিসাবে লক্ষ্মীপুরকে ‘সয়াল্যান্ড’ নামকরণও করা হয়। 

লক্ষ্মীপুরের মাটি সয়াবিন চাষের জন্য বেশ উপয⛎োগী হলেও বিগত কয়েক বছর থেকে আবহাওয়া যেন অনুপোযোগী হয়ে উঠেছে। অসময়ের বৃষ্টি কিংবা অতিবৃষ্টির🌠 কারণে ব্যাহত হচ্ছে সয়াবিন চাষ।

চাষিরা সয়াবিন ঘরে তোলায় আগে ক্ষেতেই সব নষ্ট হয়ে যা💝চ্ছে। এ ছাড়া সয়াবিনের বীজ বপনের সময়েও এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সয়াবিন ক্ষেতে পানি জমে থাকায় আধাপাকা সয়াবিন পচে গেছে। ফলে লোকসানের কবলে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের।  

স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, সয়াবিনের বীজ বপনের কয়েক দিনের মাথায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে কিছু বীজ থেকে চারা গজায়নি। পরবর্তীতে পুনরায় বীজ বপন করতে হয়েছে। এখন ফসল ঘরে তোলার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে আবারো বৃষ্টির পানিতে ক্ষেতে থাকা আধাপাকা সয়াবিন নষ্ট হয়ে গেছে। গত কয়েক বছর থেকে আবহাওয়ার এমন বিরূপ প্রভাবের কারণে লোকসানের কবলে পড়ছেন চাষিরা। অসময়ের এই বৃষ্টিতে সয়াবিনের পচনে, লোকসানের মুখে তাদের এখন মাথায় হাত।  

সরেজমিনে গত কয়েকদিনে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন, ভবানীগঞ্জ এবং কমলনগর উপজেলার চর লরেন্স, চর মার্টিন ও তোরাবগঞ্জ এলাকায় ঘুরে মাঠে থাকা সয়াবিন নষ্ট হওয়ার👍 দৃশ্য চোখে পড়েছে।

এদিকে গত দুইদিন মেঘনা নদীর অতিরিক্ত জোয়ারꦛের পানিতে তলিয়ে গেছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার উপকূল সংলগ্ন নিচু জমি। নদীর তীরবর্তী বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি খুব সহজেই লোকালয় এবং ফসলি ক্ষেতে ঢুকে পড়ে। এতেও সয়াবিন, বোরো ধান এবং রবি শস্যের ক্ষেতে পানি জমেছে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন এলাকার সয়াবিন চাষি হুমায়ুন কবির বলেন, “এক একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেছি। সয়াবিন পুরোপুরি পুষ্ট এবং না পাকতেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে যায়। ক্ষেতের পানি নামার পথ না থাকায় জমে থাকা পানিতে সয়াবিন গাছ মরে গেছে। এতে গাছের সয়াবিনগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। যে পরিমাণ ফলনের আশা🦋য় ছিলাম, তার থেকে এখন অনেক কম হবে।”  

সয়াবিন চাষি রাসেল মিয়া বলেন, “৫০ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীন সয়াবিন চাষ করেছি। চাষ করতে ৯-১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু ক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমে গাছ এবং সয়াবিন সব পচে গেছে। এ সয়🧸াবিন ক্ষেত থেকে উঠিয়ে কোনো লাভ হবে না। তাই ক্ষেতেই ফেলে রেখেছি।”  

সয়াবিন চাষি ফয়েজ আহম্মদ বলেন, “সয়াবিন ঘরে তোলার অন্তত দুই সপ্তাহ আগে ক্ষেতে পানি জমে ৩২ শতাংশ জমির সব সয়াবিন পচে গেছে। আমাদের মতো অন𓂃েক চাষি এবার ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বৃষ্⛦টিতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।”  

ভবানী⭕গঞ্জ এলাকার সয়াবিন চাষি রহমত উল্যাহ বলেন, “৪০ শতাংশ জমির সয়াবꦬিন এখন পানিতে। তবে সয়াবিনগুলো পুষ্ট হয়েছে। পাকার অপেক্ষায় আছি। বৃষ্টির পানি দ্রুত না শুকালে গাছ মরে সয়াবিন নষ্ট হয়ে যাবে। কাঁচা সয়াবিনে পানি লাগলে সেগুলোর রং বিবর্ণ হয়ে যায়। বাজারে দাম পাওয়া যায় না।”

একই এলাকার সয়াবিন চাষি জাহা♒ঙ্গীর হোসেন, কামরুল ইসলাম, কবির হোসেন ও ফিরোজ আলম জানান, বৃষ্টির পানি জমে তাদের ক্ষেতের সয়াবিন নষ্ট করে দিয়েছে। &ꩲnbsp;

তোরাবগঞ্জ এলাকায় সয়াবিন চাষি আবদুর কাইয়ুম বলেন, “ꦇক্ষেতে এখনো পানি আছে। সয়াবিন এখনো পাকেনি। বৃষ্টির পানি যদি আরও বাড়ে, তাহলে সেগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

সয়াবিন চাষি পারভেজ, জামাল উদ্দিন, মিজানুর রহমানসহ অনেকে জানান, সয়াবিন আবাদে খরচ কম। রোগ ও পোকার 🌌আক্রমণও কম হয়। চাষাবাদ পদ্ধতি সহজ। বিক্রি করলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায় ধানের চেয়ে বেশি। যে কারণে স্থানীয় কৃষকরা সয়াবিন চাষে আগ্রহী। কিন্তু বিগত কয়েক বছর থেকে আবহাওয়া যেন অনুপোযোগী হয়ে উঠেছে এই অঞ্চলে। অসময়ের বৃষ্টির কারণে ব্যাহত হচ্ছে সয়াবিন চাষ। লোকসানের মুখে পড়তে হচ💛্ছে কৃষকদের। এ ছাড়া উৎপাদিত সয়াবিন বিক্রিতে তারা মহাজনদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্য পাননা। তাই সরকারিভাবে সয়াবিন ক্রয়ের দাবি জানান তারা।

লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭৬ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন। যার ℱবাজার মূল্য ছিল ৩০০ কোটি টাকার বেশি। তবে অসময়ের এই বৃষ্টির কারণে ব𝐆র্তমানে উৎপাদন ও বাজার মূল্য দুই-ই অর্ধেকে নামার শঙ্কা সংশিস্লষ্টদের।

লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, “এবার সয়াবিনের ফলন ভালো হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষেতে থাকা সয়াবিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি দ্রুত সয়াবিন ক🐻েটে ফেলার জন্য। সয়াবিন গাছের🍌 পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে সেগুলো কাটার উপযোগী হয়।”

কৃষকদের ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, তারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে। সরকারিভাবে প্রণোদনা এলে তাদের সেই প্রণোদনার আওতায় আনা🍌 হবে।”