অযত্নে অবহেলায় মানিকগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনার

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২, ১০:৪১ এএম

দেখে বোঝার উপয় নেই এটা জেলার প্রথম নির্মিত শহীদ মিনার। মানিকগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ শহীদ মিনারটি ভাষা আন্দোলনের সাত দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো অবহেলা ও অযত্নে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে গে𝓡ছে। মিনারটি সংস্কার বা সংরক্ষণের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই । 

মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে দেশব্যাপী যে আন্দোলন-সংগ্র🐈াম গড়ে ওঠে, তার প্রভাব রাজধানী ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকার অদূরে তৎকালীন মহকুমা শহর মানিকগঞ্জে মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে গঠিত হয় মাতৃভাষা আন্দোলন সংগ্রাম পরিষদ। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে আ𝐆ন্দোলন চলতে থাকে। মূলত মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার তেরশ্রীতে এই আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।

১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারির পর ভাষাশহীদদের স্মরণে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষাপ♌্রতিষ্ঠানে ঢাকার অনুরূপ শহীদ মিনার তৈরি করা হয়। কিন্তু তৎকালীন সরকারি কর্তৃপক্ষ ’৫২ꦬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশের সহায়তায় সব কটি শহীদ মিনার ভেঙে ফেলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণে কর্তৃপক্ষ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এরপর ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতারা যুক্তফ্রন্ট সরকারের সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের বাসার সামনে এ শহীদ মিনার তৈরি করেন। সে সময় শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য এগিয়ে আসেন আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের সহধর্মিণী উম্মে সাহেরা খাতুন।

মানিক💜গঞ্জ শহরে শহীদ মিনার নির্মাণের খবর পাওয়া মাত্র তখনকার এসডিও এ কে দত্ত চৌধুরী পুলিশ নিয়ে হাজির হন শহীদ মিনার ভাঙার জন্য। শহীদ মিনারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন উম্মে সাহেরা খাতুন। তিনি বললেন, “আমার জায়গায় আমি শহীদ মিন🅰ার বানিয়েছি। কার সাহস তা ভাঙে?” তার এমন প্রতিবাদ ও যুক্তিসংগত কথায় কারণে এসডিও এবং পুলিশ বাহিনী সেদিন শহীদ মিনার ভাঙার সাহস পায়নি। 

২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ সালে ছাত্রজনতার ঢল নেমেছিল এই শহীদ মিনারের বেদিতে। ফুলে ফুলে রাঙিয়ে দেয় শহীদ মিনারের বেদি। কিন্তু ১৯৭১ সালে ২༒৫ মার্চের পর এ শহীদ মিনারটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয় পাকিস্তানি বাহিনী। ১৯৭২ সালে দেশ༒ স্বাধীন হওয়ার পর ঠিক একই স্থানে একইভাবে পুনরায় গড়ে তোলা হয় শহীদ মিনারটি।

২০০৭ সালে মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রশাসনের উদ্যোগে মানিকগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মিত 𒁏হলে প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে যায় আগের শহীদ মিনারটি। প্রগতিশীল সংগঠন ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের দাবির মুখে মানিকগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ মূল শহীদ মিনারটির আদল বদলে করে সিরামিক টাইলস লাগিয়ে এটাকে নতুন ক🧸রে গড়ে তোলে। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেও প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, কিংবা অন্যান্য সংগঠন আর এই শহীদ মিনারে আসে না।

ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী মানিকগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনারটি এখন তিন দেয়ালে বন্দি। একসময় যে শহীদ মিনার ঘিরে মানিকগঞ্জের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সক্রিয় ছিল, সেখানে এখন আর কেউ ফুল দেয় না। অনেকটা অবহেলা পরে আছে মানিকগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনারটি। বর্তমানে এস কে সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অপেক্ষাকালীন বসার স্থান হয়ে গেছে এই মিনারটি। তাদের বসার কারণে ভেঙে গেছে মিনারের রেলিং।
 
মানিকগঞ্জ সচেতন মহলের দাবি, জেলার এই ন𓂃ির্মিত প্রথম শꦬহীদ মিনারটি সংস্করণ ও সংরক্ষণ করে নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরতে হবে।